জার্সির রং যেহেতু লাল-সবুজ, তাই নাম দেওয়া হয়েছে ‘দ্য গ্রিন রেড স্টোরি’। লাল-সবুজের সেই গল্পেই এসেছিলেন বাংলাদেশ দলের ওপেনার তানজিদ হাসান। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আজ নিজেদের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তানজিদের সেই গল্পই উপস্থাপন করেছে।
বাংলাদেশ দলের সঙ্গে এখন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন তানজিদ। বাঁহাতি এ ওপেনার গতকাল রাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে একাদশে জায়গা পাননি। ১২ মে শেষ হওয়া জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে দুটি ফিফটি ছিল তানজিদের। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম ম্যাচে ওপেন করেছেন লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। সে যা–ই হোক, তানজিদের ডাকনাম তো প্রায় সবারই জানা—‘তামিম।’ বাংলাদেশ জাতীয় দলের বাইরে থাকা ওপেনার তামিম ইকবালের সঙ্গে নামটা প্রায়ই গুলিয়ে ফেলেন অনেকেই।
বিসিবির ভিডিওতে তানজিদ জানিয়েছেন তাঁর এই নাম রাখার নেপথ্যে ছিলেন কারা, ‘দাদি আর দাদা মিলে আমার এই নামটা দিয়েছেন। আসলে তখন তাঁরা এই জিনিসটা ভেবে (নাম রাখেননি) দেননি।’
তানজিদ বগুড়ার ছেলে। সরকারি চাকরিজীবী বাবা চেয়েছিলেন ছেলে পড়াশোনা করে পেশা হিসেবে চাকরিকেই বেছে নেবেন। কিন্তু ছেলে স্বপ্ন দেখেছেন ক্রিকেট নিয়ে। সে জন্য বাবা তাঁকে বাড়ি থেকে বেশ কয়েকবার বেরও করে দিয়েছেন। সেসব দিনের কথা স্মরণ করে তানজিদ বলেছেন, ‘সব মা–বাবাই চান তাঁর ছেলে পড়াশোনা করে অনেক ভালো কিছু হবে, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবে। আমার মা–বাবাও সেই স্বপ্নই দেখেছিল। গ্রাম থেকে শহরে নিয়ে এসেছিলেন পড়াশোনা করার জন্য। জিলা স্কুলে পড়াশোনা করি। খেলার ওপর অনেক ঝোঁক ছিল। যখনই ছুটি পেতাম কিংবা পড়াশোনার ফাঁকে যেটুকু সময় পেতাম, খেলাধুলা করেছি।’
তানজিদ সেসব দিনের স্মৃতি নিয়ে আরও যোগ করেন, ‘স্কুল শেষে বাসায় টিচার (গৃহশিক্ষক) আসতেন। রাতেও টিচার আসতেন। সময় পাওয়া খুব কঠিন ছিল। আম্মু আমাকে বলতেন, স্কুল থেকে আসার পর যদি আমি টিচারদের পড়াটা শেষ করতে পারি, তাহলে আমাকে খেলতে দেবেন। আম্মু আমাকে আরেকটি কথা বলতেন, যদি আমি লেখাপড়ায় ভালো করতে পারি, তাহলে আমাকে একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেবেন, ব্যাট-বল কিনে দেবেন। আমিও পড়াশোনায় মোটামুটি ভালোই ছিলাম। রেজাল্ট ভালো করতাম। এসব শর্ত পূরণ করলে আম্মু আমাকে খেলতে দিতেন।’
বাংলাদেশের হয়ে ১৫টি ওয়ানডে ও ৫টি টি-টোয়েন্টি খেলা এই ওপেনার মনে করেন, ছোটবেলায় খেলার সেই ঝোঁকই তাঁকে এত দূর পর্যন্ত টেনে এনেছে, ‘আব্বু অফিস থেকে ফিরে হয়তো দেখতেন, আমি বাসায় নেই। টিচার এসে বসে আছেন। আমি মাঠে খেলতে গিয়েছি। বাবা এ জন্য অনেক রাগ করতেন। বাবা যে কঠোর হতেন, এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। এখন আমার মা–বাবা অনেক সমর্থন দেন। ভালো ও খারাপ দুই সময়েই সমর্থন দেন।’
২৩ বছর বয়সী তানজিদের আন্তর্জাতিক অভিষেক গত বছর আগস্টে। প্রায় এই এক বছরে তাঁর জীবনটা বেশ পাল্টে যাওয়ার কথা। কিন্তু তানজিদ জানালেন, তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি তাঁর জীবনে, ‘আমার বন্ধুবান্ধব, যারা ছোটবেলায় আমার সঙ্গে ক্রিকেট খেলত, তারাও এখন আমার জন্য গর্ব অনুভব করে। গ্রামে কিংবা শহরে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া হয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের পর সবাই এ ব্যাপার নিয়ে গর্ব অনুভব করে।’
তানজিদের কাছে বিশ্বকাপ জেতাই সবচেয়ে গর্বের। বিশ্বকাপে খেলতে পারাটাও ভাগ্য বলে মনে করেন তিনি। গত বছর ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলেছেন তিনি। এ নিয়ে বলেছেন, ‘আমি অনেক সৌভাগ্যবান যে বিশ্বকাপে খেলতে পেরেছি। একটি ব্যাপার বিশ্বাস করি যে, হয়তো নিজে তেমন ভালো করতে পারিনি। কিন্তু যে বিষয়গুলো আমি দুই বছর পর শিখতাম, সেগুলো আমি হয়তো বিশ্বকাপে খেলার মাধ্যমে শিখেছি। বড় বড় খেলোয়াড়ের পরিণত মানসিকতা দেখেছি, যেটা আমাকে পরবর্তী সময়ে অনেক সাহায্য করবে।’
২ জুন (বাংলাদেশ সময়) যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাংলাদেশ স্কোয়াডে রয়েছেন তানজিদ। এ নিয়ে বলেছেন, ‘আগেও বলেছি, বিশ্বকাপে খেলাটা ভাগ্যের ব্যাপার। সেদিক থেকে আমি অবশ্যই সৌভাগ্যবান। চেষ্টা করব নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে দলকে কিছু দেওয়ার।’ তানজিদ জানিয়েছেন, তিনি বোলার দেখে ব্যাট করেন না, ‘আমার সব সময় মানসিকতা থাকে ইতিবাচক। কখনো বোলার দেখে খেলি না। বলের মেধা যাচাই করে খেলার চেষ্টা করি। কখনো লক্ষ্য ঠিক করি না। ম্যাচ ধরে ধরে এগোনোর চেষ্টা করি। সব সময় বর্তমানে থাকার চেষ্টা করি।’