এশিয়া কাপ

কাদিরের আপেল, রফিকের ১০.২ ওভার এবং আরও যত বিচিত্র ঘটনা

এশিয়া কাপের ১৬তম সংস্করণ শুরু হয়েছে কাল থেকে। ৩৯ বছর ধরে চলে আসা এ টুর্নামেন্টে কত বিচিত্র ঘটনাই তো ঘটেছে! আসুন তেমন কিছু বিচিত্র বিষয় জেনে নেওয়া যাক—

এশিয়া কাপের ব্যাটসম্যান

ভারতের সাবেক উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান সুরিন্দর খান্না ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রানই করেছেন এশিয়া কাপে। ১৯৮৪ সালে প্রথম এশিয়া কাপে ২ ম্যাচে ২ ফিফটিসহ ১০৭ রান করে টুর্নামেন্ট-সেরা হয়েছিলেন সুরিন্দর খান্না। ভারতীয় ওপেনার এর আগে-পরে খেলা অন্য ৮ ওয়ানডেতে করেছেন মাত্র ৬৯ রান।

অতিথি ও সমান্তরাল টুর্নামেন্ট

১৯৮৬ এশিয়া কাপের শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান ফাইনালটা ছিল একই সঙ্গে দুটি টুর্নামেন্টের ম্যাচ। ভারত এশিয়া কাপে না আসায় নিউজিল্যান্ডকে আমন্ত্রণ করে আরেকটি ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট আয়োজন করে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। এশিয়া কাপ ফাইনালের এক দিন আগেই শ্রীলঙ্কা-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে শুরু হয় সেই টুর্নামেন্ট। ওই টুর্নামেন্টে তিন দল শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের পয়েন্ট সমান হলে ওভারপ্রতি বেশি রান তোলায় চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান।

ছুটি

১৯৮৬ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর শ্রীলঙ্কায় এক দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জুনিয়াস রিচার্ড জয়াবর্ধনে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার সেটিই ছিল প্রথম শিরোপা। কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের দর্শকেরা রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেছিলেন ছুটি ঘোষণা করতে।

স্বীকৃতি পেতে বিলম্ব

১৯৮৮ সালে এশিয়া কাপেই প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পায় বাংলাদেশের দর্শক। তবে ওই টুর্নামেন্টে খেলা বাংলাদেশের তিনটি ম্যাচ তখনই ওয়ানডে ম্যাচ হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। সেই স্বীকৃতি দেওয়া হয় ১৯৮৯ সালে আইসিসির বার্ষিক সভায়।

১৯৮৮ এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশে। বিমানবন্দরে নামার পর ভারতীয় ক্রিকেট দল

কাদিরের আপেল

 ১৯৮৮ এশিয়া কাপের পরে চ্যাম্পিয়ন ভারত ও আমন্ত্রিত একাদশের মধ্যে একটি প্রদর্শনী ম্যাচ হয় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। ওই ম্যাচে পাকিস্তানি লেগ স্পিনার আবদুল কাদিরের করা একটি বলকে মেরে টুকরা টুকরা করে ফেলেছিলেন ভারতের মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন। কাদির ‘বল’টা করেছিলেন আপেল দিয়ে!

নিয়ম মেনে চলা ফাইনাল

এশিয়া কাপের ফাইনাল খুব নিয়ম মেনে চলে! ১৯৮৪ সালে ফাইনাল ছিল না। ফাইনালের প্রচলনের পর প্রথম পাঁচ ফাইনালে জেতে পরে ব্যাট করা দল, এরপরের পাঁচ ফাইনালে আগে ব্যাট করা দল। ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত টানা তিনবার জিতেছে রান তাড়া করা দল। গতবার জিতেছে প্রথমে ব্যাট করা শ্রীলঙ্কা। এবারও কি তাহলে ফাইনালে প্রথম ব্যাট করে দলের শিরোপা জয়ের পালা!

রফিকের ১০.২ ওভার

 ২০০৪ এশিয়া কাপে হংকংয়ের বিপক্ষে নির্ধারিত ১০ ওভারের কোটার বাইরেও অতিরিক্ত দুটি বল করেছিলেন বাংলাদেশের মোহাম্মদ রফিক। বাঁহাতি স্পিনারের দ্বিতীয় ‘অবৈধ’ বলে স্টাম্পড আউট হন হংকংয়ের শেষ ব্যাটসম্যান খালিদ খান। আম্পায়ারসহ মাঠের দুই দলেরই কারোরই চোখে পড়েনি এই ভুল। ১০.২-৩-২১-২, এই ছিল সেই ম্যাচের রফিকের বোলিং বিশ্লেষণ। আম্পায়াররা দাবি করেন, অফিশিয়াল স্কোরারই নাকি ভুল করেছেন।

মোহাম্মদ রফিক

মিল-অমিল

এশিয়া কাপের ওয়ানডে সংস্করণে টপ অর্ডারে একাধিক ইনিংস খেলেও কোনো রান করতে পারেননি দুজন—বাংলাদেশের হারুনুর রশিদ ও শ্রীলঙ্কার কুশল মেন্ডিস। হারুনুর ১৯৮৮ এশিয়া কাপে ও মেন্ডিস ২০১৮ সালে ২ বার ব্যাট করতে নেমে দুবারই শূন্য রানে ফিরেছেন। তবে দুজনের অমিল হলো, বাংলাদেশের ওপেনার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে খেলেছেন ওই দুটি ম্যাচই। শ্রীলঙ্কার মেন্ডিস যেখানে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২২১ ম্যাচে রান করেছেন ৮ হাজারের বেশি।

তিন অধিনায়কের দল

 ১৯৮৮ এশিয়া কাপে ফাইনালসহ ৪ ম্যাচ খেলে শ্রীলঙ্কা। এই চার ম্যাচে লঙ্কানরা খেলে তিন অধিনায়কের নেতৃত্বে। চোটের কারণে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি খেলেই ছিটকে পড়েন মূল অধিনায়ক রঞ্জন মাদুগালে। পরের দুই ম্যাচে ভারত ও বাংলাদেশের বিপক্ষে লঙ্কানদের হয়ে টস করেন যথাক্রমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা ও রবি রত্নায়েকে। ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে অধিনায়ক ছিলেন রানাতুঙ্গা।

টেন্ডুলকারের উইকেটের দাম

 ২০০৪ এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে অদ্ভুত এক পুরস্কার ঘোষণা করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের টিম ম্যানেজমেন্ট। অদ্ভুত, কারণ ঘোষণাটি ছিল একজন খেলোয়াড়কে কেন্দ্র করে। সেই খেলোয়াড়ের নাম শচীন টেন্ডুলকার। আমিরাতের যে বোলার টেন্ডুলকারকে আউট করবেন, তাঁকে এক হাজার ডলার অর্থ পুরস্কার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ১৮ রান করা টেন্ডুলকারকে আউট করে ১ হাজার ডলার কামিয়ে নেন আমিরাতের বাঁহাতি পেসার আসিম সাঈদ।

কাকতাল

দুই ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক পেসার জাহিদ শাহর। জাহিদ দুটি ম্যাচই খেলেছেন ২০০৮ এশিয়া কাপে, লাহোরে। ওয়ানডে অভিষেকে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচেও ১০ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট।

২০০৮ এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে জাহিদ শাহ

যোগ-বিয়োগ

 ১৯৯৫ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪৮ রানের সংগ্রহ নিয়ে ইনিংস শেষ করে বাংলাদেশ। কিন্তু পাকিস্তান ব্যাটিং করতে নামে ১৫২ রানের লক্ষ্য ছুঁতে! ঘটনা হলো, বাংলাদেশের ইনিংসে আকরাম খানের একটি শট বাউন্ডারি থেকে ফেরান এক পাকিস্তানি ফিল্ডার। মাঠের আম্পায়ার আকরামকে শুধু দৌড়ে নেওয়া ১ রানই দিয়েছিলেন, কিন্তু থার্ড আম্পায়ার টেলিভিশনে দেখে বাউন্ডারি দেন সেটিকে। আর তাতেই আকরামের রান ৪১ থেকে ৪৪ আর বাংলাদেশের রান ১৪৮ থেকে ১৫১ হয়ে যায়।

পাকিস্তানের ইনিংসে আরেক নাটক। ওয়াসিম আকরাম ছক্কা মেরে দলের রান ১৪৫ থেকে ১৫১ করেন। এরপর আরেকটি চার মেরে জিতিয়ে দেন দলকে। পরে অফিশিয়াল স্কোরার জানিয়ে দেন, পাকিস্তান জিতে গেছে আগের বলেই, কারণ মাঠের স্কোরকার্ড ১৫১ দেখালেও অফিশিয়াল স্কোরকার্ডে ছক্কার পর পাকিস্তানের রান হয়েছে ১৫২। এক আকরাম যে ম্যাচে ফিরে পান হারিয়ে ফেলা ৩ রান, আরেক আকরামের হিসাবে সেদিন যোগ হয়নি ৪ রান।