ইংল্যান্ডকে বিধ্বস্ত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা
ইংল্যান্ডকে বিধ্বস্ত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা

দক্ষিণ আফ্রিকার রান পাহাড়ে চাপা পড়ল ইংল্যান্ড

দলটা ইংল্যান্ড বলেই হয়তো কেউ কেউ আশায় ছিলেন। ওয়ানডে ক্রিকেটকে নতুন চেহারা দেওয়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা হয়তো ৪০০ রান তুলে ফেলতেও পারে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৯৯ রান তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ড ম্যাচ থেকে অনেক আগেই ছিটকে গেল। সেটা প্রথম পানি পানের বিরতির আগেই। ১২ ওভারের মধ্যে ৬৮ রান তুলতেই যে ৬ উইকেট হাওয়া!

শেষ দিকে গাস অ্যাটকিনসন আর মার্ক উডের এলোপাতাড়ি ব্যাটিংয়ে আরও কিছু রান যোগ হয়েছে বটে, কিন্তু হারের ব্যবধানটা শেষতক বড়সড়ই। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ২২৯ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে ইংল্যান্ড। রানের দিক থেকে ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় হার এটি।

এ নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম চার ম্যাচের তিনটিতেই হেরেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। সমান ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় তিনটি।

রান তাড়ায় ইংল্যান্ড প্রথম উইকেট হারায় তৃতীয় ওভারে, জনি বেয়ারস্টো লুঙ্গি এনগিডিকে ফ্লিক করলে ওপরে উঠে যাওয়া বল বাউন্ডারি সীমানায় ধরেন রেসি ফন ডার ডুসেন। ১৮ রানে প্রথম উইকেট হারানো ইংল্যান্ড পরের ২০ রানের মধ্যে হারিয়ে ফেলে জো রুট, ডেভিড ম্যালান আর বেন স্টোকসকেও। রুটকে ডেভিড মিলার আর ম্যালানকে কুইন্টন ডি ককের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান মার্কো ইয়ানসেন। আর এবারের আসরে প্রথম খেলতে নামা স্টোকস কাগিসো রাবাদার বলে তাঁরই হাতে ক্যাচ দেন।

ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আসা যাওয়ার মিছিলে

নবম ওভারের প্রথম বলে চতুর্থ উইকেট হারালেও রান তোলার দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন জস বাটলার ও হ্যারি ব্রুক। তবে ১২তম ওভারের প্রথম বলে বাটলার আর তৃতীয় বলে ব্রুককে তুলে নেন জেরাল্ড কোয়েৎজে। খানিক পর ডানহাতি এ পেসার আদিল রশিদকেও তুলে নিলে ইংল্যান্ডের স্কোর হয়ে যায় ৭ উইকেটে ৮৪ রান। নবম উইকেটে অ্যাটকিনস ও উড ৩৩ বলে ৭০ রান যোগ করলে হারের ব্যবধান কমে ইংলিশদের। চোট পাওয়া রিচ টপলি ব্যাটিং না করায় ১৭০ রানে থামে ইংল্যান্ডের ইনিংস।

এর আগে ম্যাচের প্রথমার্ধেই জয়ের প্রাথমিক কাজটা সেরে রাখে দক্ষিণ আফ্রিকা। রিজা হেনড্রিকস (৮৫), রেসি ফন ডার ডুসেনের (৬০) অর্ধশতকের পর হাইনরিখ ক্লাসেন (১০৯) ও মার্কো ইয়ানসেনের (৭৫) বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ৩৯৯ রানের পাহাড় গড়ে প্রোটিয়ারা।

৭৫ বল খেলে ৮৫ রান করেন হেনড্রিকস

অথচ প্রোটিয়াদের ইনিংসের শুরুটা প্রত্যাশামতো ছিল না। তিন ম্যাচে দুটি শতক করে বিশ্বকাপটা দারুণভাবেই শুরু করেছেন ডি কক। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম বলেই বাউন্ডারি মারার পর সুইং মেশানো দ্বিতীয় বলেও মারতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন ডি কক (৪)।

তবে শুরুতেই ফর্মে থাকা ওপেনারের বিদায়ের পরও প্রোটিয়াদের পাওয়ার প্লে খারাপ হয়নি। শুরুতে একটু দেখেশুনে খেলে থিতু হওয়ার পর ডুসেন ও হেনড্রিকস পাওয়ার প্লেতে ৫৯ রান তুলে নেন।

দুজনের জুটি পঞ্চাশ ছাড়িয়ে এগোতে থাকে শতকের দিকে। ওদিকে উইকেটের অপেক্ষা বাড়ে ইংলিশদের। সে অপেক্ষার অবসান হয় ২০তম ওভারে আদিল রশিদের সৌজন্যে। ফ্লাইট মেশানো বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডুসেন আউট হয়ে ফেরেন জনি বেয়ারস্টোকে ক্যাচ দিয়ে। ৬১ বলে ৮টি চারে ৬০ রান করে আউট হন দক্ষিণ আফ্রিকার ৩ নম্বর ব্যাটসম্যান।

রুটও আজ ব্যর্থ হয়েছেন

হেনড্রিকসও থিতু হয়ে আউট হয়েছেন। এবার বোলার রশিদ। অর্ধশতক করে শতকের পথে এগোতে থাকা এই প্রোটিয়া ওপেনারকে ২৬তম ওভারে দারুণ এক গুগলিতে বোল্ড করেন রশিদ। ৭৫ বল খেলে ৮৫ রান করেন হেনড্রিকস, ১১৩ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে ৯টি চার ও ৩টি ছক্কা ছিল।

দুই ব্যাটসম্যানকে হারালেও দক্ষিণ আফ্রিকার রান রেট কমতে দেননি ক্লাসেন ও এইডেন মার্করাম। দুজন মিলে ৬৯ রান যোগ করেন ৫৮ বলে। টপলির বলে ফ্লিক করতে গিয়ে মিড উইকেটে মার্করাম ক্যাচ দিয়ে আউট হলে দুজনের জুটি ভাঙে। আউট হওয়ার আগে ৪৪ বলে ৪২ রান করেন মার্করাম। টপলি টিকতে দেননি ডেভিড মিলারকেও (৫)।

দক্ষিণ আফ্রিকার রান তখন ৩৬.৩ ওভারে ৫ উইকেটে ২৪৩। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের পরের গল্পটা পুরোটাই ক্লাসেন ও মার্কো ইয়ানসেনের। দুজন ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ৭৭ বলে ১৫১ রান যোগ করেন।

সেঞ্চুরির পর ক্লাসেন

ক্লাসেন ৬১ বলে শতক করেন। ইনিংসের শেষ ওভারে গাস অ্যাটকিনসনের বলে আউট হওয়ার আগে ক্লাসেনের ব্যাট থেকে আসে ৬৭ বলে ১০৯ রান। ১৬২ স্ট্রাইক রেটের দুর্দান্ত ইনিংসে ১২টি চার ও ৪টি ছক্কা ছিল। তাঁর সঙ্গী ইয়ানসেন অর্ধশতক করেন ৩৫ বলে।

তবে তাঁর ইনিংস শেষে তিনি অপরাজিত ছিলেন ৪২ বলে ৭৫ রানে। ৩টি চার ও ৬টি ছক্কা ছিল তাঁর ইনিংসে। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন টপলি। ম্যাচের শেষ দিকে এই টপলিই চোটের কারণে ব্যাটিং করতে না পারলে ইংল্যান্ডের ইনিংস থেমে যায় ১৭০ রানে। যা ইংলিশদের দিয়েছে রানের দিক থেকে সবচেয়ে বড় হারের তেতো স্বাদ। এর আগে গত বছর মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ২২১ রানে হেরেছিল ইংল্যান্ড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩৯৯/৭ (ক্লাসেন ১০৯, হেনড্রিকস ৮৫, ইয়ানসেন ৭৫*, ডুসেন ৬০, মার্করাম ৪২; টপলি ৩/৮৮, অ্যাটকিসন ২/৬০)।

ইংল্যান্ড: ২২ ওভারে ১৭০ (উড ৪৩*, অ্যাটকিনসন ৩৫, ব্রুক ১৭; কোয়েৎজে ৩/৩৫, এনগিডি ২/২৬, ইয়ানসেন ২/৩৫)।

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ২২৯ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: আইনরিখ ক্লাসেন।