টেস্ট ক্রিকেটের দুনিয়াকে দুই ভাগ করতে চাচ্ছে ক্রিকেটে ‘বিগ থ্রি’ বা ‘তিন মোড়ল’। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ভারতের এই প্রস্তাব নিয়ে চলতি মাসেই আইসিসিতে আলোচনা হওয়ার কথা। তবে টেস্ট ক্রিকেটকে বিভক্তির এই পরিকল্পনার সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। ক্লাইভ লয়েডের মতো কিংবদন্তি এই আশঙ্কা করছেন যে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দল হারিয়ে যাবে ক্রিকেট মানচিত্র থেকে। এবার তেমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক দুই অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা ও গ্রায়েম স্মিথ।
দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ মনে করছেন, তিন মোড়ল টেস্ট ক্রিকেটকে দুই স্তরে ভাগ করার প্রস্তাব করেছে মূলত নিজেদের মধ্যে বেশি বেশি সিরিজ খেলতেই। স্কাই স্পোর্টস ক্রিকেট পডকাস্টে স্মিথ এ নিয়ে বলেন, ‘পরের চক্রে ইংল্যান্ড, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া কতবার মুখোমুখি হবে, তা নিয়ে আজ সকালে আমি একটা নোট দেখলাম। অন্য দেশগুলোর জন্য খুবই কঠিন হয়ে যাবে। বাণিজ্যিক কারণেই তো সবাই ভারতের সঙ্গে খেলতে চায়।’
আপনি আর কোথায় এমনটা দেখবেন যে শীর্ষ তিন দল শুধু পরস্পরের বিপক্ষে খেলছে? চিন্তা করতে পারেন, পরের এফটিপির (ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনা) চেহারা কেমন হবে।গ্রায়েম স্মিথ, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক
স্মিথ এরপর তিন মোড়লের নিজেদের মধ্যে বেশি ম্যাচ খেলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, ‘আপনি আর কোথায় এমনটা দেখবেন যে শীর্ষ তিন দল শুধু পরস্পরের বিপক্ষে খেলছে? চিন্তা করতে পারেন, পরের এফটিপির (ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনা) চেহারা কেমন হবে।’
টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচাতে কী করতে হবে, সেটিও বললেন স্মিথ, ‘ক্রিকেট–বিশ্বের দরকার হলো দক্ষিণ আফ্রিকাকে শক্তিশালী করা, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শক্তিশালী করা, শ্রীলঙ্কাকে শক্তিশালী করা। নইলে কী যে হবে!’
শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা মনে করেন, খেলাটির গুণমান বাড়ানোর চেয়ে আর্থিক লাভটাকে বড় করে দেখে নির্লজ্জের মতো এমন প্রস্তাব করা হয়েছে। টেলিকম এশিয়া স্পোর্টকে রানাতুঙ্গা এ বিষয়ে বলেন, ‘অর্থনীতির ব্যাপারটা আমি বুঝি। এমন কিছু হলে ওই তিন বোর্ডের কোষাগার ফুলেফেঁপে উঠবে ঠিকই, কিন্তু খেলাধুলা তো শুধু পাউন্ড, ডলার আর রুপির বিষয় নয়। প্রশাসকদের দরকার খেলাটিকে পরিচর্যা করে বাঁচিয়ে রাখা, শুধু নিজেদের থলে ভরা নয়।’
ক্রিকেট বিশ্বকে এই পর্যায়ে আনতে ভারত সব সময় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। জগমোহন ডালমিয়া, রাজ সিং দুঙ্গারপুর, শারদ পাওয়ার ও শশাঙ্ক মনোহরদের মনে ভারতের স্বার্থটা সবার ওপরে থাকলেও তাঁরা বৃহৎ পরিসরে ভাবতে পারতেন। এখনো ভারতের কাছ থেকে তেমন কিছুই প্রত্যাশা করি, এখনকার মতো স্বার্থবাদী কিছু নয়।অর্জুনা রানাতুঙ্গা, শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক
শুধু বড় দলগুলোই মধ্যে খেলা হলেই ভালো ক্রিকেট দেখা যায়, এমনটাও মনে করেন না রানাতুঙ্গা। উদাহরণ হিসেবে গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় শামার জোসেফের পারফরম্যান্সের কথা মনে করিয়ে দিলেন, ‘গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়াকে হারানোটা মোটেও সহজ কাজ নয়। কিন্তু এই ছেলেটা (জোসেফ) অসাধারণ খেলেছে। আমি নিশ্চিত অস্ট্রেলিয়ার সমর্থকেরাও প্রশংসা করেছে তরুণ এই প্রতিভার। আপনি অন্য দেশগুলোকে বাদ দিয়ে কেন এমন খেলোয়াড়দের বঞ্চিত করবেন?’
টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচাতে ভারতকেই সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিতে বলে ডালমিয়া-দুঙ্গারপুর-পাওয়ার-মনোহরদের কথা মনে করিয়ে দিলেন রানাতুঙ্গা, ‘ক্রিকেট বিশ্বকে এই পর্যায়ে আনতে ভারত সব সময় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। জগমোহন ডালমিয়া, রাজ সিং দুঙ্গারপুর, শারদ পাওয়ার ও শশাঙ্ক মনোহরদের মনে ভারতের স্বার্থটা সবার ওপরে থাকলেও তাঁরা বৃহৎ পরিসরে ভাবতে পারতেন। এখনো ভারতের কাছ থেকে তেমন কিছুই প্রত্যাশা করি, এখনকার মতো স্বার্থবাদী কিছু নয়।’