এক দশক ধরে বৈশ্বিক শিরোপা জিততে পারছে না ভারত। সর্বশেষ ২০১৩ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে ভারত চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছিল। এরপর ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি এবং ২০২১ ও ২০২৩ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে হেরেছে দলটি।
ভারতীয়দের বৈশ্বিক ট্রফির দীর্ঘ খরা ঘোচানোর সুবর্ণ সুযোগ আসতে পারে এ বছরই। আগামী ৫ অক্টোবর নিজেদের দেশে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজন করবে ভারত। ক্রিকেট মহাযজ্ঞের ক্ষণগণনাও এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আসর শুরু হওয়ার ঠিক ১০০ দিন আগে পরশু সূচি প্রকাশ করেছে আইসিসি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে ১০টি দল ১০ ভেন্যুতে ৪৬ দিনে ৪৮ ম্যাচ খেলবে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভ্রমণের ধকল পোহাতে হবে স্বাগতিক ভারতকেই। রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিরা মূল পর্বে ৯ ম্যাচ খেলবেন ৯ ভেন্যুতে। এই ৯ ম্যাচ খেলতে ৩৪ দিনে তাঁদের ভ্রমণ করতে হবে প্রায় ৮ হাজার ৩৬১ কিলোমিটার। বিশ্বকাপ জিততে হলে আরও দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। তখন সেমিফাইনাল, ফাইনালসহ ৪২ দিনে ১১ ম্যাচ খেলতে দলটিকে পাড়ি দিতে হবে প্রায় ৯ হাজার ৭০০ কিলোমিটার পথ।
বাংলাদেশ দলের ওপর দিয়েও ভ্রমণের ধকল একেবারে কম যাবে না। সব মিলিয়ে ৭ হাজার ৩২৯ কিলোমিটার আকাশপথ পাড়ি দিতে হবে বাংলাদেশকে। সেটিও প্রস্তুতি ম্যাচের জন্য বাড়তি ভ্রমণের হিসাব ছাড়াই। মূল পর্বে তামিমদের ৯ ম্যাচ হবে ৬টি ভেন্যুতে। ৭ অক্টোবর ধর্মশালায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু, ১২ নভেম্বর মূল পর্বে শেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। ধর্মশালা ছাড়াও চেন্নাই, পুনে, মুম্বাই, কলকাতা ও দিল্লিতে ম্যাচ আছে। ধর্মশালা, পুনে ও কলকাতায় ম্যাচ দুটি করে। একটি করে ম্যাচ চেন্নাই, মুম্বাই ও দিল্লিতে।
মূল পর্বের আগে বাংলাদেশ গুয়াহাটিতে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে। সেখান থেকে যাবে ধর্মশালায়। আকাশপথে গুয়াহাটি থেকে ধর্মশালার দূরত্ব ১ হাজার ৬৩৯ কিলোমিটার। ভারতের হিমাচল প্রদেশের শহরটিতে বাংলাদেশ খেলবে প্রথম দুটি ম্যাচ। পরের ৭ ম্যাচ হবে ৫ ভেন্যুতে।
৯ ম্যাচে শহর থেকে শহরে বাংলাদেশ দলের ভ্রমণসূচির ক্রমটা এমন—ধর্মশালা থেকে চেন্নাই (২ হাজার ১৬৯ কিলোমিটার), চেন্নাই থেকে পুনে (৯১২ কিলোমিটার), পুনে থেকে মুম্বাই (১১৮ কিলোমিটার), মুম্বাই থেকে কলকাতা (১ হাজার ৬৫২ কিলোমিটার), কলকাতা থেকে দিল্লি (১ হাজার ৩০৫ কিলোমিটার), দিল্লি থেকে পুনে (১ হাজার ১৭৩ কিলোমিটার)। প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে কিংবা ফাইনালে উঠলে আকাশপথে আরও সময় কাটবে বাংলাদেশের। তবে সেটি তামিম-সাকিবদের জন্য আনন্দময় ভ্রমণই হবে।
বিশ্বকাপের আগে ভারত কোথায় ক্যাম্প করবে, সেটা এখনো ঠিক হয়নি। যেখানেই করুক, সেখান থেকে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে যেতে হবে আসামের গুয়াহাটিতে। দ্বিতীয় ও শেষ প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে গুয়াহাটি থেকে যেতে হবে তিরুবনন্তপুরমে। আকাশপথে গুয়াহাটি থেকে তিরুবনন্তপুরমের দূরত্ব ২ হাজার ৫০৬ কিলোমিটার।
এরপরই শুরু রোহিত-কোহলিদের আসল পরীক্ষা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের মূল পর্বের ম্যাচ হবে চেন্নাইয়ে। ম্যাচটি খেলতে তিরুবনন্তপুরম থেকেই চেন্নাইয়ে যাবে রোহিতের দল। আকাশপথে তিরুবনন্তপুরম থেকে চেন্নাইয়ের দূরত্ব ৬২১ কিলোমিটার। এরপর একে একে আরও ৮টি গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে তাদের। বিশ্বকাপের মূল পর্বের ম্যাচগুলো খেলতে ভারতীয় দলকে আকাশপথে যত কিলোমিটার অতিক্রম করতে হবে, সেই ক্রমটা এমন—চেন্নাই থেকে দিল্লি (১ হাজার ৭৬১ কিলোমিটার), দিল্লি থেকে আহমেদাবাদ (৭৭৫ কিলোমিটার), আহমেদাবাদ থেকে পুনে (৫১৬ কিলোমিটার), পুনে থেকে ধর্মশালা (১ হাজার ৯৩৬ কিলোমিটার), ধর্মশালা থেকে লক্ষ্ণৌ (৭৪৮ কিলোমিটার), লক্ষ্ণৌ থেকে মুম্বাই (১ হাজার ১৯০ কিলোমিটার), মুম্বাই থেকে কলকাতা (১ হাজার ৬৫২ কিলোমিটার) এবং কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরু (১ হাজার ৫৪৪ কিলোমিটার)।
ভারতীয় দল সাধারণত দেশের মাটিতে এক ভেন্যুতে টানা দুটি ম্যাচ খেলে না; এমনকি এক রাজ্যেও নয়। ৫০টির বেশি আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট ভেন্যু থাকায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) রাজ্যগুলোকে ম্যাচ বণ্টন করে দেয়। তাই রোহিত-কোহলিদের প্রতিনিয়ত ভ্রমণ করতে হয়।
দেশের মাটিতে খেলা থাকলে এক শহর থেকে আরেক শহরে যেতে চার্টার্ড বিমান থাকে। কিন্তু বিশ্বকাপের সময় ভ্রমণ করতে হবে বাণিজ্যিক ফ্লাইটে। এ ধরনের বিমানে সব সময় বিজনেস ক্লাসে আসন পাওয়া যায় না। ইকোনমি ক্লাসে এক আসন থেকে আরেক আসনের মধ্যকার ব্যবধানও কম। ফলে খেলোয়াড়দের পা রাখার জায়গা হয়ে ওঠে সংকীর্ণ। এটা ফাস্ট বোলারদের সমস্যায় ফেলে।
ভারত সেমিফাইনালে উঠলে বেঙ্গালুরু থেকে মুম্বাইয়ে (৮৪২ কিলোমিটার) যেতে হবে ভারতকে। তবে সেমিফাইনালে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হলে ম্যাচ হবে কলকাতায়। সে ক্ষেত্রে বেঙ্গালুরু থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীতে (১ হাজার ৫৬০ কিলোমিটার) ভ্রমণ করতে হবে। আর ফাইনালে উঠলে দলটির শেষ গন্তব্য হবে আহমেদাবাদের সরদার বল্লবভাই প্যাটেল বিমানবন্দরে। বিশ্বকাপ ট্রফি পেতে লড়াইয়ের জন্য দলটিকে ভ্রমণ করতে হবে আরও ১ হাজার ৬১৭ কিলোমিটার।
ভারতের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আট ভেন্যুতে খেলবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। ভারতের সূচির সঙ্গে ইংল্যান্ডের একটি জায়গায় মিল আছে। একই ভেন্যুতে দল দুটির টানা দুই ম্যাচ নেই। লিগ পর্বের ভেন্যু থেকে ভেন্যুতে ইংলিশদের মোট পাড়ি দিতে হবে ৮ হাজার ১৭১ কিলোমিটার, যা ভারতের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান ৯ ম্যাচ খেলবে ৫ ভেন্যুতে। চারটি ভেন্যুতে দুটি করে ম্যাচ খেলবে বাবর আজমের দল। আর অনীহা সত্ত্বেও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি তাদের খেলতে হবে আহমেদাবাদে। মূল পর্বে পাকিস্তানের ভ্রমণ করতে হবে ৬ হাজার ৮৪৯ কিলোমিটার।
ভারত, ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশের চেয়ে কম, তবে পাকিস্তানের চেয়ে বেশি পথ পাড়ি দিতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। ৮টি ভেন্যুতে ৯ ম্যাচ খেলতে ৬ হাজার ৯০৭ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হবে। তবে ডেভিড ওয়ার্নার–স্টিভেন স্মিথরা লক্ষ্ণৌয়ে এক সপ্তাহ কাটাতে পারবেন। সেখানে তাঁরা টানা দুটি ম্যাচ খেলবেন।