গত এপ্রিলের কথা। ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও অধিনায়ক বেন স্টোকস ম্যানচেস্টারের এক হোটেলে কথা বলতে ডাকেন জেমস অ্যান্ডারসনকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি তখনই বুঝে গিয়েছিলেন, তাঁকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হবে। বাকিটা তো সবার জানাই।
ম্যাককালাম ও স্টোকস জানিয়ে দেন, ২০২৫-২৬ অ্যাশেজ সামনে রেখে ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় অ্যান্ডারসন নেই। এরপর মে মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া ৪২ বছর বয়সী অ্যান্ডারসন এখন ইংল্যান্ড টেস্ট দলের বোলিং কোচ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই মুহূর্ত নিয়ে কথা বলেছেন অ্যান্ডারসন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের হয়ে ৫৬০ ইনিংসে ৯৯১ উইকেট নেওয়া সেই মুহূর্ত নিয়ে বলেছেন, ‘হেঁটে তাদের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় শীতল অনুভূতি হচ্ছিল। এটা তো দলীয় মূল্যায়ন নয়, তাই কি? নিজেকে গুডফেলাস (সিনেমা)–এর জো পেসি (অভিনেতা) মনে হচ্ছিল, এমন একটা পরিবেশ তৈরি করে কক্ষে স্বাগত জানাল হলো যে শুধু গুলিটাই করা হবে।’
টেস্ট ইতিহাসে পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ (৩৫০ ইনিংসে ৭০৪) উইকেট নেওয়া অ্যান্ডারসনের তখন কেমন লেগেছিল, বলেছেন সেই কথাও, ‘মনে হয় না রাগ হয়েছিল। হতবাক হয়েছিলাম। সত্যি বলতে, শরীর যত দিন সায় দিত, আমি চালিয়ে যেতাম। সম্ভবত বিদায়ের এটাই ভালো সময়, তা বলতে আমার ওই ধাক্কাটার প্রয়োজন ছিল।’
তবে অ্যান্ডারসনকে ওভাবে পরিকল্পনার বাইরে রাখার কথা জানানোর ব্যাপারটি একজন মেনে নিতে পারেননি। অ্যান্ডারসনের মতে, সম্ভবত এখনো তিনি ব্যাপারটায় চটে আছেন। তিনি অ্যান্ডারসনেরই স্ত্রী দানিয়েল্লা। সর্বকালের অন্যতম সেরা এই পেসারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, অ্যান্ডারসন ইংল্যান্ড দলে ভূমিকা পাল্টে ফেরার পরও দানিয়েল্লা চটে আছেন কি না? তাঁর উত্তর, ‘সম্ভবত হ্যাঁ। প্রথমবার দেখা হওয়ার পর থেকেই সে আমার সবচেয়ে বড় সমর্থক। চোটে পড়েছি, কিন্তু খেলা চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণাটা সে দিয়ে গেছে। তার যুক্তি, কাজটা সঠিক প্রক্রিয়ায় করা হয়নি। নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী সরে দাঁড়াতে চেয়েছিল সে। এখন সম্ভবত একটু নরম হয়েছে।’
শৈশবে অ্যান্ডারসনের তেমন বন্ধুবান্ধব ছিল না। বার্নলিতে ১৪ বছর বয়সে স্কুলে পড়াকালে বেশ একাকী সময় কেটেছে তাঁর। ক্রিকেট সে সময় তাঁর প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল। তাঁর নিজের ভাষায়, ‘কাছের বন্ধু ছিল না। স্কুলে আমরা ক্রিকেটও খেলতাম না। আমাকে একটু অন্য চোখে দেখা হতো যে ক্রিকেট পছন্দ করে। ফুটবল এবং অন্যান্য দারুণ সব খেলা থাকতে ক্রিকেট কেন পছন্দ করি? অন্য খেলাও খেলেছি, কিন্তু ক্রিকেটের মতো অতটা নয়। নিজেকে সমাজচ্যুত মনে হতো।’
বার্নলির সেই দিনগুলো স্মরণ করে অ্যান্ডারসন আরও বলেছেন, ‘ক্রিকেট ক্লাব পেয়ে যাওয়ায় নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। সেখানে বন্ধু তৈরি হয় এবং তাদের ছাড়া সত্যিই ভুগতে হতো। তাই সামনে এগিয়ে যেতে আর ভয় লাগেনি। সফল হতে চেয়েছি।’ অ্যান্ডারসন কতটা সফল তা জানে ক্রিকেটের ইতিহাস। কিন্তু ক্রিকেট যদি তাঁর জীবনে না আসত, তাহলে কি হতো?
অ্যান্ডারসনের উত্তর, ‘দারুণ প্রশ্ন। জানি না। চুক্তিতে না এলে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ভেবেছিলাম। ক্রিকেট আমার জীবনে না এলে কী করতাম, সেসব নিয়ে কোনো ধারণাই আসলে নেই আমার। এটা ভীতিকর কারণ, একই অবস্থানে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের আমার মতো প্যাশন নিয়ে ভালোবাসার কিছুও নেই। ক্রিকেটকে পাওয়ায় নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করি।’
অবসর নেওয়ার পর ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্কটা পুরোপুরি শেষ হয়ে গেলে তা ভালো হতো না অ্যান্ডারসনের জন্য। সে জন্য ইংল্যান্ড দলে কোচের ভূমিকাটা ভালোই লাগে তাঁর, ‘নিজের জীবনের সঙ্গে (ক্রিকেটের) পুরোপুরি ছেদ ঘটলে জানি না কীভাবে মানিয়ে নিতাম। মূল বিষয় হলো তারা চেয়েছিল আমি দলের সঙ্গে থাকি, যেটা আমার জন্য কাজে এসেছে। এখনো ড্রেসিংরুমের পরিবেশটাই পাচ্ছি। সতীর্থদের সঙ্গে দেখাও হচ্ছে প্রতিদিন। এখনো টেস্ট ম্যাচে ভূমিকা রাখতে পারছি, যদিও সেটা অন্যভাবে।’