নেদারল্যান্ডসের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার হার, সবচেয়ে প্রয়োজনের ম্যাচে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের স্নায়ু ধরে রাখতে না পারা, টুর্নামেন্ট থেকে প্রায় ছিটকে যাওয়া পাকিস্তানেরই সেমিফাইনালে ওঠা—টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আজ আলোচনার কম ব্যাপার নেই। কিন্তু বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচে আরেকটি ঘটনা সামনে আসছে বারবার। সেটি টেলিভিশন আম্পায়ারের ‘ভুলে’ সাকিব আল হাসানের এলবিডব্লু হওয়া।
ইনিংসের ১১তম ওভারে সৌম্য সরকারের আউটের পর মুখোমুখি প্রথম বলেই শাদাব খানকে এগিয়ে এসে মারতে চেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু শটটা ঠিকভাবে খেলতে পারেননি।
বল সাকিবের বুট ছুঁয়ে চলে যাওয়ার পর বেশ খানিকটা সময় নিয়ে পাকিস্তানের বোলার-ফিল্ডারদের আবেদনে সাড়া দিয়ে আম্পায়ার এলবিডব্লু দিয়ে দেন সাকিবকে।
সাকিব সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নেন। মাঠে তাঁর শরীরীভাষাই বলে দিচ্ছিল, তিনি নিশ্চিত এলবিডব্লু হননি। টেলিভিশন রিপ্লেতেও পরিষ্কার দেখা গেছে, বল সাকিবের ব্যাটে লেগেছিল আগে।
কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে জিম্বাবুয়ের টিভি আম্পায়ার ল্যাংটন রুসেরে শেষ পর্যন্ত অন ফিল্ড আম্পায়ারের এলবিডব্লুর সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন। সাকিব মাঠ ছেড়ে যাওয়ার আগে আম্পায়ারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়নি।
ম্যাচ শেষে এই আউট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা। পেসার ইবাদত হোসেন অফিশিয়াল ব্রডকাস্টার চ্যানেল জিটিভিতে, ওপেনার নাজমুল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে আর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেন বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন মিক্সড জোনে।
সাকিবের আউট নিয়ে ইবাদতের কথা, ‘দেখেন, এ রকম একটা আউট মেনে নেওয়ার মতো নয়। শেষ ম্যাচেও ভুল সিদ্ধান্ত হয়েছে, অনেকগুলোই আমাদের বিপক্ষে গেছে। এমন সিদ্ধান্ত যদি প্রতি ম্যাচে হয়, তাহলে আমাদের মতো দলের পক্ষে ফিরে আসা কঠিন। সাকিব ভাই আমাদের অন্যতম অভিজ্ঞ খেলোয়াড়, ওনার আউট এমন হলে আমাদের জন্য বড় ক্ষতি।’
ইবাদত এখানেই থামেননি। সাকিবের আউটে কী ক্ষতি হয়েছে, সেটাও বলেছেন সরাসরিই, ‘সাকিব ভাই যদি উইকেটে থাকতেন, তাহলে আমাদের বাকি উইকেটগুলোও পড়ত না। ওনার উইকেট আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ওনার উইকেটের পরই কিন্তু আরও দুটি উইকেট পড়ে গেছে। উনি যদি উইকেটে থাকতেন, সিদ্ধান্তটা আমাদের পক্ষে এলে তো বাকি উইকেটগুলো পড়ত না।’
এরপর তো বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সব ম্যাচের আম্পায়ারিং নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ইবাদত, ‘দেখেন, আম্পায়ার দেখেও দেখছেন না। দেখেও ভুল করছেন। এগুলো তো আমাদের বিপক্ষে যাচ্ছে সবকিছু। সব সিদ্ধান্ত আপনাকে মেনে নিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে এসে নাজমুলের কথার সুর ছিল এ রকম, ‘এটাতে (সাকিবের আউট) সবারই সংশয় ছিল। কিন্তু আমরা ওই উইকেটে নজর দিইনি। আমরা পরে আরও ভালো ক্রিকেট খেলতে পারতাম।’
সাকিবের ওই আউটের পরই দলের মনোযোগটা নড়ে গেছে কি না, প্রশ্নের উত্তরে নাজমুল বলেছেন, ‘আমার কাছে, আমাদের সবার কাছে মনে হয়েছে, আউটটা হয়নি। আমরা নিশ্চিত ছিলাম, আউট হয়নি। সিদ্ধান্ত আম্পায়ারের, এর ওপরে কিছু বলার নেই। আমার কাছে মনে হয়নি মনোযোগ নড়ে গেছে। আমরা ভালো খেলিনি শেষে, মিডল ওভারগুলোতে।’
সাকিবের আউটের পর মাঠে নামেন আফিফ। তাই ওই আউট নিয়ে খুব একটা ভাবার সময় পাননি। ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে তিনি বিষয়টি যেন এড়িয়েই যেতে চাইলেন, ‘যখন ওই আউট দেয়, আমাদেরও সন্দেহ ছিল। তবে এরপর আমি ব্যাটিংয়ে চলে গেছি। তখন ড্রেসিংরুমে কী হয়েছে, আমার জানা নেই।’