আইসিসির কাছে শরনার্থী ক্রিকেট দলের জন্য আবেদন জানিয়েছে আফগানিস্তানের নারী ক্রিকেটাররা
আইসিসির কাছে শরনার্থী ক্রিকেট দলের জন্য আবেদন জানিয়েছে আফগানিস্তানের নারী ক্রিকেটাররা

শরণার্থী দল হিসেবে খেলতে চান আফগান নারী ক্রিকেটাররা

টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানের কোনো নারী ক্রিকেট দল নেই এই মুহূর্তে। ২০২১ সালে দেশটিতে তালেবান শাসন ফিরে আসার পর সরকারিভাবে নারী ক্রিকেট দল বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়। এখন আফগানিস্তানের নারী ক্রিকেটাররা ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসির কাছে ক্রিকেটে ফেরার আকুতি জানিয়েছে।

আফগানিস্তানের নারী ক্রিকেটারদের আবেদন আইসিসি যেন তাঁদের অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক শরণার্থী দল হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ করে দেয়।

আফগানিস্তানের পুরুষ ক্রিকেট দল দেশটিতে সমাদৃত। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ক্রিকেট বিশ্বে মনোযোগের কেন্দ্রে উঠে আসতে পেরেছে তারা। টেস্ট ক্রিকেটে ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’ হলেও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আফগানিস্তান পুরুষ ক্রিকেট দল এরই মধ্যে জায়ান্ট কিলার হিসেবে নিজেদের চিনিয়েছে। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে উঠে আফগানিস্তান ক্রিকেট দল উন্নতিরও প্রমাণ দিয়েছে। কিন্তু কট্টরপন্থী তালেবান শাসন ফেরার পর নারীদের অন্যান্য অধিকার খর্বের মতোই আফগানিস্তানের তালেবান সরকার সব খেলার নারী উইং বন্ধ করে দেয়।

আফগানিস্তানে নারীদের ক্রিকেট বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান সরকার
ছবি: এএফপি

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তান পুরুষ ক্রিকেট দলের সাফল্যের পর দেশটির নারী ক্রিকেটারদের অধিকার নিয়ে আলোচনা আবারও নতুন মোড় নিয়েছে। অথচ আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে আফগানিস্তানেরও একটি নারী ক্রিকেট দল থাকা বাধ্যতামূলক।

তালেবান সরকার যখন নারী ক্রিকেট দল বাতিল করে দেয়, তখনই আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছিল। কিন্তু আইসিসি সেই দাবি উপেক্ষা করে আসছে তিন বছর ধরেই।

তালেবান শাসন ফিরে আসার আগে দেশটিতে নারী ক্রিকেটের চর্চা শুরু হয়েছিল। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে নারী ক্রিকেটাররা চুক্তিবদ্ধও হয়েছিলেন। সেই ক্রিকেটাররাই সম্প্রতি আইসিসিকে একটি খোলা চিঠি লিখে নিজেদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার আকুতিটা জানিয়েছে।

তালেবানরা ২০২১ সালে ফেরার পর মেয়েদের খেলাধুলা বন্ধ করে দেওয়া হয়

চিঠিতে রশিদ খানের নেতৃত্বাধীন আফগান পুরুষ ক্রিকেট দলকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন নারী ক্রিকেটাররা। সেখানে তাঁরা লিখেছেন, ‘আমরা আফগানিস্তানের চুক্তিভুক্ত নারী ক্রিকেটাররা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠায় রশিদ খানের নেতৃত্বাধীন পুরুষ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানাই। আমরা তাঁদের অর্জনে গর্বিত। তবে দুঃখ এটিই, আমরা নারী ক্রিকেটার হওয়াতে দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিতে পারছি না। আমরা ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসিকে অস্ট্রেলিয়াতে আমাদের একটি শরণার্থী ক্রিকেট দল গঠনের অনুরোধ জানাচ্ছি। যে দলটি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ইস্ট এশিয়ান ক্রিকেট কার্যালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এই দলটির মাধ্যমে আমরা পুরুষ ক্রিকেটারদের মতোই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের সকল নারীদের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। যেটি আমরা দেশে থেকে করতে পারছি না।’

আফগানিস্তানের নারী ক্রিকেটাররা অবশ্য জানেন, আফগানিস্তান জাতীয় নারী ক্রিকেট দল হিসেবে তাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করার কোনো সুযোগ নেই। তবে আইসিসির কাছে তাঁরা আবেদন জানিয়েছে, দেশহীন ক্রিকেট দল হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ করে দেওয়ার। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার আসার পর দেশটির নারী ক্রিকেটারদের প্রায় সবাই দেশ ত্যাগ করেন। এর একটা বড় অংশ বসবাস করছেন অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে ক্লাব ক্রিকেটে খেলছেন তাঁরা।

চিঠিতে আফগান নারী ক্রিকেটাররা আরও লিখেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এই শরণার্থী দলটির মধ্য দিয়ে সারা পৃথিবীর সামনে আমরা আমাদের প্রতিভার প্রমাণ রাখব। এর মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে বসবাস করা নারীদের আশার আলো দেখাব। আফগানিস্তানে নারীদের প্রতি কী অমানবিক আচরণ হচ্ছে, সেটি দুনিয়ার সামনে তুলে ধরব। আমরা আফগানিস্তান পুরুষ দলের মতোই সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার যোগ্যতা রাখি।’