টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের অনেক নতুন দুয়ার খুলে দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল। গতকাল রাতে সুপার ওভারে গত আসরের রানার্সআপ পাকিস্তানকে হারিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম বড় অঘটনের জন্ম দিয়েছে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে আসা যুক্তরাষ্ট্র, যারা এ টুর্নামেন্টের সহ-আয়োজকও। ডালাসের ম্যাচটি অবশ্য সুপার ওভারের আগেই জেতা উচিত ছিল বলেও মনে করেন মোনাঙ্ক।
টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়া যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে আটকে দেয় ১৫৯ রানেই। এমন উইকেটে এ লক্ষ্য খুব একটা কঠিন নয়, তার ওপর মাঠের একদিক বেশ ছোট। তবে শাহিন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ আমির, হারিস রউফ ও নাসিম শাহর সমন্বয়ে গড়া পাকিস্তানের পেস আক্রমণের বিপক্ষে কাজটি একেবারে সহজও ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের। অবশ্য দ্বিতীয় উইকেটে মোনাঙ্ক ও আন্দ্রিস হোউসের ৪৮ বলে ৬৮ রানের জুটিতে ঐতিহাসিক জয়ের পথে দারুণভাবে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তান পেসারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে এরপর ম্যাচ হাত থেকে বেরিয়ে যেতে ধরে তাদের।
৩৮ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা মোনাঙ্ক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমি আউট হওয়ার সময়ও ম্যাচে ছিলাম। আমার মনে হয়েছে ম্যাচটি শেষ করা উচিত ছিল আমাদেরই, সুপার ওভারে যাওয়া উচিত হয়নি। তবে হ্যাঁ, বিশেষ করে সুপার ওভারে যেভাবে আমরা স্নায়ু ধরে রেখেছি, ১৮ রান করেছি—এটি আমাদের এগিয়ে দিয়েছে।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়টিকে নিজেই অবিশ্বাস্য বলছেন মোনাঙ্ক, ‘জয়ে খুশি। পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলা এবং তাদের হারানো—আমাদের দলের অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স। পাকিস্তানকে বিশ্বকাপে হারানো বড় অর্জন। আমি বলব যুক্তরাষ্ট্র দলের জন্য এটা বড় দিন। শুধু যুক্তরাষ্ট্র (দল) নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট সম্প্রদায়ের জন্যও।’
বিশ্বকাপের আগে পূর্ণ সদস্য বাংলাদেশকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে কানাডার দেওয়া প্রায় ২০০ রানের কাছাকাছি লক্ষ্যে জেতার পর পাকিস্তানের সঙ্গে এমন জয়ে স্বাভাবিকভাবেই ক্রিকেট-বিশ্বের নজর কেড়েছে দলটি।
দুই ম্যাচে দুই জয়ের পর সুপার এইটের সম্ভাবনা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এখন বেশ উজ্জ্বলই। তবে এসব নিয়ে এখন থেকে একেবারেই ভাবতে চান না ভারতে জন্ম নেওয়া ৩১ বছর বয়সী উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান মোনাঙ্ক। অবশ্য পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর বলেছেন, ‘অবশ্যই পাকিস্তানকে বিশ্বকাপে হারানো আমাদের জন্য অনেক দুয়ার খুলে দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট সম্প্রদায়ের মতো মানুষ এ ব্যাপারে জানবে। বিশ্বকাপ আয়োজন করা এবং দল হিসেবে খেলা, এসব যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের প্রসারে কাজে দেবে।’
দলটির এমন পারফরম্যান্স ‘ফ্লুক’ কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মোনাঙ্ক বলেন, ‘লোকে কী বলছে তা নিয়ে আমাদের ভাবনা নেই। আমরা জানি আমরা কী করেছি, আমাদের সামর্থ্য কতটুকু। ফলে আমরা নির্দিষ্ট ম্যাচের দিকেই নজর দিই। নিজেদের আবেগের খুব একটা ওঠানামা হতে দিই না। এ জয় যা-ই হোক না কেন, আমরা আজ উপভোগ করব এবং পরের দিন আবার ফুরফুরে হয়ে ফিরব।’
ডালাসের মাঠটিতে ধারণক্ষমতা ৭ হাজার। তবে গতকাল বেশির ভাগ সমর্থকই ছিলেন পাকিস্তানের। যুক্তরাষ্ট্র কাজে লাগিয়েছে সেটিকেও, ‘আমরা জানতাম যথেষ্ট সমর্থন আমরা পাচ্ছি না, পাকিস্তানেরই বেশি সমর্থন। আমার মনে হয়েছে এটিই তাদের বুমেরাং হয়ে যাবে। আমরা ভালো খেললে তারা চাপে পড়বে। টসে জেতার পর প্রথম ছয় ওভারে যেভাবে বোলিং করেছি, তাদের রান করার সুযোগ বেশি দিইনি। চাপে রাখতে পেরেছি। আমাদের সহায়তা করেছে এটি।’