নারী এশিয়া কাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে হলে শুধু জয় নয়, বড় জয় দরকার ছিল বাংলাদেশ নারী দলের। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ব্যাটারদের দাপুটে পারফরম্যান্সের সৌজন্যে তা পেয়েছে নিগার সুলতানার দল।
শ্রীলঙ্কার ডাম্বুলায় আগে ব্যাট করে মুর্শিদা খাতুন (৮০) ও অধিনায়ক নিগার সুলতানার (৬২) ফিফটিতে বাংলাদেশ ২ উইকেটে ১৯১ রান করে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর। এর আগে ২০১৯ সালে মালদ্বীপের বিপক্ষে ২ উইকেটে ২৫৫ রান করেছিল বাংলাদেশ।
রান তাড়ায় মালয়েশিয়ার মেয়েরা বেশি দূর যেতে পারেননি। ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৭৭ রান করেছে দলটি। ১১৪ রানের জয়ে রান রেটে (+১.৯৭১) থাইল্যান্ডকে (+০.০৯৮) ছাড়িয়ে গেলেন নিগাররা। বড় এই জয়ে নেট রান রেট বেড়ে যাওয়ায় নিশ্চিত হয়েছে আজ রাতে শ্রীলঙ্কা-থাইল্যান্ড ম্যাচের ফল যাই হোক না কেন, বাংলাদেশ ‘বি’ গ্রুপে সেরা দুইয়ে থাকছেই। থাইরা লঙ্কানদের অবিশ্বাস্যরকম বড় ব্যবধানে হারিয়ে দিলে বাংলাদেশ গ্রুপ চ্যাম্পিয়নও হয়ে যেতে পারে। গ্রুপ রানার্সআপ হলে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলবে ভারতের বিপক্ষে।
রান তাড়ায় মালয়েশিয়া তাদের ইনিংসের শুরুতেই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে। প্রথম দুই ম্যাচে দলের বাইরে থাকা অভিজ্ঞ পেসার জাহানারা আলমের করা প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ওপেনার আইন্না হামিজাহ হাশিম কট বিহাইন্ডের ফাঁদে পড়েন। এলসা হান্টার ২৩ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ২০ রানের ইনিংস খেলে শুরুর ধাক্কাটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন।
কিন্তু বাঁহাতি স্পিনার নাহিদা আক্তারের করা পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। আরেক ওপেনার ওয়ান জুলিয়া ১১তম ওভার পর্যন্ত টিকে ছিলেন, কিন্তু রিতু মনির বলে আউট হওয়ার আগে তিনি ২৫ বলে ১১ রান করেন। এরপর মাহিরাহ ইজ্জাতি ইসমাইলের ২৫ বলে ১৫ রান ছাড়া কেউই দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভার খেলে ৮ উইকেটে ৭৭ রানে থামে মালয়েশিয়ার ইনিংস।
বাংলাদেশ দলের ইনিংসের শুরুতে দিলারা আক্তার মেরে খেলেছেন, মুর্শিদা খাতুন দেখেশুনে। তাতেই বাংলাদেশ পাওয়ারপ্লেতে ৫০ রান পেয়ে যায়। যেখানে প্রত্যাশিতভাবেই দিলারার অবদান বেশি ছিল। দুজনের জুটিটা অবশ্য অবিচ্ছিন্ন ছিল ইনিংসের অষ্টম ওভার পর্যন্ত ৬৫ রানের। মাহিরাহ ইজ্জাতি ইসমাইলের বলে পুল শট খেলতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ আউট হন দিলারা। ২০ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৩ রানে থামে তাঁর ইনিংস, স্ট্রাইক রেট ১৬৫।
তিনে নামা অধিনায়ক নিগার অবশ্য দিলারার শূন্যতা বুঝতে দেননি। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে মাঝের ওভারে রানের গতিটা প্রতি ওভারে ৯-এর আশপাশে রাখেন তিনি। ওদিকে ৪৫ বলে ৮টি বাউন্ডারিতে ফিফটি পূর্ণ করেন মুর্শিদা। টানা দুই ম্যাচে এই মাইলফলক পেরোলেন তিনি। মাইলফলক স্পর্শ করার পর অবশ্য মুর্শিদাও রানের গতি বাড়িয়েছেন।
অর্ধশতকের পরের ১৪ বলে ৩০ রান যোগ করে ইনিংসের ১৭তম ওভারে এলসা হান্টারের বলে আউট হন মুর্শিদা। শেষ পর্যন্ত তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৫৯ বলে ৮০ রানের ঝলমলে ইনিংস। ১০টি চার ও ১টি ছক্কা ছিল মুর্শিদার ১৩৫ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে। তাতে নিগারের সঙ্গে ৫৬ বলে ৮৯ রানের জুটি ভাঙে।
নিগার অবশ্য শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন। অভিজ্ঞ রুমানা আহমেদকে (৪ বলে ৬ রান) নিয়ে ১৮ বলে আরও ৩৭ রান যোগ করেন তিনি। ৩৪ বলে অর্ধশত করে তিনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৩৭ বলে ৬২ রানে, ১৬৭ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটি সাজিয়েছেন ৫টি চার ও ২টি ছক্কায়। পেসার এলসা ছিলেন মালয়েশিয়ার সেরা বোলার, ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৯১/২ (দিলারা ৩৩, মুর্শিদা ৮০, নিগার ৬২*, রুমানা ৬*; হান্টার ১/২৭, মাহিরাহ ১/৩৫)।
মালয়েশিয়া: ২০ ওভারে ৭৭/৮ (হান্টার ২০, মাহিরাহ ১৫; নাহিদা ২/১৩, রিতু ১/২, স্বর্ণা ১/৭, রাবেয়া ১/১০, সাবিকুন ১/১৭, জাহানারা ১/২০)।
ফল: বাংলাদেশ ১১৪ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মুর্শিদা খাতুন।