লাহোরে আজ বাংলাদেশের বাঁচা-মরার লড়াই। এশিয়া কাপে সুপার ফোরে ওঠার সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে জয়ের বিকল্প নেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে।
একটু কি ভুলই করলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে? অবশ্য এত বছর আগের স্মৃতি। ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। স্মৃতির চেয়ে বড় প্রতারক আর কী হতে পারে!
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে কাল বিকেলে অনুশীলনে নামার আগে হাথুরুসিংহে কথা বলছিলেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। সেখানেই জানালেন, এবারের আগে তিনি লাহোরে একবারই এসেছিলেন। ১৯৯৮ সালে শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলতে। পাকিস্তানের এই শহরে নাকি তাঁর ভালো স্মৃতিও আছে।
আসলে ১৯৯৮ নয়, হাথুরুসিংহে যে সফরটার কথা বলেছেন, সেটা আসলে হয়েছিল ১৯৯৯ সালের মার্চে। এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ সেই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করলেও কোনো রান করেননি হাথুরুসিংহে। পরের ইনিংসে ব্যাটই করা লাগেনি তাঁর। দুই ইনিংসে বোলিং করেও পাননি কোনো উইকেট। শ্রীলঙ্কা পাকিস্তানের সঙ্গে টেস্টটা ড্র করেছিল, হয়তো এটাই ভালো স্মৃতি হয়ে আছে হাথুরুসিংহের কাছে।
সে হিসেবে লাহোরে বাংলাদেশের স্মৃতিও খারাপ বলা যাবে না। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ৫টি ওয়ানডে আর ২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে অন্তত একটা জয় তো আছে! হোক সেটা সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে। ২০০৮ সালে এ রকম এক এশিয়া কাপেই এসেছিল সেই জয়। আর সর্বশেষ ২০২০ সালে দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে যাওয়ার সুবাদে বাংলাদেশ দলের বর্তমান অনেক ক্রিকেটারের কাছেই লাহোর বা গাদ্দাফি স্টেডিয়াম নতুন কোনো জায়গা নয়।
এ মাঠে আজ যারা বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ, সেই আফগানিস্তানকেও তাঁদের খুব ভালো করে চেনা। তবে একটু বেশি চেনা বলেই আফগানদের নিয়ে ভয়টাও বেশি। সাদা বলের ক্রিকেটে দলটা যে কোনো দলের জন্যই হুমকি। চট্টগ্রামে গত জুলাইয়ের ওয়ানডে সিরিজে তো তারাই জিতেছে। সিলেটে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে বাংলাদেশ সেটার প্রতিশোধ নিলেও এশিয়া কাপ যেহেতু এবার ওয়ানডের, এখানে ওয়ানডের হিসাবটাই বিবেচ্য।
অথচ আজ বাংলাদেশের সামনে এমনই এক সমীকরণ যে, এশিয়া কাপে সুপার ফোরে যাওয়ার আশা বাঁচিয়ে রাখতে আফগানদের বিপক্ষে বড় জয়ের বিকল্প নেই। সে রকম জয় পেলেও এরপর তাকিয়ে থাকতে হবে শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তানের ম্যাচের দিকে।
আফগানদের বেশি ভয় দলটার দুর্দান্ত বোলিং আক্রমণের কারণে। অনেকের মতো হাথুরুসিংহের চোখেও যেটা বিশ্বের ‘অন্যতম সেরা’। বাংলাদেশ কোচ তাই আগেই বলে নিয়েছেন, ‘আফগানিস্তান বোলিং আক্রমণ বিশ্বের অন্যতম সেরা। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আমরা ওদের বিপক্ষে কিছুদিন আগেই খেলেছি। আমাদের খেলোয়াড়েরা কিছু সাফল্যও পেয়েছে। তবে ম্যাচের দিন কে কেমন খেলে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।’
সাম্প্রতিক সিরিজের অভিজ্ঞতার পর আফগান পেস আর স্পিন বোলারদের সামর্থ্যের প্রতি আরও বেশি সমীহ জেগেছে বাংলাদেশের। হাথুরুসিংহের কথাতেও সেটা পরিষ্কার, ‘দুজন সত্যিকারের বিশ্বমানের স্পিনার ও দারুণ পেসার আছে ওদের। আমরা ওদের বিপক্ষে সম্প্রতি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলেছি। আমরা জানি ওরা কী করতে পারে।’
অন্যদিকে বাংলাদেশের টপ অর্ডারে নিয়মিত মুখেরা নেই। তামিম ইকবাল চোট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় আছেন, নেই লিটন দাসও। হাথুরুসিংহের কথা, ‘টপ অর্ডারে এত বেশি অভিজ্ঞকে হারানো বড় চ্যালেঞ্জ। এটা যে কোনো দলের ক্ষেত্রেই সত্যি। কিন্তু কিছু করার নেই। একজন চোটের সঙ্গে লড়ছে। আরেকজন অসুস্থ। আমাদের দলে এখন যাঁরা আছেন, তাঁদের ওপরই ভরসা রাখতে হবে। আর তাঁরা প্রতিভাবান, সে জন্যই তাঁরা দলে আছেন।’
সম্প্রতি আফগান বোলারদের বিপক্ষে বাংলাদেশের বড় ভরসা হয়ে উঠেছেন লিটন। চট্টগ্রামে দুই দলের সর্বশেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ৭ উইকেটের জয় সহজ হয়েছিল তাঁর ৫৩ রানে। আফগানদের বিপক্ষে চট্টগ্রামেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাওয়া এর আগের জয়টাও এসেছিল ম্যান অব দ্য ম্যাচ লিটনের ১৩৬ রানের সৌজন্যেই।
এনামুল হক এসে যাওয়ায় অবশ্য ওপেনিংয়ে ডানহাতি-বাঁহাতি সমন্বয়ের সুযোগ ফিরেছে। কাল সন্ধ্যায়ও পড়া লাহোরের ভ্যাপসা গরমের মধ্যে নেটে অনেকটা সময় ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন এনামুল। ক্যান্ডিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক অভিষেক হওয়া বাঁহাতি তানজিদ হাসানের জায়গায় ওপেনিংয়ে মোহাম্মদ নাঈমের সঙ্গে আজ তাঁকেই দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আফগানিস্তান ব্যাটিং লাইনআপের কথা চিন্তা করে শেখ মেহেদীর জায়গায় দলে আসতে পারেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ।
আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে হারের কারণ জানতে চাইলে একবাক্যে হাথুরুসিংহের উত্তর হবে—নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে না পারা। যেটা আজও না পারলে টুর্নামেন্ট থেকেই বাংলাদেশের বিদায়ঘণ্টা বেজে যেতে পারে। তবে কোচের বিশ্বাস, বাঁচা-মরার লড়াইয়ে নিজেদের সেরাটাই খেলবেন ক্রিকেটাররা।
ক্যান্ডির অভিজ্ঞতার পর লাহোরে বাংলাদেশ সবচেয়ে কম যেটা নিয়ে ভাবছে, সেটা সম্ভবত গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের উইকেট। ম্যাচের আগে উইকেট নিয়ে বেশি ভাবাটাকেই এখন সমস্যা মনে হচ্ছে দলের কাছে। তবে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের উইকেট নিয়ে আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি কাল সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন, সেটা কিন্তু ভাবনারই বিষয়, ‘লাহোরের উইকেটের সঙ্গে আফগানিস্তানের উইকেটের মিল আছে। আমরা এই ধরনের উইকেটে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলি।’
শহীদির কাছেও বোলিংটাই আফগানিস্তানের শক্তির জায়গা। তবে ব্যাটিং নিয়েও নতুন করে কাজ করার পর এখন আর দলের কোনো জায়গায়ই ফাঁক দেখছেন না তিনি, ‘আমাদের ব্যাটিংয়েও অনেক উন্নতি হয়েছে। ইব্রাহিম, গুরবাজের মতো তরুণেরা আসায় আমাদের ব্যাটিংও এখন শক্তিশালী। গত দুই সিরিজের দুটি ম্যাচে ব্যাটিং ধস হয়েছিল, যেটা নিয়ে আমরা টিম মিটিংয়ে কথা বলেছি। ইনশা আল্লাহ এটার পুনরাবৃত্তি হবে না।’