শ্রীলঙ্কাকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে সব হিসাব নিকাশের ইতি টেনে দিয়েছে নিউজিল্যান্ড
শ্রীলঙ্কাকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে সব হিসাব নিকাশের ইতি টেনে দিয়েছে নিউজিল্যান্ড

ভারত থেকে উৎপল শুভ্র

সেমিফাইনালের আগে তাহলে শুধুই খেলার জন্য খেলা

নাহ্, নিউজিল্যান্ড কাজটা বড় খারাপ করল। এত স্বার্থপর হলে চলে, বিশ্বকাপের বৃহত্তর স্বার্থটা একটু দেখা উচিত ছিল না! 

রাউন্ড রবিন লিগের আরও তিন দিন বাকি, ম্যাচ আছে আরও চারটি। এসব তো এখন নিছকই আনুষ্ঠানিকতা! শুধুই খেলার জন্য খেলা। সেমিফাইনালের চার দল তো চূড়ান্তই হয়ে গেল। শুধু চার দলই না, কে কার সঙ্গে খেলবে, এটাও এখন নিশ্চিন্তে লিখে দেওয়া যাচ্ছে। নাহ্, নিউজিল্যান্ড কাজটা বড় খারাপ করল।

কেইন উইলিয়ামসন দেখতে সন্তের মতো। আচার-ব্যবহার, কথাবার্তাও অনেকটা সে রকমই। 

তবে এমন বুদ্ধিমান মানুষ, রসবোধ তো থাকবেই। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এই অনুযোগ যে রসিকতা, এটা তাঁর বুঝতে না পারার কোনোই কারণ নেই। উইলিয়ামসনকে যতটা চিনি, তাতে তিনি হয়তো বলবেন, ‘কী করব বলুন! সেমিফাইনাল নিয়ে এই অনিশ্চয়তা আর নিতে পারছিলাম না। বিশ্বকাপের উত্তেজনা বজায় রাখার ঝুঁকিটা তাই আর নিইনি।’

প্রথম চার ম্যাচেই জিতে সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রেখেছিল নিউজিল্যান্ড। পরের চার ম্যাচেই হারার পর সেই পা হড়কে যাওয়ার শঙ্কা। যেটি দূর হয়ে গেল কাল বেঙ্গালুরুতে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়ায়। ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধারাভাষ্যে মাইকেল আথারটন পাকিস্তানের করণীয়টা জানিয়ে দিলেন। আগামীকাল ইডেন গার্ডেনে প্রথমে ব্যাটিং করে ৩০০ রান করলে ইংল্যান্ডকে অলআউট করে দিতে হবে ১৩ রানের মধ্যে। আর প্রথমে বোলিং করে ইংল্যান্ডকে ৫০ রানে অলআউট করে দিলেও সেই রান টপকে যেতে সর্বোচ্চ ২.৫ ওভারের বেশি নেওয়া যাবে না।

তা, এ আর এমন কঠিন কী! এটাও যে রসিকতা, তা যদি বলে দিতে হয়, তাহলে সেটি বড়ই বিড়ম্বনা হয়ে যাবে। আথারটন তাৎক্ষণিকভাবে বলেছেন। বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি। কিন্তু পাকিস্তান আগে ব্যাটিং করলে কী করতে হবে, এই অংশটাতে একটু ব্যাখ্যা দরকার। ইংল্যান্ডকে ৫০ রানে অলআউট করে দিলে সেমিফাইনালে উঠতে সেই রান পাকিস্তানকে টপকে যেতে হবে আসলে ২ ওভারে। ২.৫ ওভার বা ১৭ বলের হিসাবটাও ঠিক আছে। তবে তা এমন, স্কোর সমান হয়ে যাওয়ার পর উইনিং শটটা হতে হবে ছক্কা।

না, একটু মনে হয় বাড়াবাড়িই হয়ে যাচ্ছে। রসিকতারও তো একটা সীমা থাকা উচিত। এসব হিসাব-নিকাশ বাদ দিয়ে বরং সেমিফাইনাল লাইনআপটা আপনাদের জানিয়ে দিই। যদিও এরই মধ্যে তা জেনে না যাওয়ার কোনো কারণ দেখছি না।

মার্টিন গাপটিলের (ছবিতে নেই) এই এক থ্রোতেই নিউজিল্যান্ড উঠে যায় ২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে।

গত বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে কোন দুই দল খেলেছিল, মনে আছে? এবারও সেই দুই দলই। উড়তে থাকা স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি নিউজিল্যান্ড। যে নিউজিল্যান্ড আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতের জন্য ‘অপয়া’ দল হয়ে আছে অনেক বছর। ১৫ নভেম্বর মুম্বাইয়ে প্রথম সেমিফাইনাল তাই ভারতের জন্য অনেক হিসাব চুকানোর ম্যাচ।

পরের দিন, অর্থাৎ ১৬ নভেম্বর কলকাতার ইডেন গার্ডেনে দ্বিতীয় সেমিফাইনালের দুই দল অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ও হ্যাঁ, আফগানিস্তানও না ছিল সেমিফাইনালের দৌড়ে! এই আলোচনাই এখন অবান্তর। কারণ, শেষ ম্যাচের আগে পাকিস্তানের নেট রান রেট +০.০৩৬, আফগানিস্তানের -০.৩৩৮। পাকিস্তানের কাজটাকেই যেখানে অসাধ্য বলে মনে হচ্ছে, আফগানিস্তানের সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলা তাই শুধু শুধু সময় নষ্ট।

মাঝপথ পেরোনোর পরই এই বিশ্বকাপে একই সঙ্গে দুটি খেলা চলছে। ওপরে সেমিফাইনালে ওঠার লড়াই। আর নিচে প্রথম আটে থাকার। শুধু অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে ‘টাইমড আউট’ করাটাই এই বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসানের আলোচনায় আসার একমাত্র কারণ নয়। এই বিশ্বকাপ যে ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির কোয়ালিফাইং টুর্নামেন্টও, এটা প্রথম সবার নজরে আনার কৃতিত্বটা বাংলাদেশ অধিনায়কের।

সিদ্ধান্তটা ২০২১ সালে আইসিসির বোর্ড সভাতেই নেওয়া। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলবে আয়োজক পাকিস্তানের সঙ্গে বিশ্বকাপের প্রথম সাত দল। পাকিস্তান প্রথম সাতের মধ্যে থাকলে বিশ্বকাপের ৮ নম্বর দলও। তবে বেশির ভাগ ক্রিকেট বোর্ডই তা মনে হয় ভুলে গিয়েছিল। গত ২৪ অক্টোবর মুম্বাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বাংলাদেশ দলের নতুন এই লক্ষ্যের কথা বলার পর এ নিয়ে শুরু হয় হইচই।

সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসান বলেছিলেন নতুন লক্ষ্যের কথা

কালকের নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের দিকে শুধু পাকিস্তান আর আফগানিস্তানই তাকিয়ে ছিল না, তাকিয়ে ছিল ইংল্যান্ড আর বাংলাদেশও। প্রথম দুই দল শ্রীলঙ্কার জয় চাইছিল, পরের দুই দল বড় ব্যবধানে হার। কাদের চাওয়া পূরণ হয়েছে, তা তো বলার দরকার নেই।

ইংল্যান্ড এখন ৭ নম্বর, এরপর বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। ১০ নম্বর নেদারল্যান্ডস শেষ ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে না দিলে অথবা বৃষ্টিতে ম্যাচটি পরিত্যক্ত না হলে তা হয়তো এমনই থাকবে। শ্রীলঙ্কার ওপরে থাকতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের করণীয়টাও এখন পরিষ্কার। জিততে পারলে তো কথাই নেই, হেরে গেলেও গোহারা না হারলেই চলবে।

উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক। অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাটিং করে ৩০০ করলে বাংলাদেশকে ১২৬ করলেই চলবে। ৪০০ করলে ২২৮। আর আগে ব্যাটিং করে ২০০ রানে অলআউট হলে অস্ট্রেলিয়াকে কমপক্ষে ২২ ওভার ব্যাটিং করাতে হবে।

এটাও কঠিন বলে মনে হচ্ছে? তাহলে আর কী করা! মেনে নিতে হবে, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার যোগ্যতাই নেই বাংলাদেশের।