বাংলাদেশের এটা না ভাবার কোনো কারণ নেই যে টুর্নামেন্টে তারাই সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত। প্রথমবারের মতো দুই দেশ মিলিয়ে হওয়া এশিয়া কাপে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা পাচ্ছে ‘স্বাগতিক’ হওয়ার সুবিধা। আর ভারতের জন্য এই অঞ্চলে খেলা মানেই তো সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত থাকা। স্বাগতিক হলে তো বটেই, স্বাগতিক না হলেও।
কলম্বোতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা দলের ঠিকানা গ্র্যান্ড সিনামন হোটেল। ভারত ব্যতিক্রম বলেই তারা আছে তাদের বরাবরের পছন্দ তাজ সমুদ্র হোটেলে। ভারতীয় চেইন ‘তাজের’ এই হোটেলে দেশের আবহ পায় দলটা।
সর্বশেষ যে বিতর্কে এশিয়া কাপ এখন টালমাটাল, সেটির কেন্দ্রবিন্দুতেও আছে ভারত, সঙ্গে পাকিস্তানও। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে একমাত্র ফাইনাল ম্যাচেই রিজার্ভ ডে থাকার কথা থাকলেও কাল হঠাৎ করেই এসিসি জানাল, রিজার্ভ ডের সুবিধা পাবে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আগামীকালের ভারত–পাকিস্তান ম্যাচও।
রিজার্ভ ডে বিতর্কের মধ্যে পড়ে বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কা আজকের ম্যাচটার রীতিমতো নাই হয়ে যাওয়ার উপক্রম! কাল দুই দলের কোচের ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বেশির ভাগ প্রশ্নই হলো এ নিয়ে। দুই কোচই বললেন, এমন ঘটনা তাঁরা আগে কখনো দেখেননি। বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কা এখন এই ভেবেই সান্ত্বনা পেতে পারে যে ক্রিকেট মানেই তো প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই। কাজেই লড়াই চালিয়ে যাও। বৈষম্যের জবাবও দাও ব্যাটে–বলে।
শ্রীলঙ্কা ঘরের মাঠের সুবিধা পাচ্ছে বলে তাদের প্রতিকূলতা একটু কম, বাংলাদেশের একটু বেশি। ‘সুবিধাবঞ্চিত’ বাংলাদেশের জন্য যেহেতু কেউই কোনো কিছুর থালা সাজিয়ে রাখছে না, প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াইয়ের পরীক্ষায় তাদের নিজেদেরটা নিজেদেরই করে নিতে হবে। আজ আবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদেরই মাঠে সেই চ্যালেঞ্জ বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে দলটার সামনে। নইলে এমনও তো হতে পারত, সুপার ফোরে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচটা খেলল কলম্বোতে আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ লাহোরে।
যখন কিছুই পক্ষে যাবে না, তখন পরিস্থিতি মেনে নেওয়া ছাড়া আর উপায় থাকে না। বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরু সিংহের কথাতেও সেই আত্মসমর্পণের সুর, ‘আমরা দেশের বাইরে খেলছি। দুটি দেশের (পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা) কন্ডিশন আলাদা। আমাদের জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ এবং আমাদের তা সামলে নিতে হবে।’
গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পর কলম্বো কাল রোদঝলমলে দিন পার করেছে। তবে রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময়ই বৃষ্টি এসেছে ঝমঝমিয়ে। মাঠকর্মীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন মাঠ ঢাকতে। বৃষ্টিতে কালকের আগের কয়েক দিনও অবশ্য উইকেট কাভারে ঢাকা ছিল। টানা রোদ না পাওয়ার একটা প্রভাব তাই পড়তেই পারে উইকেটে। কাল অনুশীলনের আগে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে উইকেট দেখে হয়তো সেটাই বোঝার চেষ্টা করছিলেন হাথুরু সিংহে আর নির্বাচক আবদুর রাজ্জাক।
রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের উইকেট শ্রীলঙ্কার সাবেক ক্রিকেটার হাথুরুসিংহের অনেক দিনের চেনা। এ রকম উইকেটে বাংলাদেশের বোলারদের ভালোও করার কথা। তবে গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পর আজ খেলার আগে এর মতিগতি কী দাঁড়ায়, তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে বাংলাদেশ কোচ। উইকেটের সম্ভাব্য আচরণ নিয়ে তাই কোনো মন্তব্যেই গেলেন না। শুধু বললেন, উইকেটটা আজ কতটুকু রোদ পায়, তার ওপর নির্ভর করবে অনেক কিছু। এসব ক্ষেত্রে যা হয়, ম্যাচের একাদশ ঠিক করার জন্য শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে দল। হাথুরুর কথা থেকে নিলে বলতে হয়, ১৭ জনের স্কোয়াডে থাকা প্রত্যেকেরই আজ একাদশে থাকার সম্ভাবনা আছে।
শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কা বরাবরই বাংলাদেশের জন্য কঠিন প্রতিপক্ষ। লাহোরে পাকিস্তানের কাছে হারের পর শেষ দুইয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখার আজকের ম্যাচে সেটা সাকিব আল হাসানের দলের জন্য আরও কঠিন বাস্তব। কারণ, দাসুন শানাকার এই শ্রীলঙ্কা দলটা সর্বেশেষ ১২টি ওয়ানডের সব কটিতেই জিতে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছে। এর মধ্যে বেশ কিছু ম্যাচ অবশ্য আইসিসির সহযোগী দলের বিপক্ষে ছিল। তবে যেই দলের বিপক্ষেই হোক, টানা ১২ ম্যাচ জেতার অর্থ তো একটাই—শ্রীলঙ্কা কোনো ভুল করছে না।
অন্যদিকে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে ৩ নম্বর হয়ে ভারত বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়া বাংলাদেশের জন্য এশিয়া কাপটা খুব ভালো যাচ্ছে না। লাহোরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দারুণ জয় তুলে নিলেও ক্যান্ডি আর লাহোরে তার আগে–পরের ম্যাচে ব্যাটিং হয়েছে খুবই বাজে। দুই ম্যাচেই বাংলাদেশ অলআউট ২০০–এর নিচে।
ওদিকে শ্রীলঙ্কার কোচ ক্রিস সিলভারউড নীতি নিয়েছেন, যেখানে বাংলাদেশ দুর্বল, সেখানেই তাদের চেপে ধরে। অর্থাৎ বাংলাদেশের নড়বড়ে ব্যাটিংটা যেন আজও সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারে, ‘আমাদের নিশ্চিত করতে হবে তারা (বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা) যেন চাপেই থাকে। আমরা জানি তারা রান পাচ্ছে না। তবে আমরা এটাও জানি, তাদের রান করার সামর্থ্য আছে। সেই সম্মানটুকু দিয়েই চেষ্টা করতে হবে তাদের ওপর চাপ ধরে রেখে উইকেট নিতে।’
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে শ্রীলঙ্কার বোলারদের আলাদা পরিকল্পনা সাজানোর কথা জানিয়ে সিলভারউড পূর্বাভাস দিলেন, ঘরের মাঠে আজ নিজেদের সর্বস্ব নিংড়ে দেবেন শ্রীলঙ্কার বোলাররা। একই সঙ্গে তাসকিন–শরীফুলদের প্রশংসাও শোনা গেছে এই ইংলিশ কোচের কণ্ঠে। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চেয়ে যেন বোলিংকেই বেশি ভয় তাঁর।
বাংলাদেশের যেমন বাড়তি ভয় শ্রীলঙ্কার তরুণ পেসার পাতিরানা মাথিশাকে। ক্যান্ডিতে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ৩২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং নড়বড়ে করে দিয়েছিলেন ব্যতিক্রমী বোলিং অ্যাকশনের এই তরুণই। হাথুরু সিংহের কথায় তাই বাড়তি সতর্কতা, ‘মাথিশা যেখান থেকে বল ছাড়ে, সেটা অন্যদের চেয়ে ভিন্ন। এ রকম কিছুর জন্য বেশির ভাগ দলেরই প্রস্তুতি থাকে না। কারণ, এ রকম অ্যাকশনের বোলারের বিপক্ষে খেলার সুযোগ হয় না অনুশীলনেও।’
সব মিলিয়ে প্রতিকূলতার অভাব নেই বাংলাদেশের সামনে। তবে কঠিন ভাবলে বেশি কঠিন, সহজ ভাবলে বরং অনেক কঠিনও সহজ হয়ে যায়। কোচ হাথুরু সিংহের ওই কথাটাই তাই হতে পারে আজ বাংলাদেশ দলের স্লোগান—সবকিছু সামলে নিতে হবে।