ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে মেহেদী হাসান। আজ সেন্ট ভিনসেন্টে
ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে মেহেদী হাসান। আজ সেন্ট ভিনসেন্টে

বাংলাদেশের জয়

শুরুর নায়ক মেহেদী, শেষে হাসান

মাঝের সময়টা খুব বাজে কেটেছে মেহেদী হাসানের। ব্যাট হাতে রান পাচ্ছিলেন না, টানা পাঁচ ম্যাচে ছিলেন উইকেটশূন্য। তাই বিজয় দিবসের সকালে আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে একাদশে থাকবেন কি না, সেটার নিশ্চয়তা দেওয়া যচ্ছিল না।

সাম্প্রতিক ছন্নছাড়া পারফরম্যান্সের ব্যাপার তো ছিলই, সেই সঙ্গে স্কোয়াডে আরেকজন স্পিন অলরাউন্ডার ছিলেন। আরেকজন মেহেদী মানে মেহেদী হাসান মিরাজ, যিনি আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে মিরাজকে বসিয়ে আজ মেহেদীর ওপর আস্থা রাখে টিম ম্যানেজমেন্ট। সেই আস্থার প্রতিদান কী দারুণভাবেই না দিলেন মেহেদী!

সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নস ভেলে আগে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ ৯৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল। এরপর দলে ফেরা শামীম হোসেনের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে মেহেদীর ৪৯ রানের জুটিই বাংলাদেশের সংগ্রহ দেড় শর কাছাকাছি নিয়ে গেছে। ব্যাটিংয়ে ঝড় তুলতে না পারলেও ২৬ রানের ইনিংসটিকে পরিস্থিতি বিবেচনায় মূল্যবানই বলতে হবে।

তবে বল হাতে মেহেদী শুধু ঘাটতিই পুষিয়ে দেননি, সম্ভবত প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছেন। ৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ১৩ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে যা তাঁর ক্যারিয়ারসেরা।

টি–টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করেছেন মেহেদী হাসান। উইকেট উদ্‌যাপনে মধ্যমণি হয়ে ছিলেন তিনি

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের শুরুর দিকে মেহেদীর ঘূর্ণি বিষেই নীল হয়েছেন নিকোলাস পুরান, জনসন চালর্স, রোস্টন চেজ ও আন্দ্রে ফ্লেচারদের মতো ব্যাটসম্যানরা। তাঁদের ব্যর্থতার চাপই গিয়ে পড়ে পরের ব্যাটসম্যানদের ওপর। এরপর অধিনায়ক রোভাম্যান পাওয়েলের মারকাটারি ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয়ের পরিস্থিতি তৈরি করলেও হাসান মাহমুদ তা হতে দেননি।

টি-টোয়েন্টিতে ইনিংসের শেষ দিকে বল করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। কিন্তু হাসান মাহমুদ স্নায়ু চাপ ধরে রেখে শেষ ওভারে যে বৈচিত্র্যময় বোলিং (ওয়াইড ইয়র্কার, স্লোয়ার, স্টাম্প বরাবর লেংথ ডেলিভারি) করলেন, তাতে যেন বুঝিয়ে দিলেন ‘ডেথ ওভার স্পেশালিস্ট’ হওয়ার পথেই আছেন তিনি।

হাসান মাহমুদ আজ দুর্দান্ত বোলিং করেছেন

বাংলাদেশের অন্য দুই পেসারদের মধ্যে তানজিম হাসান ছিলেন বেশ খরুচে। তাঁর ৪ ওভার থেকে ৪৭ রান নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আবার তাসকিন আহমেদ ৪ ওভারে ২৮ রান দিলেও তাঁর তৃতীয় ওভারে ৩ ছক্কায় ২৩ রান নিয়ে ম্যাচটাকে প্রায় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েল। কিন্তু মাত্র ৪.৭০ ইকোনমি রেটে ৩.৫ ওভারে ১৮ রানে ২ উইকেট শিকার করা হাসান বাউন্ডারি খেয়েছেন মোটে দুটি। প্রথম ওভারে মাত্র ১ রান দিয়ে শুরুতে স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ তৈরি করার কাজটা করেছেন তিনিই। আর শেষ ওভারে ১০ রান ডিফেন্ড করতে গিয়ে মাত্র ২ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট, যার একটি বাংলাদেশের জয়ের মাঝে দেয়াল তুলে দাঁড়ানো পাওয়েল (৩৫ বলে ৬০ রান)।

আরও বড় ব্যাপার হলো, অধিনায়ক লিটন দাস যখন-যেভাবে হাসানকে ব্যবহার করেছেন, তখনই ভালো করেছেন। ম্যাচে হাসানকে দিয়ে টানা দুই ওভার না করিয়ে চারটি ভিন্ন পর্যায়ে বোলিংয়ে এনেছেন লিটন। সব পর্যায়েই ওয়স্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখতে পেরেছেন ২৫ বছর বয়সী পেসার।

তাই তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেওয়ার মূল নায়ক মেহেদী হলেও পার্শ্বনায়ক পেসার হাসান। তবে অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ম্যাচসেরার পুরস্কারটা মেহেদীর হাতেই উঠেছে।

৩০ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে খুব বেশি কথা বলেননি। যতটুকু বলেছেন, তাঁর অর্ধেকজুড়ে দিয়েছেন সতীর্থদের কৃতিত্ব, ‘আমরা প্রক্রিয়া ঠিক রেখে সোজা বল করার চেষ্টা করেছি। আমি এর আগেও পাওয়ারপ্লেতে বল করেছি। এই পিচে বল করা বেশ উপভোগ করেছি। শামীম দারুণ ব্যাটিং করেছে। এটা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমি ওর সঙ্গে জুটি গড়ে তুলতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।’

অধিনায়ক লিটনের সঙ্গে মেহেদীর উইকেট উদ্‌যাপন

এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশের টেস্ট ও ওয়ানডে দলে ছিলেন না মেহেদী। তবে রংপুর রাইডার্সের হয়ে গ্লোবাল সুপার লিগে (জিএসএল) খেলতে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকেই আছেন ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে। সেই টুর্নামেন্টে পাঁচ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে রংপুরকে শিরোপা জেতাতে বড় অবদান রেখেছেন মেহেদী। সেই পারফরম্যান্সই তাঁকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে, ‘কিছু দিন আগেই আমি (গায়ানায়) গ্লোবাল সুপার লিগে খেলেছি। এটা আমাকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে।’