ক্যান্ডিতে অনুশীলনে বাংলাদেশ দল
ক্যান্ডিতে অনুশীলনে বাংলাদেশ দল

এশিয়া কাপ

বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কা: ম্যাচের চেয়েও কি বেশি কিছু

অভাবনীয় এক দৃশ্য বটে। মাঠের মাঝখানে পাশাপাশি দুই উইকেটে নেট করছেন বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা, সেটাও কিনা ম্যাচের আগের দিন!

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ম্যাচের আগের দিন দুই দলের এক বেলায় অনুশীলন করাটাই এখন বিরল। এক দল সকালে মাঠে আসে তো আরেক দল বিকেলে। একসঙ্গে পাশাপাশি নেটে অনুশীলন তো কল্পনাই করা যায় না। কাল সকালে পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে আধুনিক ক্রিকেটের সেই বিরল দৃশ্যই চোখে পড়ল।

মূল স্টেডিয়ামের বাইরে নেট অনুশীলনের মাঠেও একই দৃশ্য। এক পাশের তিন নেটে চলছে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন, অন্য পাশের তিন নেটে শ্রীলঙ্কা। নেটগুলোর বোলিং প্রান্তে দুই দলের কোচিং স্টাফ সদস্যরা মিলেমিশে একাকার। বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কার অনুশীলন জার্সি প্রায় একই রঙের বলে মাঝেমধ্যে বুঝতেও সমস্যা হচ্ছিল, কোন নেটে কোন দল।

এমন ‘একতাবদ্ধ’ অনুশীলনের পর সংবাদ সম্মেলনের হাওয়াটা অবশ্য উল্টো দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হলো। বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কা লড়াইয়ে যে গত কয়েক বছরে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ বেড়ে গেছে, এটি এখন একটা ম্যাচের চেয়েও বেশি কিছু, উদাহরণ দিয়ে বললে রীতিমতো ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের কাছাকাছি—বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকার কাছ থেকে এমন সব বক্তব্যেরই অনুমোদন নেওয়ার চেষ্টা হলো সেখানে। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা তো বটেই, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের প্রসঙ্গও হয়ে দাঁড়াল ‘বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কা রাইভালরি’।

প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে শ্রীলঙ্কাও

গত কয়েক বছরে হওয়া দুই দলের মুখোমুখি লড়াইগুলোর ফলাফলই আসলে এমন আলোচনায় জ্বালানি ঢালছে। ২০১৭ সালের মার্চ থেকে যদি ধরেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা ১৩টি ওয়ানডে খেলেছে। ফলাফল না হওয়া একটি ম্যাচ বাদ দিলে বাকি ১২টি ম্যাচে তো বাড়তি প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজই চোখে পড়ে। ৫টিতে জিতেছে বাংলাদেশ, ৭টিতে শ্রীলঙ্কা।

এশিয়া কাপ খেলতে আসার আগে ঢাকাতেও এই প্রসঙ্গ সাকিবের সামনে এসেছে এবং এখানে তাঁর নতুন কিছু বলাটাই হতো অস্বাভাবিক। বিশেষ করে ম্যাচের আগের দিন এসব ‘উসকানি’তে সাড়া দেওয়া মানেই হলো বাড়তি চাপ নিয়ে নেওয়া।

সাকিবও হয়তো ভাবলেন, মনে যেটা আছে (যদি কিছু থাকে), সেটা মনেই থাকুক। সুযোগ পেলে মাঠেই বরং কিছু করে দেখানো যাবে। মুখে তা–ই বললেন, ‘আমি এটাকে বাড়তি প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলব না। এই দুই দল যখন মুখোমুখি হয়, আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলি। এটা দর্শক, ব্রডকাস্টার সবার জন্যই ভালো। আমরা জিততে চাই, ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই।’

একই প্রশ্ন শানাকাকেও করা হয়েছে এবং তিনিও ফাঁদে পা দিলেন না। বিষয়টাকে বাইরের আলোচনা বলে উল্টো বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে যে তাঁদের সম্পর্ক বেশ ভালো, বুঝিয়ে দিতে চাইলেন সেটাই, ‘এটা আসলে বাইরের আলোচনা বলেই মনে হয়। আমাদের দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। তাদের সঙ্গে আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ ভালো। কিন্তু বাইরের ব্যাপার তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।’

সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক দাসুন শানাকা

শানাকার এই কথার সঙ্গে অবশ্য মিল নেই গত এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বোলিং নিয়ে করা তাঁর মন্তব্যের। সাকিব আর মোস্তাফিজুর রহমান ছাড়া বাংলাদেশ দলে বিশ্বমানের কোনো বোলার নেই, আফগানিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ সহজ প্রতিপক্ষ—এসব বলে উত্তেজনার পারদটা তো তিনিই চড়িয়ে দিয়েছিলেন। তবে এখন সেই প্রসঙ্গে একটু যেন রক্ষণাত্মক শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক, ‘শেষবার আমি খারাপ কিছু বলিনি, কিন্তু কথাটা ভাইরাল হয়ে গেছে। তাদের প্রতি আমাদের সম্মান আছে। বিষয়টা কে কীভাবে নিচ্ছে, তার ওপরই সব নির্ভর করে।’

লড়াইয়ের ভেতর লড়াইয়ের প্রসঙ্গ বাদ দিলেও আজকের বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কা ম্যাচের অন্য একটা মেজাজ আছে। শ্রীলঙ্কা এশিয়া কাপের ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন, অন্যদিকে বাংলাদেশ তিনবার ফাইনালে উঠেও ট্রফি ছুঁয়ে দেখতে পারেনি। সর্বোচ্চ সাতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ধরতে এবারও শিরোপায় চোখ থাকবে এশিয়া কাপের সহ–আয়োজক শ্রীলঙ্কার।

অন্যদিকে বাংলাদেশও চাইবে বিশ্বকাপের বছরে এশিয়া কাপে যতটা সম্ভব ভালো খেলে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিতে। সাকিবের কথায়ও সেটিরই প্রকাশ, ‘টি–টোয়েন্টিসহ গত ৪–৫টি এশিয়া কাপে আমরা ভালো করেছি। তিনটা ফাইনাল খেলেছি। এই টুর্নামেন্টে আমরা ধারাবাহিকভাবেই ভালো খেলছি।’

সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে নামার আগেই চোটের ধাক্কা বাংলাদেশ দলে। পেসার ইবাদত হোসেন তো আগে থেকেই দলে নেই। ওদিকে জ্বরে পড়ে লিটন দাসও বেরিয়ে গেছেন দল থেকে। তাঁর পরিবর্তে কাল রাতেই দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা ছিল এনামুল হকের।

লিটন দাসের জায়গায় ডাক পেয়েছেন এনামুল হক

একই সমস্যায় আক্রান্ত শ্রীলঙ্কাও। চোট–আঘাতের কারণে দলে নেই চার নিয়মিত ক্রিকেটার—লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, পেসার দুষ্মন্ত চামিরা, লাহিরু মাদুসানকা ও লাহিরু কুমারা। এ ছাড়া ফ্লুতে আক্রান্ত দুই বছর পর দলে ফেরা কুশল পেরেরাও।

এতে দুই দলেই একটা স্বয়ংক্রিয় ভারসাম্য চলে এসেছে। অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে বরং বাংলাদেশই কিছুটা এগিয়ে। কিন্তু সব মিলিয়ে এশিয়া কাপের ছয়বারের চ্যাম্পিয়নদের যে ঘরের মাঠে হারানোটা বড় কঠিন, সেটা কে না জানে! এ ক্ষেত্রে অবশ্য শানাকার একটা কথাই বাড়তি প্রেরণা হতে পারে বাংলাদেশের জন্য।

তা কী বলেছেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক? বলেছেন, বাংলাদেশ যে এখন এশিয়া কাপ বা বিশ্বকাপ কোনোটাই জেতেনি, সেটা দুর্ভাগ্যজনক। তা এবার তো এক বছরে এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ দুটিই আছে। হয়তো অসম্ভব কল্পনাই, তবু ‘ডাবল’ জয়ের স্বপ্ন নিয়েই শুরু হোক না বাংলাদেশের এশিয়া কাপ!