হাসান তিলকারত্নের ক্যারিয়ারের শুরুতে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের ‘ছোট দল’ হিসেবেই পরিচিত ছিল। কিন্তু ২০০৪ সালে যখন তিলকারত্নে অবসর নেন, তত দিনে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট–বিশ্বের পরাশক্তি। দেশের হয়ে ৮৩ টেস্ট খেলা তিলকারত্নের ক্যারিয়ারের গল্পও অনেকটা শিকড় থেকে শিখরে ওঠার মতো। এখন তিনি শ্রীলঙ্কা নারী দলের প্রধান কোচ। প্রথম আলোর সাক্ষাৎকারে সেই তিলকারত্নে শুনিয়েছেন তাঁর ক্যারিয়ারের গল্প, শ্রীলঙ্কা নারী দল নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা—
এক বছর হয়ে গেল শ্রীলঙ্কার মেয়েদের দলের সঙ্গে আছেন। কেমন পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন?
হাসান তিলকারত্নে: শুরুতে কিছুটা চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু এখন উপভোগ করছি। খুব আশাবাদী, ৬-৮ মাসের মধ্যে তারা আরও ভালো করবে। আমাদের ক্রিকেটের প্রক্রিয়াটা ভালো। সে জন্য ওরা দ্রুত উন্নতি করতে পারছে।
লঙ্কান ছেলেরা এশিয়া কাপ জিতেছে। মেয়েরা পারবে?
তিলকারত্নে: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট পুরোপুরি ছন্দনির্ভর। ছেলেরা এশিয়া কাপ জয়ের পর দেশের সবার মুখে হাসি এনে দিয়েছিল। আমাদেরও সেই জয় অনুপ্রাণিত করেছে। আশা করি, ভালো কিছুই হবে।
আপনার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুর গল্পটা জানতে চাই। তখন শ্রীলঙ্কা দলটা এতটা শক্তিশালী ছিল না।
তিলকারত্নে: আমরা আসলে সিনিয়রদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। তারা খেলার সব কৌশলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। আমি খুব গর্ব করে বলি, রঞ্জন মাদুগালে, দিলীপ মেন্ডিসের অধীনে খেলেছি। খেলাটা তাদের কাছে শিখেছি। এরপর উন্নতি করেছি। আমরা নিজেরাই একজন আরেকজনের ভুল শুধরে দিতাম। এভাবেই বড় হওয়া।
আশির দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেমন নতুন ধারার ক্রিকেট নিয়ে এসেছিল, নব্বইয়ের শ্রীলঙ্কাও...
তিলকারত্নে: শ্রীলঙ্কার একটা নিজস্বতা ছিল। মনে আছে, ১৯৯৫ সালে সিডনিতে আমরা প্রথম তিনটা ম্যাচ হেরে যাই। এরপর সনৎ জয়াসুরিয়ার সঙ্গে কালুভিথারানাকে ইনিংস উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই পরিবর্তন সবার জন্য চমক হয়ে এসেছিল। আমরা সফলও হয়েছিলাম। এখন দেখবেন আমাদের সেই কৌশলই অনেকেই অনুকরণ করছে।
এখন ক্রিকেট নিয়ে অনেক বিশ্লেষণ, দায়িত্ব ভাগাভাগি হয়। শ্রীলঙ্কা সেই নব্বইয়ের দশকেই ওয়ানডে ক্রিকেটে এসব ধারণা নিয়ে এসেছে।
তিলকরত্নে: হ্যাঁ, এখন সবাই সেটাই কপি করছে। আমরা জানতাম কার দায়িত্ব কী। ওই দায়িত্বটা পালন করার আত্মবিশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল। ব্যর্থ হলেও জায়গা হারানোর ভয় থাকত না। আর আমরা একসঙ্গে খেলেছি অনেক বছর। আমরা ছিলাম একটা পরিবার। ব্যর্থতা, সাফল্য, যাই হোক—সব সময় এক থাকতাম। ওই একতাই আমাদের চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছে।
বিশ্বকাপ জেতার পর নিশ্চয়ই আপনার জীবন বদলে গেছে।
তিলকারত্নে: আমরা এক রাতের মধ্যে তারকা হয়ে গিয়েছিলাম। দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছিল। আগে কোনো চাপই ছিল না। আমরা এরপর কীভাবে ধারাবাহিকভাবে জিততে হয়, সেটা বুঝে যাই। আমাদের জ্ঞান বেড়েছে, দক্ষতা তো ছিলই। আমরা সেই জ্ঞান পরবর্তী প্রজন্মের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছি।
জ্ঞান ভাগাভাগির কথা বলছেন। একটু ব্যাখ্যা করবেন?
তিলকারত্নে: এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই যে আমাদের ছেলেদের দলটা দেখুন। ওরা ছয় মাস আগেও জয়ের দেখা পাচ্ছিল না। কিন্তু ওদের দক্ষতা ছিল যথেষ্ট। এখন খেলতে খেলতে জ্ঞান বেড়েছে। দলও ম্যাচ জিতছে। এশিয়া কাপের ফাইনালের কথা যদি বলি, ছয় মাস আগে ওরা ৫০ রানে ৫ উইকেট হারালে ১১৫ রানে অলআউট হতো। কিন্তু ওই ম্যাচের পরিস্থিতি সামলানোর যে জ্ঞান, সেটা সমৃদ্ধ হওয়ায় এখন ওরা জিততে পারছে। আমি নিশ্চিত এই দল অনেক দূর এগোবে।
এই যে জ্ঞান ভাগাভাগি করা, এটাই কি শ্রীলঙ্কাকে অন্যান্য ক্রিকেটীয় সংস্কৃতি থেকে আলাদা করে?
তিলকারত্নে: হ্যাঁ, আমরা খেলাটাকেই দেখি ভিন্নভাবে। এটা ধরে রাখতে হবে আমাদের। ভাগ্য ভালো, অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার উঠে আসে আমাদের প্রক্রিয়া থেকে। অজন্তা মেন্ডিস কী করেছে দেখেছেন। এখন মহীশ তিকশানা ঠিক মেন্ডিসের মতোই বল করে। থিসারা পেরেরা ডানহাতি ব্যাটসম্যান ছিল। সনাৎ জয়সুরিয়াকে দেখে সে বাঁহাতি হয়ে যায়।
ওয়ানডে ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে অনেক। যে সংস্করণে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন, সেই সংস্করণটার ভবিষ্যৎ কোন দিকে যেতে পারে?
তিলকারত্নে: আমি কখনো টি-টোয়েন্টি খেলিনি। তবে সংস্করণটা বিনোদনদায়ী। মানুষ পছন্দ করছে। স্পনসররা আসছে। তবে টেস্ট ক্রিকেট সব সময় থাকবে, এটা বিশ্বাস করি। ওয়ানডের আবেদনও কিন্তু কমছে না। আমার মনে হয়, তিন সংস্করণেরই সেরা সময় সামনে পড়ে আসছে।