ভারতের বিপক্ষে গতকালের ম্যাচে ব্যাটিং দিয়ে পাকিস্তানের কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরামের নজর কেড়েছেন বাংলাদেশের ওপেনার তানজিদ হাসান। বাঁহাতি এই ওপেনারের কাছে এখন ধারাবাহিকতা চান ওয়াসিম আকরাম। এমন একজন ব্যাটসম্যানকে বাংলাদেশ দলে অন্তর্ভুক্ত করায় প্রশংসা করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নির্বাচকদের।
বিশ্বকাপের ঠিক আগ দিয়ে তামিম ইকবাল–বিতর্কে জেরবার ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। তানজিদ হাসান মূলত বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়েছেন তামিম ইকবালের জায়গাতেই। ঘটনাচক্রে তানজিদের ডাক নামও ‘তামিম’। ২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাতে অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপজয়ী বাংলাদেশ দলের ওপেনার তানজিদ নিজের যোগ্যতা দিয়েই দলে ঢুকেছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপের প্রথম তিন ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। কিন্তু গতকাল পুনেতে ভারতের বিপক্ষে খেলেছেন ৪৩ বলে ৫১ রানের ইনিংস। ৪ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কার ইনিংসটি খেলেছেন যশপ্রীত বুমরা, শার্দূল ঠাকুর, মোহাম্মদ সিরাজদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেই।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তানজিদের প্রথম ফিফটির (৫১) এই ইনিংসে আছে মনোমুগ্ধকর কিছু মুহূর্ত। বিশেষ করে যশপ্রীত বুমরার বাউন্সারে হুক করে ছক্কাটা তো অনেকেরই দীর্ঘদিন মনে থাকবে। শার্দূল ঠাকুরের পরপর তিন বলে ৬, ৪ ও ৬! তানজিদের ইনিংসটি ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে পোর্ট অব স্পেনে সেই জয়ের ম্যাচে খেলা তামিম ইকবালকে ভীষণভাবেই মনে করিয়ে দিয়েছে। যদিও এমন চমৎকার ইনিংসটিকে আর বড় করতে পারেননি তানজিদ। ‘চায়নাম্যান’ কুলদীপ যাদবের বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে পা দিয়ে আউট হন।
ওয়াসিম আকরাম খুশি তানজিদ নিজেকে মেলে ধরতে পারায়। বাঁহাতি এই কিংবদন্তি পেসার তানজিদকে ‘দারুণ প্রতিভাবান’ হিসেবেই বলেছেন। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেল ‘এ স্পোর্টসে’ বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। সেখানে একই ভূমিকায় আছেন পাকিস্তানের আরও তিন তারকা—মঈন খান, শোয়েব মালিক ও মিসবাহ–উল–হক। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ শেষ হওয়ার পর আলোচনায় তানজিদের প্রসঙ্গে ওয়াসিম বলেন, ‘তানজিদ অবশেষে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছে। এখন দরকার তার ধারাবাহিকতা। খুবই প্রতিভাবান ক্রিকেটার সে। আমি তো এমন এক প্রতিভাকে দলে নেওয়ায় বাংলাদেশের নির্বাচকদের কৃতিত্ব দেব।’
আকরামের ভাষায়, ‘পাঁচ–ছয় ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটিতে সে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছে। দিনটা তার ছিল। সে ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম অর্ধশতক পেয়েছে। এই ম্যাচের পর সবাই বুঝতে পেরেছে তার প্রতিভা আছে। সে নিজের যোগ্যতাবলেই দলে সুযোগ করে নিয়েছে। তার আরও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। অবশ্যই সেটির জন্য তাকে বেশি ম্যাচ খেলতে হবে।’ সর্বকালের সেরা বাঁ হাতি পেসারের সঙ্গে তানজিদের প্রশংসায় মেতেছিলেন মিসবাহ–উল–হকও। তানজিদের আত্মবিশ্বাস দেখে মিসবাহও মুগ্ধ, ‘তানজিদের আত্মবিশ্বাস ভালো লাগল। ভালো লেংথের বলও মেরেছে। তাকে এখন ইনিংস বড় করা শিখতে হবে। পঞ্চাশকে শতকে পরিণত করতে শিখতে হবে।’
তানজিদের প্রসঙ্গে লিটন দাসের অবশ্য কড়া সমালোচনা করেছেন আকরাম। লিটন কাল ৬৬ রানে থাকতে যে শট খেলে আউট হয়েছেন, সেটির কোনো দরকারই ছিল না বলে মনে করেন আকরাম, ‘তরুণেরা তো সিনিয়রদের দেখেই শিখবে। লিটন দাস অনেক দিন ধরেই খেলছে। সে বাংলাদেশ দলের অন্যতম সিনিয়র খেলোয়াড়। কিন্তু সে কাল যে সময় আউট হয়েছে, যে শট খেলে আউট হয়েছে, সেটার কোনো দরকারই ছিল না। পরিস্থিতিও অমন শট খেলার উপযোগী ছিল না। তাঁর উচিত ছিল অমন শট না খেলে দেখে শুনে ব্যাটিং করে যাওয়া।’