বাকি ছিল এটাই। এই টেস্টে যার খেলারই কথা ছিল না, তিনিও যদি কিছু করে দেখান!
৩৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সেটাই করে দেখালেন চোট থেকে ফেরা তাসকিন আহমেদ। চতুর্থ দিনে টেস্টটা যে মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই শেষ, সেই কৃতিত্বের অনেকটাই তাসকিনের। কাল আফগানিস্তানের যে ২ উইকেট পড়েছিল, তার মধ্যে তাসকিন নিয়েছিলেন একটি। আজ আরও ৩ উইকেট নিয়ে বলতে গেলে তিনিই আফগানদের থামিয়ে দিলেন ১১৫ রানে। কাল ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানকে ফেরানো আরেক পেসার শরীফুল ইসলাম আজ নিয়েছেন ২ উইকেট।
তাসকিনের চরিত্রটাই এমন যে, যা পান তাতেই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করেন। তবে আজ নিশ্চিতভাবেই ৪ উইকেট নিয়েও অতৃপ্তি আছে তাঁর। টেস্টে নিজের প্রথম ৫ উইকেট পাওয়ার অর্জনটা যে শুধু সুবাস ছড়িয়েই হারিয়ে গেল!
আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসের ৩৩তম ওভারে বোলিং করছিলেন তার আগেই ৪ উইকেট পাওয়া তাসকিন। ওভারের প্রথম বলে জহির খানের হাতে চার খেলেও পরের বলেই সেই চেনা দৃশ্য— শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পাখির মতো ডানা মেলে ওড়ার চেষ্টা তাসকিনের। জহিরের বিরুদ্ধে কট বিহাইন্ডের আবেদনে সাড়া দিয়ে দিয়েছেন আম্পায়ার। তাসকিনের পাখির মতো ওড়ার চেষ্টাটা তাই ছিল টেস্টে প্রথম ৫ উইকেট পাওয়ার আনন্দে।
কিন্তু জহির রিভিউ নিলে দেখা যায় বল তাঁর ব্যাটে তো লাগেইনি, গেছেও অনেকটা দূর দিয়ে। পরের বলে আরও একবার ভাগ্য হাসল তাসকিনের দিকে চেয়ে এবং চকিতে উধাও সেই হাসিও। তাসকিনের ফুলটস ডেলিভারিতে বোল্ড জহির। তাসকিন আবারও আনন্দে উদ্বাহু। কিন্তু ওদিকে যে কোমর উচ্চতায় ছোড়া বলের জন্য ‘নো’ ডেকে বসেছেন আম্পায়ার! তাসকিনের আরও একটি ৫ উইকেটের আনন্দ তাই বৃথাই গেল।
কাঙ্ক্ষিত সেই পঞ্চম উইকেটটি তাসকিনের শেষ পর্যন্ত পাওয়া হয়নি। তবে তিনি যেন ভাবলেন—এই উইকেট আমি যখন পাব না, কাউকেই দেব না। ওভারের শেষ বলটা গিয়ে আঘাত করল জহিরের কনুইতে। সে আঘাতে তিনি এতটাই ব্যথা পেলেন যে, অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদীর পর দলের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ‘আহত অবসর’ হয়ে মাঠই ছেড়ে গেলেন। আফগানদের দ্বিতীয় ইনিংস সেখানেই শেষ।
একমাত্র টেস্টে ৫৪৬ রানের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ, রানের হিসাবে যেটা কিনা টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়ই। আর টেস্টের ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম।
এই টেস্টে আসলে শুধু টসটাই জিতেছে আফগানিস্তান। নইলে মিরপুর টেস্টের বাকি সব জয় বাংলাদেশের, সব খেলাও বাংলাদেশই খেলেছে বলা যায়। আফগানিস্তান যেন হয়ে থাকল শুধুই বাংলাদেশের জয়ের উপলক্ষ!
এর আগে দুই দলের মধ্যে হওয়া একমাত্র টেস্ট ম্যাচে আফগানিস্তান জিতলেও এবার শুরু থেকেই সে সম্ভাবনার পালে হাওয়া তেমন ছিল না। রশিদ খান বিহীন আফগানিস্তান দলটা বয়সে তরুণ এবং অনভিজ্ঞ। শুধু ফলাফলে চোখ না রেখে বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তাই মাঠে নামলেন বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিকল্পনা নিয়ে। যার সবগুলোতেই তিনি একশতে এক শ পেয়ে উত্তীর্ণ।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার তালিকায় ওপরের দিকে ছিল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সবুজ উইকেট বানিয়ে ঘরের মাঠেই পেসারদের ভিন্ন কন্ডিশনে খেলার সুযোগ করে দেওয়া। তামিম ইকবালের চোট সুযোগ করে দেয় ওপেনিংয়ে মাহমুদুল হাসানকেও একবার দেখে নেওয়ার। প্রথম ইনিংসে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে মাহমুদুলও দেখিয়ে দিয়েছেন, টেস্ট ক্রিকেট থেকে এক বছরের বিরতি তাঁর সামর্থ্যে তেমন মরিচা ফেলেনি।
ম্যাচের দু্ই ইনিংসেই নাজমুলের সেঞ্চুরি, দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ১২১ রানের ইনিংসে মুমিনুলও উদ্যাপন করেছেন তাঁর ফিরে পাওয়া ফর্মের আনন্দ। তবে কোচের পরিকল্পনা সফল করে দুই ইনিংসেই আসল কাজটা করেছেন বাংলাদেশের পেসাররা।
প্রথম ইনিংসে আফগানিস্তানকে ১৪৬ রানে অলআউট করতে বড় ভূমিকা ছিল ইবাদত হোসেনের ৪ উইকেটের। আরেক পেসার শরীফুল নেন ২ উইকেট। আর দ্বিতীয় ইনিংসে তাসকিন, শরীফুল মিলে নেওয়া ৭ উইকেটের সঙ্গে ইবাদতের একটি মিলিয়ে পেসাররাই নিয়েছেন ৮ উইকেট। ওদিকে প্রথম ইনিংসে অভিষিক্ত আফগান পেসার নিজাত মাসুদের ৫ উইকেটের কথা মনে রাখলে তিন সেঞ্চুরির এই টেস্টটাকে আসলে বলতে হবে পেসারদেরই টেস্ট।
অবশ্য এটাও ঠিক যে ব্যাটসম্যানদের সুবাদেই দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৬২ রানের বিশাল লক্ষ্য দিতে পেরেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ২৩৬ রানের লিড, দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ৪২৫ রান করে ছুড়ে দেওয়া অমন লক্ষ্যই বেশি সহজ করে দিয়েছে বোলারদের কাজ।
হাথুরুসিংহের সঙ্গে তাই একশতে এক শ পেয়ে উত্তীর্ণ পেসাররাও।