মেয়েদের টি-টোয়েন্টিতে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া, ভারত আছে তিনে। আর বাংলাদেশ ৮ নম্বরে। স্বাভাবিকভাবেই ঘরের মাঠে পরপর হওয়া বড় এই দুই দলের সঙ্গে সিরিজ জয়ের প্রত্যাশা হয়তো বাংলাদেশের ছিল না। তারপরও বাংলাদেশ নারী দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ঘিরে হতাশাটা মূলত তাদের খেলার ধরনের কারণেই। ন্যূনতম লড়াইটাই যে করতে পারছে না নিগার সুলতানার দল!
ব্যাটিংয়ে টপ অর্ডার থেকে রান আসছে না, মিডল অর্ডারও ধারাবাহিক নয়। শেষ কয়েক ম্যাচে বোলিং-ও মেটাতে পারছে না প্রত্যাশা। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ধবলধোলাই হওয়ার পর ভারতের সঙ্গেও এখন একই ফলের শঙ্কা। আগামীকাল সিরিজের শেষ টি–টোয়েন্টি ম্যাচের আগে যে ফলটা ৪-০! অথচ শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে টানা চার সিরিজে অন্তত ১টি করে ম্যাচ জিতে এ সিরিজ দুটিতে নেমেছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে তো জিতেছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরাই।
বিসিবির উইমেনস উইংয়ের প্রধান হাবিবুল বাশার দলের এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সের কোনো কারণই খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে প্রত্যাশার চাপ একটা কারণ হলেও হতে পারে বলে মনে করেন জাতীয় দলের এই সাবেক অধিনায়ক, ‘এটা একটা ব্যাপার তো অবশ্যই। এই সিরিজগুলোর আগে মেয়েদের খেলা সেভাবে অনুসরণ করা হতো না। এত প্রত্যাশার চাপ নিয়ে তারা খেলেনি। টিভিতে দেখানো হচ্ছে, স্পনসর আসছে, মেয়েদের খেলা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। যেটা হওয়া উচিত-ও। মেয়েদের ক্রিকেট একটা নতুন ধাপে পা দিচ্ছে।’
তবে হাবিবুল মনে করিয়ে দিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো করতে হলে এসবকে সঙ্গী করেই এগোতে হবে, ‘সামনে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ। সেখানে তো আরও বড় চাপ থাকবে। প্রত্যাশার চাপের মধ্যেই ভালো করতে হবে।’ সে জন্য আলাদা করে কাজও করা হচ্ছে বলে জানালেন তিনি, ‘মেয়েদের মানসিক দিক দিয়ে অনেক সমর্থন দেওয়া হচ্ছে। মনোবিদের সেশনও করানো হচ্ছে। ওরা যেন নির্ভার হয়ে খেলতে পারে, তার জন্য সব চেষ্টাই ম্যানেজমেন্ট করছে।’
বাংলাদেশ নারী দল একটা পালাবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অভিজ্ঞ কিছু ক্রিকেটার এখন দলে নেই। বড় দলের মুখোমুখি হতে নতুনেরাও এখনো মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে উঠেননি। বর্তমান পারফরম্যান্স হতে পারে সেটিরও প্রতচ্ছবি। হাবিবুল অবশ্য আশাবাদী, ‘এই দলটিকে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় দিলে তারাও অনেক ভালো করবে।’
গত ফেব্রুয়ারিতে মেয়েদের ক্রিকেটের দায়িত্ব নিয়েছেন হাবিবুল বাশার। এই কয় দিন মেয়েদের ক্রিকেটের সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতায় তাঁর মনে হচ্ছে, সবার আগে ব্যাটিংয়ের শক্তি আর ফিটনেস বাড়ানোটাই জরুরি। সঙ্গে গুরুত্ব দিচ্ছেন সরবরাহের সারিতে নতুন খেলোয়াড় বাড়ানোর প্রতিও, ‘আমি আসলে তাকিয়ে আছি পরের ঘরোয়া টুর্নামেন্টের (ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ) দিকে। তাহলে কিছু খেলোয়াড় পাব। পাইপলাইনে খেলোয়াড় বাড়ানোর বিকল্প নেই।’
অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে সিরিজ দুটি যেন খুব স্পষ্ট করে দিয়েছে ক্রিকেট উন্নত দেশের নারী দলগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের মেয়েদের পার্থক্য। সেই পর্যায়ে যেতে নিগার–নাহিদাদের অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে বলে মনে করছেন হাবিবুল, ‘অন্য দলগুলো অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। এবার অস্ট্রেলিয়া আর ভারতকে খুব কাছ থেকে দেখলাম। ফিটনেসের দিক দিয়ে তারা অনেক ভালো। স্কিলের দিক দিয়েও অনেক উন্নতি করেছে। আগের ভারত দল আর এবারেরটি অনেক আলাদা। তাদের সমকক্ষ হতে হলে আমাদের অনেক উন্নতি করতে হবে। একটা সিরিজের বিচ্ছিন্ন পারফরম্যান্স দেখিয়ে লাভ নেই।’