নিউজিল্যান্ড দলের কোচিং স্টাফদের কারও হাতে সাইডআর্ম নেই। প্রত্যেকের এক হাতে রাগবি গ্লাভস, যা দিয়ে বল থামানোর চেষ্টা করছেন; আরেক হাত দিয়ে স্পিন বোলিংয়ের চেষ্টা। ‘চেষ্টা’ শব্দটা ব্যবহার করার কারণ আছে। লুক রনকি, জ্যাকব ওরামরা তো বল ঘোরানোর কথা নয়। একজন ছিলেন উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান, আরেকজন তাঁর সময়ের সেরা পেস বোলিং অলরাউন্ডারদের একজন। স্পিন বোলিংয়ের কাজটা তাঁদের কখনো করতে হয়নি। কোচিংয়ে আসার পর সাইডআর্মটাই বেশি ব্যবহার করেছেন, যা দিয়ে গতিময় বোলিংই সম্ভব, স্পিন নয়।
কোচিং স্টাফদের মধ্যে সাকলায়েন মুশতাকও আছেন। তাঁর পরিচয়টা আলাদা করে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে ৪৬-এর সাকলায়েনের শরীরটা এখন আর খেলোয়াড়সুলভ নয়। কিন্তু নেটে তিনি নিয়মিতই হাত ঘোরান। আজও তিনি নিউজিল্যান্ড দলের ব্যাটসম্যানদের স্পিন-পরীক্ষা নিচ্ছিলেন। সিলেট টেস্ট হারের পর ৬ ডিসেম্বর মিরপুর টেস্টের আগে এখন নিউজিল্যান্ড দলের ব্যাটসম্যানদের স্পিনের পাঠটাই বেশি দরকার। মিরপুর স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে আজ নিউজিল্যান্ড দলের অনুশীলনে সেই চেষ্টাই করছিলেন দলটির কোচরা।
আর শুধু নিউজিল্যান্ডের কোচিং স্টাফরা কেন, পুরো নিউজিল্যান্ডেই যেন স্পিনারের হিড়িক পড়েছে। ইশ সোধি, এজাজ প্যাটেল, গ্লেন ফিলিপস, মিচেল স্যান্টনার তো আছেনই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুতে অফ স্পিন করা কেইন উইলিয়ামসনও হাত ঘুরিয়েছেন। মাঠে আসা সাংবাদিকদের অবাক করেছে হেনরি নিকোলসের বোলিং। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কখনো বোলিং করেননি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, লিস্ট ‘এ’ ও ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে সব মিলিয়ে ৬ ম্যাচে বোলিং করে কখনো উইকেটের দেখা পাননি।
আজ তাঁকে টম ল্যাথামের নেটে বল করতে দেখে কিউইদের অনেকেই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসছিলেন। পুরো নেট সেশনে একজন পেসারই বোলিং করেছেন। তিনি হলেন নিল ওয়াগনার। সাউদি-জেমিসনরাও বোলিং না করে উল্টো স্পিনের বিপক্ষে ব্যাটিং করেছেন।
মিরপুর টেস্টের আগে স্পিন যে কিউইদের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হয়ে উঠেছে, তা বুঝতে ক্রিকেট–বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। সিলেট টেস্টে নিউজিল্যান্ডের ২০ উইকেটের ১৮টি নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসান। সিলেটের উইকেট স্পিন–স্বর্গও ছিল না। তাতেই যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে মিরপুরে কী হবে?
অতীত রেকর্ড বলে, মিরপুর তাইজুলদের সাহায্য বাড়িয়ে দেবে। সেটা হয়তো প্রথম দিন থেকেই। নিউজিল্যান্ড দল সে জন্য প্রস্তুত তো? মিরপুরের উইকেট দেখার পর নিউজিল্যান্ডের স্পিনার সোধির উপলব্ধি, ‘বাতাস অনেকটাই ভেজা মনে হচ্ছে। এখানে বৃষ্টি হয়েছে কি না, কে জানে। আমি নিশ্চিত নই। তবে মাটি অনেকটাই ভেজা মনে হচ্ছে। উইকেটে কিছুটা ঘাস থাকতে পারে। উইকেট আঠালো হতে পারে। আগামীকাল সময় আছে আমাদের। দেখি কী হয়।’
সিলেট টেস্টে বাংলাদেশ দলকে দেখে কিউইরা অনেক কিছুই শিখেছে, এমনটাই দাবি সোধির, ‘সিলেট টেস্ট ম্যাচটা আমাদের জন্য কঠিন অভিজ্ঞতা ছিল। তবে টেস্টটা যত এগিয়েছে, আমার মনে হয়েছে, আমরা ততটাই মানিয়ে নিতে পেরেছি। তবে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা যেভাবে খেলেছে, তা আমাদের ম্যাচে ফেরার কোনো সুযোগই দেয়নি। ওদের খেলা আমাদের জন্য ব্লুপ্রিন্ট হতে পারে। এই কন্ডিশনে কীভাবে খেললে সফল হওয়া সম্ভব, সেটা দেখিয়ে দিয়েছে। আশা করি, সেটা আমরা পরের টেস্ট ম্যাচে কাজে লাগাতে পারব।’