ক্রিকেট এত নিষ্ঠুর কেন!
এক ম্যাচে এত কীর্তি গড়লেন। আইপিএলে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির নিজের রেকর্ডটাই আরও সমৃদ্ধ করেছেন, পেয়েছেন অষ্টম সেঞ্চুরি, যা আবার সর্বশেষ ৭ ম্যাচের মধ্যে তৃতীয়। গতকাল রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে বিরাট কোহলি রান করেছেন দলের ৬২ শতাংশ। মানে দলের ১৮৩ রানের ১১৩-ই তাঁর।
তবে এত কিছুর পরও সিদ্ধি লাভ আর হয়নি। হেরেছে কোহলির দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। সেঞ্চুরি করেও এ নিয়ে আইপিএলে তিনবার হারতে হলো কোহলিকে। এখন গতকালের হারের দায়ও কিছুটা নিতে হচ্ছে কোহলিকে। অন্তত অনেকেই সেটা মনে করছেন। ওই যে প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়েছে—ক্রিকেট নিষ্ঠুর!
দায় কোহলির গায়ে কেন পড়ছে? কারণ, আইপিএলে এটিই মন্থরতম সেঞ্চুরি। ১০০ রান করতে খেলেছেন ৬৭ বল, আইপিএলের ইতিহাসে যা যৌথভাবে মন্থরতম শতক। তিন অঙ্কে যেতে ৬৭ বল খেলার আগের রেকর্ডটি মনিষ পান্ডের—২০০৯ আইপিএলে, এই বেঙ্গালুরুর হয়েই।
৩৯ বলে ফিফটি করা কোহলি গতকাল সেঞ্চুরি পান ১৯তম ওভারে। সেঞ্চুরির জন্য সেই ওভারে কিছুটা বাড়তি সতর্কও থেকেছেন তিনি। এই যেমন ১৯তম ওভারের প্রথম বলটা। কোহলি তখন ব্যাট করছিলেন ৯৮ রানে, নন্দ্রে বার্গারের ফুলটসে তিনি বড় শট খেলতে চাইলেন না। গ্যাপ খুঁজে সেঞ্চুরিই বোধ হয় লক্ষ্য ছিল। তবে বল গেল সোজা কাভার ফিল্ডারের হাতে, ডট বল। সেই ওভারের চতুর্থ বলেও ফুলটসে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে মেরে এক রান নেন কোহলি, পান সেঞ্চুরি। কোহলির সেঞ্চুরি পাওয়া না পাওয়ার মধ্যে সেই ওভারে বার্গার রান দেন মাত্র ৪।
বর্তমানে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশেষ করে আইপিএলে প্রতিটি বলই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ডেথ ওভারে তো কিছু বল খেলার জন্যই অনেকে ক্রিজে আসেন। ধরে নিতে পারেন, তাঁরা সবাই ডেথ ওভার ব্যাটিং বিশেষজ্ঞ। রাজস্থানের রাহুল তেওয়াতিয়া কিংবা বেঙ্গালুরুর দীনেশ কার্তিক, তাঁদের কাউকেই বড় ইনিংস খেলার জন্য দলে নেওয়া হয়নি! তাঁদের কাজ একটাই—শেষে গিয়ে প্রতিটি বল কাজে লাগানো। সেটা হতে পারে ৪ বা ৫টি বলও। তাই আইপিএল সেঞ্চুরির জন্য বাড়তি সতর্ক হয়ে নিরাপদ শট খেলার সুযোগ কতটুকু আছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়।
শেষ ৫ ওভারে বেঙ্গালুরু রান করেছে ৫৪, যা আইপিএলে খুব একটা বেশি নয়। এটা ঠিক যে কম বল খেলে বেশি রান করার দায়িত্ব কোহলির একার নয়। দলের অন্য ব্যাটসম্যানদেরও দায়িত্ব সমান। তবে সেটা তারা করতে পারেনি, যার ফল ১৮৩। কিন্তু ক্রিজে থিতু ব্যাটসম্যান হিসেবে কোহলিরই মূল দায়িত্বটা নেওয়া উচিত ছিল।
বেঙ্গালুরুর ইনিংসের ১২০ বলের ৭২টিই খেলেছেন কোহলি। সব মিলিয়ে তাই দলের ১৮৩ রান আর কোহলির ইনিংস নিয়ে খুব একটা খুশি হতে পারেনি বেঙ্গালুরুর সমর্থকেরাও। প্রথম ইনিংসের পর রাজস্থান রয়্যালসের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলের একটি পোস্ট দেখলেও সেটা মনে হবে অনেকের। ‘১৮৪ রান ভালোই মনে হচ্ছে, যখন ২০০–এর বেশি রানও হতে পারত’—পোস্টটিতে পরোক্ষে কোহলিকেই হয়তো খোঁচা দেওয়া হয়েছে।
কোহলি অবশ্য এই রানকেই যথেষ্ট মনে করেছেন। ইনিংস–বিরতিতে কোহলি বলেছেন, বাইরে থেকে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য সহজ মনে হলেও আদতে সতর্ক হয়ে খেলতে হয়েছে। এই সংগ্রহ জয়ের জন্য যথেষ্ট মনে হচ্ছে তাঁর। তবে জয়পুরের সাওয়াই মানসিংহ স্টেডিয়ামে ম্যাচটিতে কোহলির ধারণা ঠিক ছিল না।
একে তো এবার রাজস্থান রয়্যালস দুর্দান্ত ছন্দে; জিতেছে টুর্নামেন্টে খেলা আগের তিন ম্যাচেই, সেটা আবার দলের সেরা ক্রিকেটার জস বাটলারের ব্যাটে রান ছাড়াই। তো বাটলার আর কত দিন রান না করে থাকবেন! গতকাল করলেন সেঞ্চুরি। শুরুর দিকে কিছুটা লড়াই করলেও সেঞ্চুরি করেছেন ৫৮ বলে, ১৭২ স্ট্রাইক রেটে। যার মানে বাটলার সেঞ্চুরি করেছেন কোহলির চেয়ে ৯ বল কম খেলে। টি-টোয়েন্টিতে কোনো ম্যাচে দুই দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিতে যেটা যথেষ্টের চেয়ে বেশি! বাটলারকে সঙ্গ দেওয়া অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন করেছেন ৪২ বলে ৬৯। ম্যাচ কী আর থাকে! শেষ পর্যন্ত রাজস্থান জিতেছে ৫ বল হাতে রেখে।
বেঙ্গালুরুর বোলিং লাইনআপ বরাবরই দুর্বল। এবারও তাদের আক্রমণভাগে ওই অর্থে কোনো ‘এক্স ফ্যাক্টর’ নেই। কোহলির সঙ্গে একগাদা ব্যাটসম্যান খেলিয়ে বড় রান সংগ্রহই তাদের কৌশল। তবে ১৮৩ রান নিঃসন্দেহে সেই বড় সংগ্রহ নয়। গত ২৯ মার্চ কোহলির ৫৯ বলে ৮৩ রানের ইনিংসে কলকাতার বিপক্ষে ১৮২ রান করেছিল বেঙ্গালুরু, যা কলকাতা তাড়া করে অনেকটা ‘পার্কে হাঁটার অনুভূতি’ নিয়ে, ১৯ বল আর ৭ উইকেট হাতে রেখে। আইপিএলের প্রথম ম্যাচেও বেঙ্গালুরু রান তুলেছিল ১৭৩, যা ৮ বল হাতে রেখে তাড়া করে চেন্নাই। অর্থাৎ বেঙ্গালুরুর এই বোলিং লাইনআপের জন্য ১৮০-১৮৫ রান আসলে যথেষ্ট নয়, চোখ রাখতে হবে আরও বড় সংগ্রহের দিকে। সে ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫ ম্যাচে ৩১৬ রান করার পরও কোহলি তাঁর খেলার ধরন নিয়ে নতুন করে ভাবতেই পারেন!