সাকিব আল হাসান হোটেলে ঢুকলেন হাসিমুখে। বেরিয়েছিলেন দুপুর ১২টায়। ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা ৭টা। চোখেমুখে একটু ক্লান্তির ছাপ তো থাকবেই। তবে হাসিমুখটা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটির বিশেষ তাৎপর্য আছে।
তা প্রায় সাত ঘণ্টা হোটেলের বাইরে কোথায় ছিলেন? উত্তর—অনুশীলনে। এতক্ষণ কেন, এই প্রশ্নের প্রথম উত্তর পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম শহর থেকে অনেক দূরে। গুগলস ম্যাপে টিমের হোটেল থেকে দূরত্ব দেখায় ৩২.২ কিলোমিটার। বাংলাদেশ দলের যেতে লেগেছে সোয়া ঘণ্টার মতো। ফিরতে এক ঘণ্টার একটু বেশি। এখানেই তো চলে গেছে সোয়া দুই ঘণ্টা। গিয়েই তো মাঠে নেমে পড়েননি ক্রিকেটাররা। মধ্যাহ্নভোজ তাঁরা মাঠে গিয়েই সেরেছেন।
পুনের যে স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে খেলা, সেই মাঠের সঙ্গে এদিনই প্রথম চেনা-পরিচয় হলো বাংলাদেশ দলের। আইপিএল খেলার সুবাদে এই মাঠ সাকিব ও মোস্তাফিজের একটু চেনা থাকতে পারে, বাকি খেলোয়াড়দের জন্য একেবারেই নতুন। ১৩ অক্টোবর চেন্নাইয়ে নিউজিল্যান্ড ম্যাচের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা মাঝখানে তিন দিন আর ব্যাট-বল হাতে নেননি।
চেন্নাই থেকে পুনে আসার দিনটাতে তো সুযোগই ছিল না। পরের দুদিনও বিশ্রাম। এই দুদিন অনুশীলন থেকে ছুটি পেয়ে ক্রিকেটাররা যে যার মতো সময় কাটিয়েছে। এই বিরতির কারণেই আজকের অনুশীলন পর্বটা শুধু দীর্ঘই হলো না, সেটির তীব্রতাও ছিল অনেক। অনেকক্ষণ ধরে সবাই নেটে ব্যাটিং-বোলিং করলেন। নেটের বাইরে বাড়তি নকও করলেন অনেকে।
সবাই সবকিছু করলেও পুরোটা সময় মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ছিলেন একজনই। শুরুতে ফুটবল নিয়ে ওয়ার্মআপে যাঁকে একরকম নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখে একটু শঙ্কাই জেগেছিল। তাহলে কি চোটটা আরও বেড়েছে! বাংলাদেশ দলের ফিজিও কিছুক্ষণ স্ট্রেচিং করালেন। এত দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, তাতে তিনি কোনো অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন কি না। নেট শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মাঠ থেকে ড্রেসিংরুমে যাওয়ার পর শঙ্কাটা আরও বেড়েছিল। সেই ফেরা যে ব্যাটিংয়ের প্রস্তুতি নিতে, তা বোঝা গেল একটু পরই, যখন প্যাড-থাই প্যাড-চেস্ট গার্ডে সুসজ্জিত হয়ে মাঠে ফিরলেন সাকিব আল হাসান।
নেটে ঢোকার আগে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে অনেকক্ষণ কী নিয়ে যেন কথা বললেন। এরপর প্রায় ঘণ্টা দেড়েক টানা ব্যাটিং অনুশীলন করে গেলেন সাকিব। প্রথমে স্পিনারদের নেটে, এরপর পেসারদের। প্রথাগত বোলিংয়ে অনেকক্ষণ ব্যাটিং করার পর পাশের আরেকটা নেটেও সময় কাটালেন বেশ কিছুক্ষণ। ওই নেটে বোলিং হচ্ছে না। লম্বা চামচের মতো একটা যন্ত্রের মাথায় বল বসিয়ে তা ছুড়ে দিচ্ছেন দু–তিনজন। অন্য নেটে একজনের পর একজন ব্যাটিং করে যাচ্ছেন, তবে বাংলাদেশ দলের ফিজিও-ট্রেনারদের মতো সাংবাদিকদের চোখও বলতে গেলে সাকিবকেই অনুসরণ করে যাচ্ছে।
দেখে যতটুক বোঝা যায়, তাতে ব্যাটিং করতে সাকিবের কোনো সমস্যা হচ্ছে মনে হয়নি। সব ধরনের শটই খেলার চেষ্টা করলেন। সফলও হলেন বেশির ভাগ সময়। কোনো শট খেলার পরই কোনোরকম অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন বলে মনে হলো না। তারপরও শুধু ব্যাটিংয়ে কি আর সব বোঝা যায়! চোট পাওয়ার মাঝের তিন দিন স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করেছেন। কোনো ব্যথাও অনুভব করেননি। তবে দৌড়াদৌড়ি তো আর করেননি। রান নেওয়া বা ফিল্ডিংয়ের সময় যেভাবে দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে হয়, সেই পরীক্ষাও না।
সেটিও অনেকটাই হলো ব্যাটিং শেষে। এক ওভারের জন্যও বোলিং করেননি। তাঁর যে চোট, তাতে বোলিং করতেই কম সমস্যা হবে, কারণ হয়তো ওটাই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে চোট পেয়েছিলেন ব্যাটিংয়ের সময়। পরে তো সেটিকে পাত্তা না দিয়েই ১০ ওভার বোলিং করেছেন। সবকিছু মিলিয়ে এদিনের অনুশীলন শেষে সাকিবকে নিয়ে অনেকটা নিশ্চিন্ত বাংলাদেশ দল।
ঊরুর স্ক্যান রিপোর্টে ঠিক কী এসেছে, তা পরিষ্কার করে জানানো হয়নি। তবে নানা সূত্রে যা জানা গেছে, ডাক্তারি পরিভাষায় সাকিবের চোটটার নাম ‘গ্রেড ওয়ান টিয়ার’। মাংসপেশি ছিঁড়েছে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ ধরনের চোটে কোনো ক্রিকেটারের মোটামুটি সপ্তাহখানেক বাইরে থাকার কথা। তারপরও পাঁচ দিন পরের ম্যাচেই সাকিবের খেলাটা প্রায় নিশ্চিত বলা যাচ্ছে কীভাবে, এর ব্যাখ্যা পাওয়া গেল দল–সংশ্লিষ্ট একজনের কাছ থেকে। প্রথমত সাকিবের চোটটা ঊরুর সামনে, অর্থাৎ হ্যামস্ট্রিংয়ের উল্টো দিকে। হ্যামস্ট্রিংয়ে এই চোট পেলে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে খেলার প্রশ্নই উঠত না। ২৪ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পরের ম্যাচেও অনিশ্চিত হয়ে পড়তেন।
চোটটা বাঁ পায়ের ঊরুতে না হয়ে ডান পায়ে হলে তা আরও গুরুতর হতো। সাকিব বাঁহাতি বলে ব্যাটিং-বোলিং দুটোতেই সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে তাঁর ডান পায়ের ওপর। বাঁ পায়ের কাজ যেখানে অনেকটাই সহায়ক ভূমিকার। সবকিছু মিলিয়েই বাংলাদেশ দলে একটা স্বস্তির হাওয়া। ভারতের বিপক্ষে অনেক প্রতীক্ষিত এই ম্যাচে তাহলে অধিনায়ককে ছাড়া খেলতে হচ্ছে না। যদিও বাংলাদেশ দল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো এ কথা জানানো হয়নি। ম্যাচের আগে আরেকটি অনুশীলন সেশন আছে। তাতে সাকিবকে দেখার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তবে আপাতত ১৭ অক্টোবর রাত পর্যন্ত যা খবর, তাতে সাকিব খেলছেন, এটাই ধরে নিচ্ছে বাংলাদেশ দল।