বেনো-কাদির ট্রফি মাঝে রেখে দুই অধিনায়ক অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স (ডানে) ও পাকিস্তানের শান মাসুদ
বেনো-কাদির ট্রফি মাঝে রেখে দুই অধিনায়ক অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স (ডানে) ও পাকিস্তানের শান মাসুদ

বেনো-কাদির ট্রফি

পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া ও ইতিহাস

রিচি বেনো। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক। প্রয়াত এই অলরাউন্ডার টেস্টে লেগ স্পিনে নিয়েছেন ২৪৮টি উইকেট।

আবদুল কাদির। পাকিস্তানের লেগ স্পিন কিংবদন্তি। বেনোর মতোই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে অন্য ভুবনে চলে যাওয়া কাদির টেস্টে পেয়েছেন ২৩৬ উইকেট।

শুধু বেনো ও কাদিরই নয়, অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান টেস্ট ক্রিকেটকে যুগে যুগে কম লেগ স্পিনার উপহার দেয়নি। ক্ল্যারি গ্রিমেট ও শেন ওয়ার্নের মতো লেগ স্পিন কিংবদন্তি এসেছেন অস্ট্রেলিয়া থেকে, ওয়ার্নের সময়েই স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল।

পাকিস্তানেও কাদিরের পথ ধরে মুশতাক আহমেদ, দানিশ কানেরিয়া ও ইয়াসির শাহদের নাম ক্রিকেট ইতিহাসে ভালোভাবেই খোদাই করা।

বেনো-কাদির ট্রফি—লেগ স্পিন–ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ সেই দুই দেশের টেস্ট সিরিজের লড়াইটা এখন দুই কিংবদন্তির নামেই। ২০২২ সালের মার্চে দুই দলের আগের সিরিজটি থেকেই এর প্রবর্তন। পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত তিন ম্যাচের সিরিজটি ১-০ ব্যবধানে জিতে বেনো-কাদির ট্রফি বাড়ি নিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।

গত বছর পাকিস্তান সফরে ১–০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জেতে অস্ট্রেলিয়া

প্রায় ২১ মাস পর আগামীকাল আবার শুরু হচ্ছে বেনো-কাদির ট্রফির লড়াই। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের ভেন্যু পার্থ। আজ সেই ম্যাচের একাদশ ঘোষণা করে দিয়েছে দুই দলই। সর্বকালে অন্যতম সেরা দুই স্পিনারের নামে যে সিরিজ, সেই সিরিজের প্রথম টেস্টে পাকিস্তান খেলতে নামছে কোনো বিশেষজ্ঞ স্পিনার ছাড়াই। অস্ট্রেলিয়া দলেও স্পিনার মাত্র একজন—নাথান লায়ন।

পার্থে খেলা। একটা সময় যেখানে রাজত্ব ছিল ফাস্ট বোলারদের। কিন্তু সেই বিখ্যাত ওয়াকায় নয়, পার্থে এখন আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় পার্থ স্টেডিয়ামে। যেখানে অস্ট্রেলিয়ার অফ স্পিনার নাথান লায়ন তিন টেস্টেই পেয়েছেন ২২ উইকেট।

পাকিস্তানের নতুন অধিনায়ক শান মাসুদের প্রথম পছন্দের স্পিনার ছিলেন আবরার আহমেদ। পায়ের চোটে ছিটকে পড়েছেন এই লেগ স্পিনার। বাঁহাতি স্পিনার নোমান আলী থাকলেও তাঁকে একাদশে রাখা হয়নি। পাকিস্তানের ৩৫তম টেস্ট অধিনায়ক মাসুদ বরং অলরাউন্ডার আগা সালমানের মতো অনিয়মিত স্পিনারের ওপর নির্ভর করছেন।

পার্থে দুই পেসার আমের জামাল ও খুররম শেহজাদকে টেস্ট ক্যাপ দিচ্ছে পাকিস্তান। মোহাম্মদ রিজওয়ানের জায়গায় উইকেটকিপিং করবেন সাবেক অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কখনোই সিরিজ না জেতা পাকিস্তান ৩৭ টেস্টে জিতেছেই মাত্র ৪টিতে। সর্বশেষ জয়টির স্মৃতিতে আবার ধুলা পড়ে গেছে, ১৯৯৫ সাল তো আর আজকের কথা নয়। এরপর অস্ট্রেলিয়ায় খেলা ১৪ টেস্টেই পরাজয়। নতুন অধিনায়কের অধীন পুরোনো ধুলা ঝেড়েমুছে পাকিস্তান নতুন ইতিহাস লিখতে পারবে কি না, কে জানে!

‘বাজবলের’ ভক্ত মাসুদ জয়ের জন্য খেলার ঘোষণাই দিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনে, ‘এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে যেন ২০ উইকেট নেওয়াটা সহজ হয়।’

তবে দলটা যে একটা পুনর্গঠনপ্রক্রিয়ার মধ্যে যাচ্ছে, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন মাসুদ, ‘সবচেয়ে ভালো হয়, দল হিসেবে বড় পরিসরে ভাবলে। প্রক্রিয়াটা দেখুন, দেখুন আমরা কীভাবে ক্রিকেট খেলতে চাই। ফলটা উপজাত হিসেবেই আসবে। আমরা যদি পাঁচ দিনই ধারাবাহিকভাবে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি, আমি নিশ্চিত, ফলের ইতিবাচক পাশেই থাকব আমরা।’

অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক প্যাট কামিন্স এই সিরিজে পাশে পাচ্ছেন দুজন সহ-অধিনায়ককে। স্টিভ স্মিথ তো ছিলেনই, আজ আবার ট্রাভিস হেডকেও সহ–অধিনায়ক করার ঘোষণা দিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।

স্মিথের বয়স ৩৪ হয়ে গেছে, সেই বিবেচনা থেকেই অস্ট্রেলিয়া যুগ্ম সহ–অধিনায়কের পথে হেঁটেছে বলে জানালেন অধিনায়ক কামিন্স, ‘ও (হেড) তো সব সময়ই আমাদের একজন নেতা ছিল। সেটিরই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলাম। সময়টা হয়তো এখনই আসেনি, তবে স্টিভ স্মিথ তো চিরকাল খেলে যাবে না। আমি সারা জীবন অধিনায়ক থাকব না। দলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে অন্য নেতাদের বাজিয়ে দেখতেই এই সিদ্ধান্ত।’

অনুশীলনে স্টিভেন স্মিথ

সর্বশেষ টেস্টের একাদশ থেকে অস্ট্রেলিয়ার পার্থ টেস্টে দলে পরিবর্তন একটিই। টড মার্ফির জায়গায় দলে ঢুকেছেন চোট থেকে ফেরা লায়ন। টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা পেসার ল্যান্স মরিসের অপেক্ষা বেড়েছে তাতে।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে শতকরা ৩০ পয়েন্ট নিয়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া এখন আছে পাঁচে। শতকরা ১০০ পয়েন্ট নিয়ে প্রতিপক্ষ পাকিস্তান সবার ওপরে।