ম্যাচ জয়ের পর অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস
ম্যাচ জয়ের পর অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস

ওয়ার্নারের ম্যাচে দারুণ লড়ে হার ওয়েস্ট ইন্ডিজের

১ ওভার শেষে ১৬/০, ৩ ওভার শেষে ৪০/০, ৬ ওভার শেষে ৭২/০; কী দুর্দান্ত গতিতেই না এগোচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস! ২১৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেভাবে ব্যাটিং করছিল, এমনটাই হওয়ার কথা। টেস্ট ও ওয়ানডেতে যেনতেন মানের ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো বরাবরই টি–টোয়েন্টিতে ‘বিধ্বংসী’ আর ‘দোর্দণ্ড প্রতাপশালী’ এক দল! গত মঙ্গলবার এই তো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই তৃতীয় ওয়ানডেতে ৮৬ রানে অলআউট হয়ে ৮ উইকেটে হেরে সিরিজে ধবলধোলাই হওয়ার পর প্রথম টি–টোয়েন্টিতে তাদের এমন শুরুও তো সেটাই বলে।

কিন্তু চিরকালীন অননুমেয় দল পাকিস্তানের মতো বিধ্বংসী বা প্রতাপশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও যে ‘ছন্নছাড়া’ হতে সময় লাগে না, আজ হোবার্টে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি–টোয়েন্টিও সেটা দেখাল। ৮.২ ওভারে বিনা উইকেটে ৮৯ রান তোলা ওয়েস্ট ইন্ডিজ হঠাৎই পথ হারায়। প্রথম উইকেট হারায় তারা ৮.৩ ওভারে, ওই ৮৯ রানেই। এরপর দেখতে দেখতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর হয়ে যায় ৮ উইকেটে ১৬৩। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি তারা হারে ১১ রানে।

টেস্ট, ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টি; তিন সংস্করণেই ১০০ ম্যাচ খেলা তৃতীয় ক্রিকেটার ডেভিড ওয়ার্নার

ম্যাচ হারার আগে অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং দেখেছে উত্থানপতন। এটাও দেখিয়েছে—ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি–টোয়েন্টিতে কখন কী করবে, সেটা আসলে কেউ জানে না। ব্রান্ডন কিং ও জনসন চার্লসের উদ্বোধনী জুটিতে ৮৯ রান ওঠার পর ছোট একটা ধস নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে। ৮৯/১, ১০০/২, ১১৫/৩—উইকেট পড়তে থাকার এই গতিতে বাধ দেন শাই হোপ ও নিকোলাস পুরান। কিন্তু সেই বাধও ভেঙে যায় হোপ আউট হয়ে ফিরলে।

১৪১/৪, ১৪২/৫, ১৪৯/৬, ১৫৮/৭, ১৬৩/৮—ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে আবার শুরু হয় উইকেট পতনের গান। সেটা এখানে যখন থামে, ১৫ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৫১ রান। উইকেটে ছিলেন জেসন হোল্ডার ও আকিল হোসেন। অনেকেই ধরে নিয়েছেন, একেবারেই প্রতিযোগিতার বাইরে ছিটকে পড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু ১৮তম ওভারের শেষ তিন বলে দুজনে মিলে ১১ রান নিয়ে হিসাবটাকে নিয়ে আসেন ১২ বলে ৪০–এ।

পরের ওভারে আসে ১৩ রান। শেষ ওভারের হিসাবটা দাঁড়ায় এ রকম—জিততে হলে ২৭ রান লাগবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ৬, ৪, ০, ৩—প্রথম ৪ বলে ১৩ রান নেন হোল্ডার। শেষ ২ বলে আসে মাত্র ২ রান। সব মিলিয়ে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ২০২ রানে থামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে অস্ট্রেলিয়া যে ৭ উইকেটে ২১৩ রান করে, এতে বড় অবদান এই ম্যাচে দুর্দান্ত এক মাইলফলকে পৌঁছানো ডেভিড ওয়ার্নারের। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনারের এটি ১০০তম টি–টোয়েন্টি ম্যাচ। রস টেলর ও বিরাট কোহলির পর ক্রিকেট ইতিহাসের তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে তিন সংস্করণেই ১০০ ম্যাচ খেলার কীর্তি গড়া ওয়ার্নার আজ ১২ চার ও ১ ছয়ে ৩৬ বলে করেছেন ৭০ রান। ওয়ার্নার ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বলার মতো রান পেয়েছেন জশ ইংলিশ (২৫ বলে ৩৯), টিম ডেভিড (১৭ বলে ৩৭*) ও ম্যাথু ওয়েড (১৪ বলে ২১)।

রোববার অ্যাডিলেড ওভালে হবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ২১৩/৭ (ওয়ার্নার ৭০, ইংলিস ৩৯, ডেভিড ৩৭*, ওয়েড ২১, মার্শ ১৬, ম্যাক্সওয়েল ১০, স্টয়নিস ৯, জাম্পা ৪*, অ্যাবট ০; রাসেল ৪–০–৪২–৩, জোসেফ ৪–০–৪৬–২, হোল্ডার ৩–০–৩৭–১, শেফার্ড ৪–০–৩৮–১, পাওয়েল ১–০–৬–০, আকিল ৪–০–৪২–০)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ২০২/৮ (কিং ৫৩, চাল৴স ৪২, হোল্ডার ৩৪*, পুরান ১৮, হোপ ১৬, পাওয়েল ১৪, আকিল ৭*, রাদারফোর্ড ৭, শেফার্ড ২, রাসেল ১; জাম্পা ৪–০–২৬–৩, স্টয়নিস ৩–০–২০–২, ম্যাক্সওয়েল ২–০–৩১–১, বেহরেনডর্ফ ৩–০–৩৮–১, অ্যাবট ৪–০–৪১–১, হ্যাজলউড ৪–০–৪৪–০)।

ফল: অস্ট্রেলিয়া ১১ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে।