অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলে জায়গা করে নেওয়ার খুব কাছাকাছি এসেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেরা পনেরোতে জায়গা হয়নি সিলেটের বাঁহাতি পেসার রুয়েল মিয়ার। কয়েক মৌসুম খেলার পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের বিভাগ সিলেটের দলেও জায়গা হারান। জায়গা হবে কী করে, সিলেট দলে যে খালেদ আহমেদ, ইবাদত হোসেন, আবু জায়েদ, তানজিম হাসান, রেজাউর রহমানের মতো পেসারদের ভিড়! রুয়েলের ঠিকানা তাই হয় বরিশাল দলে। শুধু তা–ই নয়, গত দুই বিপিএলে রুয়েলকে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিই দলে নেয়নি। ছিলেন না বিসিবির হাই পারফরম্যান্স বিভাগ কিংবা টাইগার্স প্রোগ্রামেও।
প্রায় হারিয়ে যাওয়া ২৩ বছর বয়সী সেই বাঁহাতি পেসার আলোচনায় এসেছেন এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে ১৫ ম্যাচে নিয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮ উইকেট নিয়ে। ৩১ উইকেট নিয়ে তাঁর আগে আছেন শুধু মোহামেডানের পেসার আবু হায়দার।
প্রিমিয়ার লিগের এই পারফরম্যান্সের পর দুঃসময় পেছনে ফেলে আসা রুয়েল নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। প্রথম আলোকে মুঠোফোনে তিনি সে স্বপ্নের কথাই শোনালেন, ‘গত দুইটা বছর খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া খুব কষ্টকর ছিল। খুব বেশি সমর্থন পাইনি। জাতীয় পর্যায়ে যে সব ক্যাম্প থাকে, সেগুলোতে ছিলাম না। জানি না কী কারণে বিপিএলেও দল পাইনি দুই বছর। সব মিলিয়ে নিজের মধ্যে একটা জেদ কাজ করছিল। প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে ফিরব, এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম। সেরা পাঁচ বোলারের মধ্যে যেন থাকি, মনে মনে এমন লক্ষ্য ছিল।’
বিপিএল বা বিসিবির কোনো প্রোগ্রামে না থাকলেও খেলার মধ্যেই ছিলেন রুয়েল। ক্রিকেট মৌসুমের বাইরের সময়টা দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর ‘খেপ’ খেলেছেন, জাতীয় পর্যায়ের পেসারদের জন্য যেটা বিরলই বলতে হয়। তবে রুয়েল নাকি এতে উপকৃতই হয়েছেন, ‘দেখুন, খেপ খেলতে যে জায়গায়ই যাই না কেন, সবখানেই কিছু না কিছু শেখার থাকে। ওইখানেও কিন্তু চাপ থাকে পারফর্ম করার। স্লগ ওভারে বোলিং করা, শুরুতে বোলিং করা…এসবের চর্চার মধ্যে ছিলাম। ওইটাও একটা পরীক্ষা ছিল। আমি একই ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়েছি এবারের প্রিমিয়ার লিগেও। ওই অভিজ্ঞতা আমাকে নানাভাবে সাহায্য করেছে।’
অনুশীলনের সুযোগ-সুবিধার অভাবেও ভুগেছেন রুয়েল। জাতীয় দল অথবা বিসিবির প্রোগ্রামে না থাকলে অন্য ক্রিকেটারদের যে ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়ে, রুয়েলও গেছেন সেভাবেই, ‘আমার বাসা শ্রীমঙ্গলে। সেখানে কোনো অনুশীলনের ব্যবস্থা নেই। বাইক চালিয়ে আমাকে মৌলভীবাজার যেতে হতো অনুশীলনের জন্য। আসা-যাওয়ায় প্রতিদিন দেড়-দুই ঘণ্টা লেগে যেত। সপ্তাহের পাঁচ-ছয় দিন এভাবে অনুশীলন করতাম। আমাদের জেলা কোচ রাসেল ভাই অনেক সাহায্য করেছেন।’
রুয়েলকে লড়াই করতে হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন পেস ভাবনার সঙ্গেও। বিসিবি এখন প্রায় সব পর্যায়েই দীর্ঘদেহী পেসারদের সুযোগ দিচ্ছে, যাদের গতি ঘণ্টায় অন্তত ১৩৫ কিলোমিটারের আশপাশে। রুয়েল তার মধ্যে পড়েন না। রুয়েলের মূল শক্তি ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটারের আশপাশে গতিতে দুই দিকেই সুইং করানো।
৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার রুয়েল তাঁর সেই শক্তি দিয়েই পেস বোলিং নিয়ে প্রচলিত ভাবনাটা বদলাতে চান, ‘ইংল্যান্ডের স্যাম কারেনও কিন্তু পাঁচ ফুট সাত-আট ইঞ্চি লম্বা। এমন অনেক পেসারই আছে যারা আমার উচ্চতার, গতিও তেমন নয়। তবে আমার যদি দুইটা সুইংই থাকে, আমি যদি ১৩০ কিমির আশপাশে গতিতে বোলিং করতে পারি, তাহলে আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না। আমি ওই ভুল ধারণাটা ভেঙে দেব।’