মাঠে ঢুকে পড়া এক আন্দোলনকারীকে কোলে তুলে মাঠের বাইরে নিয়ে যান জনি বেয়ারস্টো
মাঠে ঢুকে পড়া এক আন্দোলনকারীকে কোলে তুলে মাঠের বাইরে নিয়ে যান জনি বেয়ারস্টো

বেয়ারস্টোর কোলে ‘জাস্ট স্টপ অয়েল’–এর আন্দোলনকারী

লর্ডসে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হলো মাত্র। জেমস অ্যান্ডারসনের করা ইনিংসের প্রথম ওভার শেষ হওয়ার পর লর্ডসের মিডিয়া সেন্টার প্রান্ত থেকে বোলিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। এমন সময় লর্ডসের গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড থেকে দৌড়ে মাঠে ঢুকে পড়লেন দুই ব্যক্তি। তাঁদের টি-শার্টে লেখা ‘জাস্ট স্টপ অয়েল’। হাতে কমলা রঙের পাউডার।

তাঁদের একজনকে লর্ডস টেস্টের উইকেটে পৌঁছানোর আগেই থামান নিরাপত্তাকর্মীরা। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন বেন স্টোকস ও ডেভিড ওয়ার্নার। আরেকজন ধরা পড়েন উইকেটকিপার জনি বেয়ারস্টোর হাতে। বেয়ারস্টো তাঁকে একরকম কোলে করে মাঠের বাইরে নিয়ে যান। এরপর নিজের জার্সি বদলাতে ড্রেসিংরুম যেতে হয় তাঁকে।

বেয়ারস্টো যখন বাইরে যান, মাঠকর্মীরা তখন সবুজ ঘাসের ওপর পড়া কমলা রঙের পাউডার পরিষ্কার করতে থাকেন। এতে প্রায় ছয় মিনিটের জন্য ইংল্যান্ড–অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের খেলা বন্ধ থাকে।

ছুটে আসা ব্যক্তিকে আটকানোর চেষ্টা ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকসের

যে দুজন মাঠে ঢুকে পড়ে কমলা রঙের পাউডার ছড়িয়ে যান, তাঁরা যুক্তরাজ্যের পরিবেশবাদী সংগঠন জাস্ট স্টপ অয়েলের দুজন সদস্য। সংগঠনটি যুক্তরাজ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্প বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে।

জাস্ট স্টপ অয়েল জোটের এক মুখপাত্র ক্রিকইনফোকে বলেছেন, ‘ক্রিকেট আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু আমরা কীভাবে ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটীয় লড়াই উপভোগ করতে পারি, যখন পৃথিবীই মানুষের বসবাসযোগ্য নয়? আমরা অন্যমনস্ক থাকতে পারি না, যখন আমাদের খেলা, খাদ্য এবং সংস্কৃতি ঝুঁকির মুখে।’

বিশ্বের ক্রিকেটভক্তদের প্রতি জাস্ট স্টপ অয়েলের বার্তা হচ্ছে, ‘যাঁরা ক্রিকেটকে ভালোবাসেন, তাঁদের এখন পরিস্থিতির গভীরতা বোঝার সময় এসেছে। রাস্তায় নেমে অবৈধ ও সন্ত্রাসী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত। আমাদের ছেলেরা যখন জিজ্ঞেস করবে, “তোমরা কী করেছ?”, তখন যেন ভালো উত্তর দিতে পারি।’

একপ্রকার কোলে তুলে নিয়ে মাঠের বাইরে নিয়ে যান জনি বেয়ারস্টো

এদিকে এমসিসির প্রধান নির্বাহী গাই লাভেন্ডার এক বিবৃতিতে বলেছেন, এমসিসি এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানায়। তাদের কর্মকাণ্ড নিজেদের ক্ষতি তো বটেই, যারা মাঠে আছে তাদেরও ক্ষতির মুখে ফেলছে। যারা টাকা খরচ করে মাঠে এসেছে, তাদের প্রতি ধারাবাহিকভাবে অসম্মান দেখাচ্ছে। শুধু লর্ডসে নয়, অন্যান্য খেলায়ও।

এর আগে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ম্যাচের আগে অস্ট্রেলিয়ার টিম বাস আটকে দিয়েছিল জাস্ট স্টপ অয়েল জোট। তারও আগে ইংল্যান্ড আয়ারল্যান্ড টেস্টের সময়েও ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে বহন করা বাস আটকে দিয়েছিল এই সংগঠন। ওই সময় বাসের ভেতরে থাকা বেয়ারস্টো থেমে থাকা গাড়ির ভেতর থেকে ছবি তুলে ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে লেখেন, ‘কিছুটা দেরি হয়ে গেলে কিন্তু আমরা দায়ী নই’।

আন্দোলনকারীকে মাঠ থেকে বের করে নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে তুলে দেন বেয়ারস্টো

এসব ঘটনায় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের ভেন্যু ওভালে দুটি উইকেট প্রস্তুত রাখে আইসিসি। যদি কোনো কারণে নির্ধারিত উইকেটে খেলা না হয়, তাহলে বিকল্প উইকেট ব্যবহার করার পরিকল্পনা থেকে আইসিসি এ ব্যবস্থা রাখে।

জাস্ট স্টপ অয়েল জোটের আন্দোলনকারীরা বিশ্ব স্নুকার চ্যাম্পিয়নশিপ ও ইংলিশ প্রিমিয়ারশিপ রাগবি ফাইনালে বিপত্তি বাধিয়েছিলেন। প্রিমিয়ারশিপের ফাইনালে দুজন আন্দোলনকারী কমলা রঙের টি-শার্ট পরে মাঠে কমলা রং ছিটিয়েছিলেন। এতে খেলা বন্ধ ছিল পাঁচ মিনিট।