সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন অধিনায়ক শানাকা
সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন অধিনায়ক শানাকা

‘আশা করি, আমরা তাদের গর্বিত করতে পেরেছি’

দুবাইয়ের আকাশে তখন আলোর ঝলমলানি। গ্যালারিতে শ্রীলঙ্কান সমর্থকেরা একে অন্যের সঙ্গে গলাগলি করছেন, কেউ কাঁদছেন আনন্দে। ক্যামেরা সেই গ্যালারি ঘুরে এল মাঠে, দেখা গেল শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকাকে। সতীর্থরা তাঁকে জড়িয়ে ধরেছেন কয়েকজন মিলে। সমর্থকদের অনেকের মতো তাঁদের কারও কারও চোখ টলমল করছে। এমন দিনে একটু-আধটু আনন্দ অশ্রু আসতেই পারে। দেখতেও খারাপ লাগেনি।

বিশ্বাস করুন আর না–ই করুন, যে শ্রীলঙ্কা এবার টি-টোয়েন্টি সংস্করণের এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হলো, তারা কিছুদিন পরে শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে সরাসরি খেলার সুযোগ পায়নি। যেতে হবে প্রথম পর্বে আবারও নিজেদের সামর্থ্যের পরীক্ষা দিয়ে।

তাতে মনে হয় না খুব একটা আক্ষেপ আছে দাসুন শানাকার দলের। এই এশিয়া কাপেও তো অনেকে তাঁদের গোনায় ধরেনি, বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছিলেন কেউ কেউ শুরুতে। তাদের কী অবিশ্বাস্যভাবে ভুল প্রমাণ করেছেন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দেশটি।

এশিয়া কাপের সাফল্য শ্রীলঙ্কানদের জন্য নিঃসন্দেহে এসেছে আনন্দের উপলক্ষ হয়ে

গভীর এই সংকটকালে এশিয়া কাপে এই সাফল্য শ্রীলঙ্কানদের জন্য নিঃসন্দেহে এসেছে আনন্দের উপলক্ষ হয়ে, কিছুটা স্বস্তি হয়ে তো বটেই। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক শানাকাও সবার আগে স্মরণ করলেন তাঁর দেশের মানুষকেই, ‘আমি এখানে আমাদের সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। তাঁরা আমাদের দারুণ সমর্থন দিয়েছেন। দেশের মানুষকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই। আশা করি, আমরা তাদের গর্বিত করতে পেরেছি।’

এবার এশিয়া কাপটা হয়ে গিয়েছিল তাড়া করে ম্যাচ জেতার মঞ্চ। ফাইনালের আগে ১২টি ম্যাচের মধ্যে আগে ব্যাটিং করে জেতার ঘটনা ছিল মাত্র তিনটি, এর মধ্যে দুটিই হংকংয়ের বিপক্ষে। কিন্তু আজ টসে হেরে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কাকে আগে ব্যাট করতে হয়েছে। তবে গত কয়েকটি ম্যাচে দুর্দান্ত জয় পাওয়া লঙ্কানরা তাতে সাহস হারায়নি। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পাওয়া ভানুকা রাজাপক্ষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সেটাই বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্যই ছিল ইতিবাচক থাকা এবং কোনো চাপ না নেওয়া। ওটাই সাহায্য করেছে বড় রান পেতে।’

শেষ পর্যন্ত স্কোরটা ১৭০ হলেও শ্রীলঙ্কা নাকি আরও কম রান নিয়েও লড়াই করতে আত্মবিশ্বাসী ছিল। রাজাপক্ষেই বলেছেন, ‘পানি পানের বিরতির সময় যখন ক্রিস (শ্রীলঙ্কার কোচ ক্রিস সিলভারউড) যখন কথা বলতে এল, আমি বললাম, দেখে ১৪০ রানের উইকেট মনে হচ্ছে। তবে আমরা শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করায় ওদের লক্ষ্যটা আরও বড় হয়ে গেল।’

৪৫ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ৭১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন

এর জন্য অবশ্য সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব রাজাপক্ষেই পাবেন। ৪৫ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ৭১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন। ইনিংসের শেষ বলে নাসিম শাহকে মেরেছেন দারুণ এক ছক্কা। অধিনায়ক দাসুন শানাকা তো বললেনই, ‘ওই ছক্কাটাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। ১৭০ রান সব সময়ই খুব জটিল স্কোর।’

বিশ্বকাপেও দারুণ কিছু করার আশা চামিকা করুনারত্নের

এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে এখন বিশ্বকাপেও দারুণ কিছু করার আশা চামিকা করুনারত্নের। ম্যাচের পরই মাঠে ভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকারকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার বলেছেন, ‘দারুণ লাগছে। সাত বছর পর (এশিয়া কাপ) জিতলাম আমরা। বছর দেড়েক আগেও আমরা কোথাও খুঁজে পাওয়ার মতো দল ছিলাম না, এখন আমরা ভিন্ন এক দল, তারুণ্যে ঠাসা।’