পাকিস্তানের দীর্ঘদেহী পেসারদের নিয়ে আলোচনা শুরু করলে সবার আগে যাঁর নাম আসে, তিনি মোহাম্মদ ইরফান। ৭ ফুট ১ ইঞ্চির ইরফান শুধু পাকিস্তানের নন; আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসেরই সবচেয়ে লম্বা খেলোয়াড়।
ইরফান পাকিস্তানের হয়ে সর্বশেষ খেলেছেন ২০১৯ সালে। বর্তমানে তাঁর বয়স ৪১। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এখনো অবসর না নিলেও ‘বুড়ো’ বয়সে যে আর জাতীয় দলে ডাক পড়বে না, সেটা নিশ্চিত করে বলাই যায়।
পাকিস্তানের ক্রিকেটে ইরফান–অধ্যায় শেষ হলেও হঠাৎ তাঁর প্রসঙ্গ সামনে আনার কারণ আরেকজন দীর্ঘকায় পেসার। তবে তিনি পাকিস্তানি নন; ভারতীয়। নাম তাঁর নিশান্ত সারানু।
৬ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার এই বোলার বর্তমানে পাকিস্তান দলের বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে শাহিন আফ্রিদি–হারিস রউফদের সঙ্গে নেটে বল করছেন। পাকিস্তানের নেট অনুশীলন সেশনে অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন হায়দরাবাদ অনূর্ধ্ব–১৯ দলের এই সারানু।
ভিসা–জটিলতা কাটিয়ে গত বুধবার ভারতে পৌঁছেছে পাকিস্তান দল। বাবর আজম–মোহাম্মদ রিজওয়ানরা এখন আছেন ভারতের তেলাঙ্গানা রাজ্যের রাজধানী হায়দরাবাদে।
সেখানকার রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে প্রথম ৪ ম্যাচ (দুটি প্রস্তুতি ও দুটি মূল পর্ব) খেলবে পাকিস্তান; বাবরের দলকে সেখানে থাকতে হবে প্রায় সপ্তাহ। বলা যায়, হায়দরাবাদ এখন পাকিস্তান দলের ‘বেজক্যাম্প’। সেই ক্যাম্পে নেট বোলারদের মধ্যে আলাদাভাবে দৃষ্টি কেড়েছেন সারানু। কারণটা অবশ্যই তাঁর উচ্চতা।
২০১৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এটাই পাকিস্তানের প্রথম ভারত সফর। মোহাম্মদ নেওয়াজ আর আগা সালমান ছাড়া দলের কারও ভারতে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। তাই হায়দরাবাদে পা রাখার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই অনুশীলনে নেমে গেছে বাবরের দল।
সেখানেই দলটি নেট বোলার হিসেবে পায় তরুণ সারানুকে। পরশু পাকিস্তানের প্রথম অনুশীলন সেশনে রউফ–আফ্রিদির স্পেলের পরই বোলিং কোচ মরনে মরকেল ডেকে নেন সারানুকে।
পাকিস্তানের বোলাররা নিয়মিত ১৪০–১৫০ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিতে বোলিং করে থাকেন। সারানুকেও এর কাছাকাছি গতিতে বোলিং করতে বলেন মরকেল। সারানু সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারায় পাকিস্তান দলের সবাই তাঁকে নিয়ে সন্তুষ্ট। পাকিস্তানের পাশাপাশি আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসেরও বোলিং কোচ মরকেল। আইপিএলের আগামী আসরে সারানুকে লক্ষ্ণৌর নেট বোলার হিসেবে নিতে চান তিনি।
সারানু তাঁর স্পেলের বেশির ভাগ সময় টেলএন্ডারদের বোলিং করেছেন। স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তাঁর বলে অনুশীলন করেছেন শুধু ওপেনার ফখর জামান। ফখর মনে করেন, দৈহিক উচ্চতা সারানুর সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। বাউন্সারও ভালোই মারতে পারেন। বোলিংয়ের গতি বাড়াতে পারলে অনেক দূর যেতে পারবেন।
পরশু পাকিস্তানের নেটে বোলিংয়ের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন সারানু। অস্ট্রেলিয়ার দুই গতিতারকা মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্সকে নিজের আদর্শ মানেন জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এখন আমি ঘণ্টায় ১২৫–১৩০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করতে পারি। মরনে (মরকেল) স্যার আমাকে গতি বাড়াতে বলেছেন। আমাকে লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের নেট বোলার হিসেবে নেওয়া যায় কি না, তিনি সে চেষ্টাও করবেন।’
অতিথি দলের অনুশীলনে নেট বোলার হিসেবে এবারই প্রথম বোলিং করছেন না সারানু। এর আগে ভারত–নিউজিল্যান্ড দ্বিপক্ষীয় সিরিজের সময়ও নেটে বোলিং করেছেন। নিউজিল্যান্ডের গ্লেন ফিলিপসের সঙ্গে সে সময়ের একটি ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন সারানু। পাকিস্তান দল আরও অন্তত ১০ দিন হায়দরাবাদে থাকায় আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ব্যাটসম্যান বাবরকেও বোলিং করার সুযোগ পাবেন।
এই অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করে আরও অনেক দূর যেতে চান সারানু, ‘আমার প্রাথমিক লক্ষ্য হায়দরাবাদের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা। পরে সাদা বল–লাল বল সব সংস্করণেই ক্যারিয়ার গড়তে চাই।’
পাকিস্তান দল হায়দরাবাদে এরই মধ্যে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে। গতকাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৪৫ রানের পাহাড় গড়েও হারতে হয়েছে। ৩ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাবরদের শেষ প্রস্তুতি ম্যাচ। আর হায়দরাবাদে বিশ্বকাপের মূল পর্বের প্রথম দুটি ম্যাচ ৬ অক্টোবর (প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস) ও ১০ অক্টোবর (প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা)।
এবারের বিশ্বকাপে নেট বোলার হিসেবে কাজ করা বোলারদের মধ্যে সারানুর আগে আলোচনায় এসেছিলেন লোকেশ কুমার। সারানু উচ্চতা দিয়ে সবার নজরে এলেও নেদারল্যান্ডস দলের সঙ্গে থাকা লোকেশ এসেছেন ভিন্ন কারণে। নেট বোলার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি খাবার সরবরাহও (ফুড ডেলিভারি ম্যান) করে থাকেন ২৯ বছর বয়সী লোকেশ। তিনি মূলত একজন ‘চায়নাম্যান’ বোলার।