মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে আজও কী এমন জয়ের আনন্দে ভাসতে পারবে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা?
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে আজও কী এমন জয়ের আনন্দে ভাসতে পারবে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা?

মাউন্ট মঙ্গানুইতেই নতুন ইতিহাসের অপেক্ষা

মাউন্ট মঙ্গানুই, বে ওভাল। বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুসারীরা নিউজিল্যান্ডের এই ভেন্যুকে কখনোই ভুলতে পারবেন না। বাংলাদেশ দল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডকে টেস্টে হারিয়েছে। দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজেও আছে বড় বড় অর্জন। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে, চ্যাম্পিয়ন ট্রফির সেমিফাইনাল

বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপও জিতেছে। উল্লেখযোগ্য সাফল্য আছে নারী ক্রিকেটেও। সবকিছুর মধ্যে বেশি জ্বলজ্বলে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বে ওভালের সেই টেস্ট জয়। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দেয় মুমিনুল হকের বাংলাদেশ। সাকিব, তামিম, মাহমুদউল্লাহদের অনুপস্থিতিতে একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটার নিয়ে সেদিন বিশ্ব ক্রিকেটকেই চমকে দিয়েছিল বাংলাদেশ।

সেই বে ওভালেই আজ আরও একবার বিশ্বকে চমকে দেওয়ার সুযোগ বাংলাদেশের সামনে। এবারের নিউজিল্যান্ড সফরে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ জেতায় বাংলাদেশ সিরিজে এগিয়ে আছে ১-০ ব্যবধানে। ছোট সংস্করণের খেলায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাটিতে প্রথম জয় সেটি। সিরিজের পরের দুই ম্যাচের ভেন্যু যেহেতু মাউন্ট মঙ্গানুই, নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে কোনো সংস্করণে প্রথমবারের মতো সিরিজ হারানোর দু–দুটি সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ। কে জানে, আজই হয়তো মধুর স্মৃতিবিজড়িত বে ওভালে আরেকটি ইতিহাস গড়ে ফেলবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের সামনে আজ টি–টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের হাতছানি

বাংলাদেশ দলের অন্দরমহলেও নিশ্চয়ই এখন এমন আশার বুদবুদ। নেপিয়ারে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে পাওয়া জয়ের ধারা বজায় রেখে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচেও জিতেছে বাংলাদেশ। তিন দিনের ব্যবধানে নিউজিল্যান্ডকে তাদের আঙিনায় পরপর দুবার হারিয়ে বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। তবে অতি আত্মবিশ্বাসেও ভাসছে না নাজমুল হোসেনের দল। উল্টো যথেষ্ট সাবধানীই বলতে হয় তাঁদের। ক্রিকেটাররা জানেন, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড বলেই তাদের বারবার উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।

কাল বিসিবির পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় দলের মানসিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে এ কথাই বললেন দলের সহকারী কোচ নিক পোথাস, ‘বিশ্বের অন্যতম সেরা দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের সুবর্ণ সুযোগ আমাদের সামনে। ছেলেদের আগের উদ্যম নিয়েই মাঠে নামতে হবে। তবে ভুলে যাবেন না তারা (নিউজিল্যান্ড) বিশ্বের অন্যতম সেরা দল। চ্যালেঞ্জটা আমরা উপভোগ করছি। আপনি যে বল মোকাবিলা করছেন, শুধু সেটা নিয়েই ভাবতে পারেন। পরের দুই বল কী হবে, তা ভাবতে পারবেন না, কারণ ভবিষ্যতের নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে নেই। আমরা তাই বর্তমান নিয়েই ভাবছি। আমরা অবশ্যই সেরা ফলাফলটা পেতে চাই।’

নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে টি–টোয়েন্টিতেও জিতেছে বাংলাদেশ

নিউজিল্যান্ডকে সিরিজ হারাতে পারলে তা হবে বিদেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এর আগে বিদেশের মাটিতে আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ দল। ২০১৮ সালে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে পাওয়া জয় এখন পর্যন্ত দ্বিপক্ষীয় সিরিজে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এর বাইরে টি-টোয়েন্টির যত বড় জয়, সবই এসেছে ঘরের মাঠে। এ বছরের মার্চে টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ধবলধোলাই করেছে বাংলাদেশ। এর আগে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকেও সিরিজে হারিয়েছে। কিন্তু দেশের বাইরের কন্ডিশনে টি-টোয়েন্টির আঁধার কাটছিল না। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জিততে পারলে সে আঁধার কিছুটা কাটবে নিশ্চয়ই।

সে জন্য বোলারদের ভূমিকাটাই হবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের যা সাফল্য, তার বেশির ভাগই এসেছে বোলারদের হাত ধরে। নেপিয়ারে প্রথম টি–টোয়েন্টি জয়েও তাই। এর আগে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচের জয়টাও বোলারদের সৌজন্যেই এসেছিল। বাংলাদেশ তাই আজ আরও একবার শরীফুলের নতুন বলের স্পেলের দিকে তাকিয়ে থাকবে। শেখ মেহেদী হাসানকে নিয়ে আরও একবার ম্যাচের প্রথম ১০ ওভার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেন অধিনায়ক নাজমুল, মোস্তাফিজুর রহমানকেও হয়তো ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে ব্যবহার করা হবে শেষ ১০ ওভারে।

সমস্যা হলো বাংলাদেশের এই ছকটা দেখে ফেলেছে নিউজিল্যান্ড। বে ওভালের ব্যাটিং কন্ডিশনে এই পরিকল্পনার পাল্টা ব্যবস্থা নিশ্চয়ই নেবে কিউইরা। বাংলাদেশের আসল পরীক্ষাটা হবে তখনই।