ডাগআউট থেকে

কোহলি দেখাল কেন সে এত বড় ক্রিকেটার

বিশ্বকাপে আজ দুটি ম্যাচ ছিল। কিন্তু আলোচনায় ছিল শুধু ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচটি। এই দুই দলের লড়াই মানেই টানটান উত্তেজনা, দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সম্প্রতি এ নিয়ে তিনটি পাকিস্তান-ভারত ম্যাচ দেখলাম।

এশিয়া কাপে দুটি, বিশ্বকাপে একটি। এশিয়া কাপে প্রথম ম্যাচে ভারত জিতল ২ বল বাকি থাকতে। এরপরের ম্যাচে পাকিস্তান ১ বল বাকি থাকতে এবং আজ ম্যাচের শেষ বলে এসে ভারত পেল অভাবনীয় এক জয়।

এ দুই দলের খেলা মানেই চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কাগজে–কলমে দুই দলের শক্তি যেমনই থাকুক, কে জিতবে, সেটা আগে থেকে বলে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সে কারণেই পাকিস্তান-ভারত ম্যাচ এতটা দর্শকনন্দিত ও জনপ্রিয়। এমন দিনেই বিরাট কোহলি রচনা করল ক্রিকেটীয় মহাকাব্য।

মেলবোর্নে ৯০ হাজার দর্শক আজ কি ম্যাচটাই না দেখল! খেলাটা মাত্র ২০ ওভারের অথচ এর মধ্যেও এতটা উত্থান–পতন থাকতে পারে, এটা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। ম্যাচের শুরুতে দারুণ পেস বোলিং দেখলাম। পাকিস্তান তাদের সেরা দুই ব্যাটসম্যানকে পাওয়ারপ্লেতেই হারিয়ে বসে। মনে হচ্ছিল পাকিস্তান সেখান থেকে আর বেরোতে পারবে না।

শান মাসুদ ও ইফতেখার আহমেদের ব্যাটিংয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তান

বাবর ও রিজওয়ানের দ্রুত আউট মানেই পাকিস্তানের দারুণ চাপে পড়ে যাওয়া। কিন্তু সেখান থেকে শান মাসুদ ও ইফতেখার আহমেদ দারুণ খেলেছে। ওদের মিডল অর্ডার যে খুব দুর্বল নয়, সেটা আজ তারা প্রমাণ করেছে। শেষ ১০ ওভারে আজ পাকিস্তান মিডল ও লেট অর্ডার ৯৯ রান করেছে।

খেয়াল রাখতে হবে, তখন তাদের অসম্ভব চাপে খেলতে হয়েছে, আবার ইনিংস গড়তে হয়েছে। শুরুর দিকে মনে হচ্ছিল খুব ভালো খেললে পাকিস্তান ১৩০-১৪০ করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রানটাকে ১৫৯-এ নিয়ে যায়।

পেস বোলিংটা পাকিস্তানের গর্বের জায়গা। মেলবোর্নের কন্ডিশনে তারা ভালো করবে, এটাই প্রত্যাশিত ছিল। হয়েছেও ঠিক তাই। ৩১ রানে ভারতের ৪ উইকেট, নতুন বলেই মনে হচ্ছিল ম্যাচটা পাকিস্তানের। এই বোলিংয়ের বিপক্ষে এমন শুরুর পর ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। মনেও হচ্ছিল এখান থেকে ভারতের জয়ের আশা করা একটু বাড়াবাড়িই। একটা সময় তো আস্কিং রানরেট বেড়ে ১৫ ছুঁয়েছিল। শেষ ৩ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ৪৮ রান।

সেখান থেকে কোহলি যা করেছে, সেটা কল্পনাতীত। এটা আসলে তার মানের ব্যাটসম্যানের পক্ষেই সম্ভব। ৫৩ বলে অপরাজিত ৮২ রান, সে নিজেও ইনিংসটিকে নিজের ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস বলেছে। তাকে যখন ম্যাচ শেষে জিজ্ঞেস করা হলো এই অবিশ্বাস্য জয়ের ব্যাপারে, সে কিন্তু কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। সে যে ব্যাখ্যা করতে পারছি না ম্যাচের গল্পটা, সেটা সে বারবার বলছিল। এতেই বোঝা যায় যে কী অসম অবস্থা থেকে সে ম্যাচটা বের করেছে।

মেলবোর্নের মাঠ কিন্তু বিশাল। এখানে বাউন্ডারি মারা কঠিন। দৌড়ে ২-৩ এমনকি ৪ রানও হয় এই মাঠে। কিন্তু আজ ম্যাচটা এমন জায়গায় চলে যায়, যেখানে বাউন্ডারি ছাড়া ভারতের জয়ের কোনো উপায় ছিল না। কোহলি সেই অবিশ্বাস্য কাজটা করেছে স্মরণীয় ভঙ্গিমায়। ব্যক্তিগত ৫০ রান থেকে ৮২ রানে যেতে কোহলি মাত্র ১০ বল খেলেছে। কী আক্রমণাত্মক ব্যাটিংটা করেছে, সেটা বোঝা যায় এখানেই। কোহলিকে ধন্যবাদ, এটা ওর প্রাপ্য।

কোহলি কখনই হারতে চায় না বলছেন নাজমূল আবেদীন

পাকিস্তানের জন্য ম্যাচটা দুঃস্বপ্নই হয়ে থাকবে। তারা হয়তো আজ একজন বাড়তি অনিয়মিত বোলারের অভাব বোধ করেছে। অথবা শেষ ওভারে মোহাম্মদ নেওয়াজের নো বলের আক্ষেপ করবে। কিন্তু ক্রিকেট এমনই। ক্রিকেটের মহত্ত্ব এটাই। উত্থান ও পতনের যে চিত্রটা আজ দেখলাম, সেটাই হয়তো ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন।

এতেই খেলোয়াড়ের ব্যক্তিত্ব, চরিত্র ফুটে ওঠে। কোহলির মানসিকতার অনেক প্রশংসা শুনি, সেটার যে যৌক্তিক কারণ আছে, আজ আবার প্রমাণিত হলো। সে কখনোই হারতে চায় না। যেকোনো পরিস্থিতি থেকেই জয়ের স্বপ্ন দেখে। বেশির ভাগ সময় জয়ের পথ খুঁজেও পায়। আজ হারিসকে লং অন দিয়ে বুক বরাবর বলে যে ছক্কাটা সে মেরেছে, সেই অভাবনীয় শটটাই পুরো গল্পটা বলে দেয়। কোহলি দেখাল কেন সে এত বড় ক্রিকেটার।

কোহলি কিন্তু নায়ক। কোটি কোটি মানুষ ওর ভক্ত। ওর জবাবদিহির ব্যাপার আছে, যেহেতু ভারতের মতো দলে খেলে। কিন্তু দিন শেষে নিজের কাছে প্রমাণ করার একটা ব্যাপার থাকে। আমি এখনো সেরা, নিজেকে এ কথা বলতে পারা। কোহলির মানের ক্রিকেটারদের জন্য সবচেয়ে বড় তৃপ্তির জায়গা এটা। অনেকে প্রশংসা করবে, সেটা ভালো লাগবেই। কিন্তু নিজের আত্মতৃপ্তির ব্যাপারটা তাদের জন্য সবচেয়ে বড় কথা। এ কারণেই ওরা এত বড় ক্রিকেটার।

দিনের আরেক ম্যাচে কিন্তু শ্রীলঙ্কা দেখিয়ে দিয়েছে কেন তারাও হালকাভাবে নেওয়ার মতো দল নয়। আজ আয়ারল্যান্ডকে তারা সহজেই হারিয়েছে। বাংলাদেশও কাল প্রথম পর্ব থেকে আসা দল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলবে।

বাংলাদেশেরও উচিত ডাচদের বিপক্ষে ভালো খেলা, জয় নিয়ে মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়া। কথা হচ্ছে আমরা পারব কি না। আমি আশা করছি পারব। বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে শুনেছি। কার্টেল ওভার হতে পারে ম্যাচ। যদি তাই হয়, সেটা বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে না। সে জন্য আশা করছি, ভালো আবহাওয়ায় পুরো ম্যাচটাই হবে। দলের জন্য শুভকামনা রইল।