২০২১ সালের নভেম্বরে হোবার্টে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট খেলার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। আর এ বছরের মার্চে সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেলার কথা ছিল তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। এর কোনোটিই খেলেনি অস্ট্রেলিয়া। তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে নারীদের নিয়ে রক্ষণশীল নীতির বিরোধিতা করে দুটি সিরিজই বাতিল করে দেয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)।
তবে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ না খেললেও আইসিসির টুর্নামেন্টে নিয়মিতই আফগানিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। গত বছর টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে খেলেছিল দুই দল। এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপে আগামীকাল মুখোমুখি হচ্ছে মুম্বাইয়ে।
রাষ্ট্র আফগানিস্তানের নীতির কারণে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বাতিল করা, আবার একই দলের সঙ্গে টুর্নামেন্টে খেলা—অস্ট্রেলিয়ার এমন আচরণকে অনেকে দ্বিমুখী নীতি বলে অভিহিত করছেন। এ নিয়ে আজ মুম্বাইয়ে প্রশ্নের মুখেও পড়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান স্টিভেন স্মিথ।
অস্ট্রেলিয়ার দ্বিমুখী নীতি নিয়ে এরই মধ্যে দলটিকে খোঁচা দিয়ে পোস্ট করেছেন আফগান পেসার নাভিন–উল–হক। মুম্বাইয়ে আফগানিস্তান–অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ সামনে রেখে ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে নাভিন লিখেছেন, ‘দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বাতিল করার পর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে কী করে, তা দেখার অপেক্ষায়।’ সঙ্গে হ্যাশট্যাগে জুড়ে দেন প্রশ্ন—‘মানবাধিকার না ২ পয়েন্ট’।
আজ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়া দলের সংবাদ সম্মেলনে স্মিথকে এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেন, এ বছরের শুরুর দিকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ বাতিল করার মতো শক্তি দেখিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। গত কয়েক মাসে দেশটির পরিস্থিতির আদৌ পরিবর্তন না হলেও আগামীকালের ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্তে কি আপনি অবাক হয়েছেন?
কে কার বিপক্ষে কখন খেলবে, এই সিদ্ধান্ত মূলত ক্রিকেট বোর্ড নিয়ে থাকে। স্মিথও আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ বাতিল বা খেলার সিদ্ধান্তের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বলে জানিয়েছেন, ‘এই প্রশ্নের জবাব আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দিতে পারবে। হ্যাঁ, টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমরা ওদের বিপক্ষে খেলেছি, আগামীকালও খেলব। তবে এই প্রশ্নটা আমার জন্য নয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জন্য।’
এর আগে নাভিনের সমালোচনার জবাব দিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। দেশটির সংবাদমাধ্যম নিউজ কর্পকে সিএর এক মুখপাত্র বলেন, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিএ মার্চে ওয়ানডে সিরিজ না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তালেবানের একটি ঘোষণার কারণে; যেখানে মেয়েদের শিক্ষা, চাকরির সুযোগ, পার্ক–জিমনেসিয়ামে প্রবেশাধিকারসহ নারী অধিকারের ওপর বাধা আরোপ করা হয়েছিল। দ্বিপক্ষীয় সিরিজ ও বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। দ্বিপক্ষীয় সিরিজ সিএর নিয়ন্ত্রণে, কিন্তু বিশ্বকাপ আইসিসির অধীন, যা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে।’
ম্যাচ বর্জনের নজির অবশ্য বিশ্বকাপ ক্রিকেটেও আছে। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে নিরাপত্তা হুমকির কারণ দেখিয়ে শ্রীলঙ্কায় খেলতে যায়নি অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০০৩ বিশ্বকাপে একই কারণ দেখিয়ে জিম্বাবুয়েতে যায়নি ইংল্যান্ড। এসব ক্ষেত্রে বয়কট করা দল প্রতিপক্ষকে দুই পয়েন্ট ছেড়ে দিয়েছে।
এবারের আসরে অস্ট্রেলিয়া টানা পাঁচ ম্যাচ জিতলেও এখন পর্যন্ত সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে পারেননি। শেষ দুই ম্যাচ থেকে অন্তত একটি জয় দরকার প্যাট কামিন্সদের। ৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে ৬ নম্বরে আছে আফগানিস্তান।