সাকিব আল হাসান
সাকিব আল হাসান

সাকিবকে মিরপুরে বিদায় দিতে পেরে আনন্দিত হান্নানও

সাদা পোশাকে বাংলাদেশের হয়ে মিরপুরে তিনি প্রথম খেলতে নেমেছিলেন ২৫ মে, ২০০৭ সালে, ভারতের বিপক্ষে। দেশের হয়ে সাকিব আল হাসানের টেস্ট অভিষেক অবশ্য এর সপ্তাহখানেক আগেই হয়ে গেছে, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। নামটা তখন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম ছিল না, ছিল বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম।


ভারতের বিপক্ষে অভিষেক সিরিজে সেই দুই টেস্টের পর সাকিব দেশের মাটিতে আরও ৪৩টি টেস্ট খেলেছেন, যার ২০টি মিরপুর শেরেবাংলায়। তাঁর কত স্মৃতি, কত আবেগ জড়িয়ে এ মাঠের সঙ্গে। সেই সাকিব যখন ২১ অক্টোবর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আরও একবার মিরপুরে খেলতে নামবেন, সব আবেগ আর সব স্মৃতি কি একসঙ্গে ঢেউ হয়ে ফিরে আসবে? আসতেই পারে। মিরপুরে নিজের ২২ নম্বর টেস্টটা যে সাকিবের ক্যারিয়ারেরও শেষ টেস্ট হতে যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টটা খেলেই বাংলাদেশের সাদা জার্সিটা তুলে রাখবেন সাকিব।

আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দল ঘোষণার পর নির্বাচক হান্নান সরকারও বললেন সাকিবের ইচ্ছা পূরণ করতে পেরে আনন্দের কথা, ‘আমরা সবাই জানি, এটা একটা সরকারি ইস্যু ছিল, বিসিবির ইস্যু ছিল। ক্রিকেট বোর্ড থেকে আমরা যখন গ্রিন সিগন্যাল পেলাম, সাকিবকে দলে রাখা যাবে, স্বাভাবিকভাবেই আমরা তাকে দলে রেখেছি। এটা আমাদের জন্য একটা বিশাল আনন্দের ব্যাপার যে আমাদের এ রকম একজন কিংবদন্তি খেলোয়াড়, সে মিরপুর থেকে, যেটাকে আমরা আমাদের হোম অব ক্রিকেট বলি, সেখান থেকে বিদায় নিচ্ছে। এটা শুধু সাকিবের জন্যই নয়, বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের সবার জন্যই পাওয়া।’

বিসিবির নির্বাচক হান্নান সরকার


হান্নানের আশা, বিদায়ী ম্যাচটা সাকিব দারুণভাবে রাঙিয়ে যাবেন, ‘আশা করছি, এই ম্যাচটা আমাদের জন্য স্মরণীয় এক ম্যাচ হয়ে থাকবে। যে ম্যাচে সাকিব নিজের ভালো পারফরম্যান্সের পাশাপাশি দলের ভালো কিছুতে ভূমিকা রাখবে। আমি মনে করি, এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য একটা বড় প্রাপ্তি হতে যাচ্ছে যে এই ধরনের লেজেন্ড খেলোয়াড় ঘরের মাঠ থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছে।’

মিরপুর থেকেই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলতে চান, এ ঘোষণা সাকিব দিয়েছিলেন সদ্য সমাপ্ত ভারত সিরিজের মাঝপথেই, ২৬ সেপ্টেম্বর কানপুর টেস্ট শুরুর আগে। তবে সত্যি সত্যি তাঁর ইচ্ছা পূরণ হয় কি না, সেটা নিয়ে কিছুটা জটিলতা ছিল তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় ও বাংলাদেশে সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে। বিলুপ্ত দ্বাদশ সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন সাকিব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাকিবের বিরুদ্ধে একটা হত্যা মামলা হয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই দেশে ফিরে সেই মামলায় আটক হওয়ার ঝুঁকি সাকিব নিতে চাননি। টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণার সময়ই তাই একরকম শর্ত দিয়েছিলেন, দেশে ফেরা এবং নিরাপদে আবার দেশ ছেড়ে যাওয়ার নিশ্চয়তা পেলেই শুধু তাঁর মিরপুরে শেষ টেস্ট খেলার ইচ্ছা পূরণ হতে পারে।

সাকিব আল হাসান


এরপর সাকিব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিজের নীরবতা ও আন্দোলন নিয়ে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করেছেন ফেসবুক স্ট্যাটাসে। সরকারের পক্ষ থেকেও তাঁকে দেশে ফিরলে আটক না করা এবং নিরাপদে আবার দেশ ছেড়ে যাওয়ার একধরনের নিশ্চয়তাই দেওয়া হয়েছে। এরপর আর কোনো সন্দেহ ছিল না যে সাকিব মিরপুর টেস্টের দলে থাকবেন এবং মিরপুর থেকেই বিদায় বলবেন। আজ মিরপুর টেস্টের জন্য বাংলাদেশ দল ঘোষণার পর যা নিয়ে আর কোনো সংশয়ই থাকল না।