‘এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে কেমন দেখছেন’—প্রশ্নটা করতেই মুঠোফোনের ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাসের শব্দ। আফতাব আহমেদ কিছু বলার আগেই বোঝা গেল জাতীয় দলের সাবেক ব্যাটসম্যানের হতাশাটা।
বছরখানেক আগে কোচিং ক্যারিয়ার গড়তে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন আফতাব। তার আগে কোচিং করিয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। বর্তমান জাতীয় দলের অনেকের সঙ্গে তিনি খেলেছেন, পরে কোচও হয়েছেন তাঁদের। ভারত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সে আফতাব এতটাই হতাশ যে এর কোনো ব্যাখ্যাই যেন তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। যুক্তরাষ্ট্র থেকেই কাল হোয়াটসঅ্যাপে প্রথম আলোকে বলছিলেন, ‘কী বলব বলুন? খুবই হতাশাজনক পারফরম্যান্স।’
বাংলাদেশের তো কোনো প্রস্তুতিই ছিল না! তিন-চার মাস আগেই কিছু নতুন খেলোয়াড় নেওয়া হলো, এটা তো আসলে বিশ্বকাপের আদর্শ প্রস্তুতি হতে পারে না।আফতাব আহমেদ, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার
একটু থেমে আফতাব প্রশ্ন তুললেন বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি নিয়েই, ‘অনেক নতুন খেলোয়াড় নেওয়া হয়েছে, যারা এক বছর বা ছয় মাস আগেও কোথাও ছিল না। বিশ্বকাপ এমন একটা জায়গা, যেখানে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এলেও মাঝেমধ্যে সেটা কাজে দেয় না। আর বাংলাদেশের তো কোনো প্রস্তুতিই ছিল না! তিন-চার মাস আগেই কিছু নতুন খেলোয়াড় নেওয়া হলো, এটা তো আসলে বিশ্বকাপের আদর্শ প্রস্তুতি হতে পারে না।’ ব্যর্থতার জন্য তাই ক্রিকেটারদের দায় দিতে চান না আফতাব, ‘বিশ্বকাপ কমপক্ষে চার বছরের একটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার। হুট করে একজন খেলোয়াড়কে খেলিয়ে দিয়ে তার ওপর দোষ চাপানো ঠিক নয়।’
জাতীয় দলের সাবেক বাঁহাতি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়রও ক্লাব ক্রিকেট খেলতে বর্তমানে আছেন ইংল্যান্ডে। সেখান থেকেই দেখছেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের হতাশাজনক পারফরম্যান্স। মুঠোফোনে প্রসঙ্গটা তুলতেই ঘুরেফিরে একটা ইংরেজি শব্দই ব্যবহার করছিলেন এনামুল, ‘ডিজাস্টার, একদমই ডিজাস্টার...।’ তাঁর চোখে বিপর্যয়ের কারণ একাধিক, ‘ফ্ল্যাট উইকেটে আমাদের শক্তি কেমন, তা এই বিশ্বকাপে সামনে এল। আমরা ফ্ল্যাট উইকেটে রান করতে পারি না, উইকেটও নিতে পারি না। কেউ যদি আমাদের বিপক্ষে ৩২০ করে ফেলে, তাহলে সেটা আমরা তাড়া করতে পারি না। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটেও খুব বেশি বড় রান তাড়া করার নজির নেই।’
লিটনের কথা আলাদা করেই বলি। আমার কাছে মনে হয়নি যে সে দায়িত্ব নিয়ে খেলেছে। যদিও এক ম্যাচে রান করে পাঁচ ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার ধারাটা নতুন নয়। ওই মানের ক্রিকেটার হতে হলে ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে হবে।এনামুল হক জুনিয়র, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার
এনামুলের ধারণা, ‘মাঠের বাইরের কিছু ঝামেলাও বিশ্বকাপে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’
জাতীয় দলের সাবেক ব্যাটসম্যান তুষার ইমরানের চোখে ধারাবাহিক ব্যাটিং ব্যর্থতার অন্যতম কারণ বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যানদের জায়গা পরিবর্তন, ‘শান্ত (নাজমুল হোসেন) ৩ নম্বরে ভালোই রান করছিল। জায়গা পরিবর্তন হওয়াতে নিশ্চয়ই তাকে নতুন করে মানিয়ে নিতে হচ্ছে। দ্বিধায় ভুগছে এই পজিশনে রান করতে পারবে কি পারবে না। মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহ বাদে প্রথম থেকেই অনেকে রানের মধ্যে নেই। একমাত্র তারাই একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ধারাবাহিকভাবে খেলেছে, রান করেছে।’ ওপেনিংয়ে অভিজ্ঞ লিটন দাসের ব্যর্থতার দিকেও আঙুল তুলেছেন তিনি, ‘লিটনের কথা আলাদা করেই বলি। আমার কাছে মনে হয়নি যে সে দায়িত্ব নিয়ে খেলেছে। যদিও এক ম্যাচে রান করে পাঁচ ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার ধারাটা নতুন নয়। ওই মানের ক্রিকেটার হতে হলে ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে হবে।’
সব দলেই ৩ নম্বর ব্যাটসম্যান কে, ৪ নম্বরে কে, সেটা আমরা সবাই জানি। কারণ, এই জায়গাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে সেখানে কোহলি খেলবে, ইংল্যান্ডে রুট…এসব একদম নিশ্চিত। কিন্তু আমরা জানি না আমাদের দলের কে পরের ম্যাচে তিনে খেলবে।অলক কাপালি, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার
জাতীয় দলের আরেক সাবেক ব্যাটসম্যান অলক কাপালির কথায়ও একই সুর। বিশ্বকাপে ব্যাটিং অর্ডারের অদলবদল তাঁর কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকছে। টি-টোয়েন্টির কৌশল কেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতো জায়গায় কাজে লাগানো হলো, তার ব্যাখ্যা খুঁজছেন তিনি, ‘আপনি বিশ্বকাপের প্রতিটি দল দেখুন। সব দলেই ৩ নম্বর ব্যাটসম্যান কে, ৪ নম্বরে কে, সেটা আমরা সবাই জানি। কারণ, এই জায়গাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে সেখানে কোহলি খেলবে, ইংল্যান্ডে রুট…এসব একদম নিশ্চিত। কিন্তু আমরা জানি না আমাদের দলের কে পরের ম্যাচে তিনে খেলবে।’
অলক অবশ্য ঘোর অন্ধকারেও আলো খুঁজছেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এখনো তিন ম্যাচ বাকি। কঠিন হলেও এই তিন ম্যাচে কিছু ইতিবাচকতা দেখার আশা তাঁর, ‘বড় দলের সঙ্গে হারা এক জিনিস, নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে হারা আরেক জিনিস। এর চেয়ে খারাপ তো কিছু হতে পারে না। তবে এটা নিয়ে যদি বসে থাকি, তাহলে আরও খারাপ হবে। নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে কিন্তু আরেকটা বড় দলও হেরেছে। ওরাও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমাদেরও সেই চেষ্টা করতে হবে।’