দুয়ারে কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ, এ কারণেই প্রশ্নটা সামনে চলে এসেছে। এটা ঠিক যে প্রতিটি বিশ্বকাপের আগেই আপনার সামনে প্রশ্নটা এসে হাজির হয়, তবু আরেকবার! আসছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেরা বোলার হতে পারেন কে?
যশপ্রীত বুমরা, মিচেল স্টার্ক, কাগিসো রাবাদা—ঘুরেফিরে মাথায় এই নামগুলোই আসার কথা। এই বিশেষ কয়েকজনের মধ্য থেকেই যদি বাছাই করতে বলা হয়, তাহলে বোধ হয় সেরা বোলারের প্রশ্নে বুমরাকেই বেছে নেবেন বেশির ভাগ মানুষ। সদ্য শেষ হওয়া রান উৎসবের আইপিএলেও বুমরা যা করেছেন, তাঁকে বেছে না নিয়ে উপায় কী! যে টুর্নামেন্টে ওভারপ্রতি ৯ রানের বেশি করে উঠেছে, সেখানেই বুমরা রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি ৬.৪৮ করে, উইকেট নিয়েছেন ২০টি।
এবার আরেকটা প্রশ্ন—বিশ্বকাপের সম্ভাব্য সেরা বোলার বুমরা আইসিসি টি-টোয়েন্টি বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে কত নম্বরে আছেন? আইসিসির ওয়েবসাইটে গিয়ে র্যাঙ্কিং–পর্বে ঢুকলে সহসাই বুমরাকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ১০, ২০, ৩০...নাহ্, পাওয়া যাচ্ছে না বুমরাকে! এত দ্রুতই বুমরার নামটি খুঁজে পাবেনই–বা কী করে, ৫০, ৬০, ৭০...১০০ জনের মধ্যেও যে নেই তিনি।
বুমরা আইসিসি টি-টোয়েন্টি বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে আছেন ১০৩ নম্বরে। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ২০২৩ সালের আগস্টে। তখনো বুমরা আইসিসি বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে ছিলেন ৮২ নম্বরে। এরপর অনেক দিন ম্যাচ না খেলায় রেটিং পয়েন্ট কমেছে তাঁর।
এবার মিচেল স্টার্কের কথায় আসা যাক। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে স্টার্ক কী করতে পারেন বা কী করেন, সেটা নতুন করে আলোচনার প্রয়োজন নেই। সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলের প্রথম কোয়ালিফায়ার ও ফাইনালের পরিসংখ্যান দেখে নিতে পারেন। কোয়ালিফায়ারে ৩৪ রানে ৩ আর ফাইনালে ১৪ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। দুটি ম্যাচেই ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও অস্ট্রেলিয়া স্টার্কের দিকেই তাকিয়ে থাকবে।
বলতে পারেন, স্টার্ক টি-টোয়েন্টি বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে কত নম্বরে আছেন? ৪৮ নম্বরে আর দক্ষিণ আফ্রিকার রাবাদা আছেন ৩৭ নম্বরে। অথচ বিশ্বকাপে দলের মূল বোলার হিসেবে থাকবেন তাঁরাই।
আবার আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে বোলারদের তালিকায় শুরুর দিকে আছেন, কিন্তু দলে জায়গা হবে কি না, নিশ্চিত নন, এমন উদাহরণও আছে। এই যেমন ভারতের অক্ষর পাটেল। এই স্পিনার আছেন র্যাঙ্কিংয়ের ৪ নম্বরে। তবে দলের সমন্বয়ের কারণে রবীন্দ্র জাদেজার কাছে তাঁর জায়গা হারানোর সম্ভাবনাই বেশি। আর যেই জাদেজার কাছে তিনি জায়গা হারাতে যাচ্ছেন, সেই জাদেজা আছেন র্যাঙ্কিংয়ের ১৪৭ নম্বরে। র্যাঙ্কিংয়ের ৫ নম্বরে থাকা আরেক স্পিনার রবি বিষ্ণুই তো ভারতের বিশ্বকাপ দলে জায়গাই পাননি!
ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রেও দৃশ্যপটের খুব বেশি পরিবর্তন হয় না। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিরাট কোহলি সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে হতে যাওয়া বিশ্বকাপেও সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হতে পারেন কোহলিই। কারণ, তাঁর ছন্দ। আসলে কোহলির ফর্মের প্রসঙ্গ না তোলাই ভালো। আইপিএলে ১৫৪ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করে রান করেছেন ৭৪১, গড় ৬১.৭৫। অথচ কোহলি আছেন ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ের ৪৬ নম্বরে।
ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মারও র্যাঙ্কিংয়ে অবস্থা খুব বেশি সুখকর নয়। রোহিতের অবস্থান ৫১ নম্বরে। তাঁদের দুজনের কেউই ২০২৩ সালে কোনো টি-টোয়েন্টি খেলেননি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে সর্বশেষ আফগানিস্তান সিরিজ দিয়ে দুজনের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট প্রত্যাবর্তন হয়েছে। দীর্ঘদিন টি-টোয়েন্টি ম্যাচ না খেলার ছাপ পড়েছে র্যাঙ্কিংয়ে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফেরার আগে তাঁদের সর্বশেষ ম্যাচ ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। তখনো তাঁদের কেউই শীর্ষ দশে ছিলেন না।
ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ে ৬ নম্বরে আছেন যশস্বী জয়সোয়াল, ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই সর্বোচ্চ স্থানে। রোহিত-কোহলি ইনিংস ওপেন করলে সমন্বয়ের কারণে তিনি একাদশে সুযোগ না–ও পেতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের লিটন দাসের নামও আনা যেতে পারে। টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ে লিটনের অবস্থান ৩৫ নম্বরে, যা বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো। টি-টোয়েন্টি দলে লিটনের বর্তমান অবস্থান কী, সেটা নিশ্চয়ই বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না। ছন্দ হারিয়ে জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকেই একাদশে অনিয়মিত তিনি।
অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে আছেন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান। দীর্ঘদিন ধরেই সাকিব শীর্ষস্থানটা ধরে রেখেছেন। কিন্তু বিশ্বকাপ শেষে সেরা অলরাউন্ডারের প্রশ্নে সাকিবের নামটা বলা যাবে, এই বাজি খুব বেশি মানুষ হয়তো ধরবেন না!
সাম্প্রতিক সময়ে পারফরম্যান্সের বিচারে কে বা কারা সেরা—সেটা তুলে ধরতেই আইসিসি মূলত র্যাঙ্কিং পদ্ধতি চালু করেছে। কিন্তু আইসিসি র্যাঙ্কিং–টেবিল সব সময় সঠিক বার্তা দেয় না।
অতীতে দেখা গেছে, এখনো দেখা যাচ্ছে যে র্যাঙ্কিংয়ে কোনো সংস্করণের কোনো বিভাগের শীর্ষ ক্রিকেটার মানেই এটা নয় যে তিনিই সেই সংস্করণের সেই বিভাগের সেরা ক্রিকেটার। বড় দলগুলোও তেমনটা মনে করে না। যে কারণেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের তালিকায় ২ নম্বরে থাকার পরও ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম দুই ম্যাচের একাদশে অ্যারন ফিঞ্চের সুযোগই হয়নি। ইংল্যান্ডের ডেভিড ম্যালান তো ১ নম্বর ব্যাটসম্যান থাকাকালীনও ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি দলে থিতু হতেই পারলেন না!
এবারের বিশ্বকাপেও কি এমন কিছু অপেক্ষা করছে? সময়ই দেবে এর উত্তর।