‘আপনারা জেতা শুরু করবেন কবে থেকে? তিন ম্যাচ পর?’—মজা করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ফ্র্যাঞ্চাইজির এক কর্মকর্তাকে আজ এ প্রশ্ন করা হয়। তিনিও উত্তরে বললেন, ‘হ্যাঁ, তাই তো! ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে না!’
বিপিএলের সফলতম দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের আমেজটা এখন এমনই। এবারের বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে হেরেছে লিটন দাসের দল। গত দুই মৌসুমেও কুমিল্লার শুরুটা হয়েছে হার দিয়ে। গত মৌসুমে তো টানা প্রথম তিন ম্যাচ হেরেও পরের সব ম্যাচে জিতে শিরোপা নিজেদের করে নেয়।
প্রথম ম্যাচে কুমিল্লা সব সময় হারে। এটা আমাদের কাছে নরমাল হয়ে গেছে। বিগত আসরগুলোতেও আমরা প্রথম ম্যাচে হেরেছি। এতে একটা সুবিধা হয়, অনেক ভুলত্রুটি ধরা পড়ে।ইমরুল কায়েস, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস
হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেও শিরোপা জেতার রহস্যটা সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন ইমরুল কায়েস। তাঁর অধিনায়কত্বে কুমিল্লা তিনবার শিরোপা জিতেছে। এর মধ্যে দুবারই প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর। আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সেই ইমরুল সংবাদমাধ্যমের সামনে এলে তাঁকে প্রথম প্রশ্নটাই করা হয় কুমিল্লার প্রথম ম্যাচের হার নিয়ে।
ইমরুল এবার অধিনায়ক নন, আগামীকাল ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনে আজ দলের একজন সদস্য হিসেবে তিনিও শুরুর ধাক্কার ইতিবাচকতা তুলে ধরলেন, ‘প্রথম ম্যাচে কুমিল্লা সব সময় হারে। এটা আমাদের কাছে নরমাল হয়ে গেছে। বিগত আসরগুলোতেও আমরা প্রথম ম্যাচে হেরেছি। এতে একটা সুবিধা হয়, অনেক ভুলত্রুটি ধরা পড়ে। এগুলো নিয়ে কাজ করা যায়। আমরা আজ এগুলো নিয়ে কাজ করেছি। আশা করি, কাল ভুলগুলো শুধরে আমাদের সেরা কম্বিনেশন নিয়েই মাঠে নামব।’
প্রথম ম্যাচে হারলেও ইমরুলের ব্যাট থেকে এসেছে ৬৬ রান। ইমরুল মনে করেন, ধারাবাহিকভাবে খেলার মধ্যে থাকার কারণেই বিপিএলের প্রথম ম্যাচে রান পেয়েছেন। তাঁর যুক্তি, ‘আমি সাম্প্রতিক সময় অনেক ম্যাচ খেলেছি। গত বিপিএলের পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলেছি। লন্ডনে অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছি। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছি। আমি পুরো খেলার ভেতরেই ছিলাম। প্রস্তুতিটাও ভালো হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়, এই অভিজ্ঞতাগুলো কাজে দিয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে খেলাটা আমার জন্য অনেক ভালো হয়েছে।’
অন্য একটা কারণও ধরিয়ে দিয়েছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, ‘আমার কাছে মনে হয়, বিপিএলে যতবার ওপেনার হিসেবে খেলেছি, আমার সাকসেস রেটটাও অনেক বেশি। কারণ, গত আসরেও আমি ওপেনিং করতে নেমে একটা ৮০+ রান করেছি। আমি টি-টোয়েন্টিতে ওপেন করতে পছন্দ করি। কিন্তু কুমিল্লায় টিম কম্বিনেশনের কারণে আমাকে অনেক কিছু মেনে নিতে হয়। অধিনায়ক থাকলে তো করতেই হয়।’
কুমিল্লার সমন্বয়ের কারণেই এবার অধিনায়কের দায়িত্বে নেই ইমরুল। সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজির ভবিষ্যৎ ভাবনার ব্যাপারও আছে। সব মিলিয়েই এবার লিটন দাসকে অধিনায়ক করা হয়েছে। ইমরুলই বললেন, ‘লিটন দাস সব সময় টপ প্লেয়ার। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের হয়ে সে যেসব ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছে, সেগুলোতে দেখেছেন, ও নিজের কাজটা ভালোভাবেই করেছে এবং সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। আমরা সেটা জানি। আমরা আশা করি, এই দলটার হয়েও সে এবার ভালো করবে।’
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘অধিনায়ক থাকলে অনেক চাপ থাকে। একেক দিন ভিন্ন রোল আমাকে প্লে করতে হয়। এখনো সেভাবেই চেষ্টা করব। তবে এটা তো ঠিক, মাঠের ভেতরে একটু চাপমুক্ত থাকতে পারছি। কোনো পরিকল্পনা সাজাতে হয় না। লিটন ওর কাজটা ভালোভাবেই করতে পারছে।’
লিটনকে দায়িত্ব দেওয়া যে দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত, সে আভাসও আছে ইমরুলের কথায়। কুমিল্লার এই ভাবনার প্রশংসা করে ইমরুল বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, কুমিল্লা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। আগামী চার-পাঁচ বছর কাকে দিয়ে দলটা লিড করা যাবে, সেটা নিয়েই এগোচ্ছে। আমার মনে হয়, এটা ভালো সংস্কৃতি।’