সংবাদ সম্মেলনে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে
সংবাদ সম্মেলনে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে

দুই সেশনের আগে মিরপুরের উইকেট বোঝা যাবে না

চন্ডিকা হাথুরুসিংহে হয়তো প্রশ্নটার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। বাংলাদেশ দল সিলেট টেস্ট জিতে এখন ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের দুয়ারে দাঁড়িয়ে। যে ছকে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় এসেছে, আগামীকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টেও কি একই ছকে খেলবে বাংলাদেশ?

প্রশ্নটা শুনে হেসে দিলেন হাথুরুসিংহে। বললেন, ‘বেশি তথ্য দিতে চাই না। কারণ, নিউজিল্যান্ড দল হয়তো শুনবে বা পড়বে।’ পরে ব্যাখ্যা করলেন, ‘আমাদের সমন্বয় কেমন হবে, তা উইকেটের ওপর নির্ভর করবে এবং অবশ্যই আমাদের শক্তিমত্তার ওপর, ওদের সীমাবদ্ধতার ওপর। সিলেটে আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি, পুরো পাঁচ দিনই। আমরা খুব ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। আমরা সেখানে যে সমন্বয় সাজিয়েছি, তা সিলেটের কন্ডিশন অনুযায়ী সাজিয়েছি।’

মিরপুরেও দল প্রায় একই কৌশলে খেলবে, সে আভাস আছে হাথুরুসিংহের পরের কথায়, ‘মিরপুরে উইকেট কেমন হবে, তা আপনি এখানে দুই সেশন না খেলা পর্যন্ত বুঝতে পারবেন না। এই মাঠে অনেক খেলা হয়। আমার মনে হয় না, বিশ্বের কোথাও একই ভেন্যুতে এত খেলা হয়। অনুমান করা কঠিন হবে। আমরা খুব বেশি পরিবর্তন করতে চাইব না।’

মিরপুর টেস্টের আগে কোচের বার্তায়ও কোনো পরিবর্তন নেই। এ নিয়ে হাথুরুসিংহেকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর উত্তর ছিল এমন, ‘বার্তাটা একই। আমাদের যা আছে তা নিয়ে খেলা, নিজেদের সামর্থ্যটা বোঝা। প্রতিটি সেশনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেষ্টা করা। এই দল অভিজ্ঞতার দিক থেকে তরুণ। কিন্তু দক্ষতার দিক থেকে ওরা খুবই ভালো। ওরা সাধারণত যে ধরনের খেলা খেলে, জাতীয় লিগে বা অন্য কোথাও, সেই স্বাধীনতা যদি ওদের দেওয়া হয়, তাহলে ওরা ভালো খেলে। এটা আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের কৃতিত্ব, এই দলে সাতজন এনসিএল খেলে এসেছে। ওদের মাঠের এনার্জি পঞ্চম দিনও দারুণ ছিল। এই ছোট ছোট বিষয়ে আমার নজর থাকে। তরুণ দল, তারা তাদের সবটা দিয়েছে। বার্তা হচ্ছে সেটাই, একই জিনিস আবার করো।’

মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশ একই কৌশলে খেলবে, সে আভাস আছে হাথুরুসিংহের কথাতে

বাংলাদেশ দল মিরপুরে শেষ দুটি টেস্ট খেলেছে আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। হাথুরুসিংহে সেই দুটি টেস্টের স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনি সমন্বয় সাজাবেন কন্ডিশন ও প্রতিপক্ষ দেখে। এখানে আমরা শেষ যে ম্যাচ খেলেছি, সেটা আফগানিস্তানের বিপক্ষে। উইকেট ভিন্ন ছিল। ওই টেস্টের আগে তেমন কোনো খেলা ছিল না। উইকেট তৈরির জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া গেছে। আমরা তিন পেসার নিয়ে দল সাজিয়েছি প্রতিপক্ষ ও কন্ডিশন মাথায় রেখে। এর আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছি। সেখানে উইকেট কিছুটা অন্য রকম ছিল।’

শক্তিশালী পেস বোলিং আক্রমণ থাকার কারণেই যেকোনো কন্ডিশনের দাবি মেটাতে পারছে বাংলাদেশ। হাথুরুসিংহেও বলেন, ‘মূল কথা হলো, আমাদের এখন সব ধরনের দক্ষতাসম্পন্ন বোলার আছে। আমরা যখন যেভাবে চাইব, সেভাবে তা ব্যবহার করতে পারব। এটা আমাদের জন্য বিরাট ইতিবাচক দিক।’

প্রশ্ন উঠেছে দলের আত্মতুষ্টিতে ভোগার সম্ভাবনা নিয়েও। নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে এত বড় (১৫০ রান) জয় বাংলাদেশকে সিরিজ জয়ের সুযোগ করে দিয়েছে।

ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের দুয়ারে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ

প্রধান কোচ অবশ্য দলের মধ্যে তেমন কিছু দেখছেন না। বরং দলের নেতৃত্বে তাঁর আস্থার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কে আত্মতুষ্টিতে ভুগছে, তা তো আমি দেখতে পাব না। যদি কারও কর্মকাণ্ডে তা বোঝা যায়, তাহলে আমি তার সঙ্গে কথা বলতে পারি। তবে আমার মনে হয় না, সে রকম কিছু আছে। গতকাল আমাদের সবার সঙ্গে লম্বা আলোচনা হয়েছে। দলে অনেক শক্তিশালী নেতৃত্ব আছে। অভিজ্ঞ নেতৃত্ব। যেমন মুশি ও মুমিনুল। ওরা কাল কী বলেছে জানি না, কারণ বাংলায় বলেছে। তবে যা বলেছে, তা বেশ আবেগপ্রবণ মনে হয়েছে। হ্যাঁ, আমি দলের মধ্যে কোনো “টল পপিজ” দেখছি না।’
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে হাথুরুসিংহে মনে করিয়ে দিয়েছেন, সিলেটের মতো মিরপুরেও বাংলাদেশের শুরুটা হবে শূন্য থেকে, ‘আমাদের শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। আমরা খেলাটা শুরু করব ঠিক যেভাবে শুরু করেছি সিলেটে। একই রোমাঞ্চ, চেষ্টা, আশা ও লক্ষ্য নিয়ে। আমরা প্রতিদিন লড়তে চাই।’