উগান্ডার ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নেওয়াটাই একটা ইতিহাস। পূর্ব আফ্রিকার দেশটি যেকোনো সংস্করণের ক্রিকেটে বিশ্বকাপ খেলছে এবারই প্রথম। একটি দেশের ঐতিহাসিক ক্ষণ মানে এর প্রতিটি পরিবার ও মানুষের জন্যই স্মরণীয় মুহূর্ত। এর মধ্যে কাম্পালার দুটি পরিবারে এখন দ্বিগুণ আনন্দ।
৯৩ হাজার বর্গমাইল আর ৫ কোটি মানুষের দেশ থেকে বিশ্বকাপে উগান্ডার প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছেন ১৫ জন। যার মধ্যে চারজনই এ দুই পরিবারের। একসঙ্গে বিশ্বকাপের জার্সি গায়ে চড়িয়েছেন দুই জোড়া ভাই—রজার মুকাসা ও ফ্র্যাঙ্ক এনসুবুগা এবং সাইমন সেসাজি ও হেনরি সেনিওন্দো। আফগানিস্তানের বিপক্ষে আজ তাই স্বাভাবিকভাবেই চোখ থাকবে উগান্ডার এই দুই জোড়া ভাইয়ের ওপর। প্রথমবার বিশ্বকাপে এসে উগান্ডা গ্রুপ পর্বে প্রতিপক্ষ হিসেবে আরও পেয়েছে নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাপুয়া নিউগিনিকে।
গত শতাব্দীর প্রথম ভাগেই ব্রিটিশ উপনিবেশ উগান্ডায় ক্রিকেটের প্রচলন। এমনকি দেশটির দুজন পূর্ব আফ্রিকার হয়ে ১৯৭৫ বিশ্বকাপে খেলেছেনও। আইসিসির টুর্নামেন্ট খেলার অভিজ্ঞতা আছে এবারের বিশ্বকাপ দলে থাকা এনসুবুগারও। ৪৩ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার এবারের আসরের সবচেয়ে ‘বুড়ো’ ক্রিকেটার। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ১৯৯৭ সালে খেলেছিলেন আইসিসি ট্রফি। তখনো উগান্ডা আইসিসির সহযোগী সদস্যপদ পায়নি, এনসুবুগা খেলেছিলেন পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকার (২০০৩ সালে বিলুপ্ত) হয়ে। ২৭ বছর পর সেই এনসুবুগা এবার বিশ্বকাপ খেলতে নামছেন দেশের জার্সিতে, ছোট ভাই রজার মুকাসাকে নিয়ে।
৩৫ বছর বয়সী মুকাসা উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। মাঝে অধিনায়কত্বও করেছেন। এই মুকাসা ও এনসুবুগার আরও এক ভাই ক্রিকেট খেলতেন। নাম লরেন্স সেমাতিমবা। মুকাসার মতো সেমাতিমবাও ছিলেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। ‘ছোট সিংহ’ নামে পরিচিত এই ক্রিকেটার জাতীয় দলে খেলেছেন ২০০৪ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত। বয়সে এনসুবুগার চেয়ে দুই বছরের ছোট হলেও খেলা ছেড়ে সেমাতিমবা এখন কোচিংয়ে ব্যস্ত। কাজ করছেন উগান্ডার মেয়েদের জাতীয় দল ভিক্টোরিয়া পার্লসে।
তিন ভাইয়ের ক্রিকেটার হয়ে ওঠা পারিবারিক সূত্রে। না, বাবা-দাদা ক্রিকেটার ছিলেন না। তাঁদের বাবা রবার্ট মুকাসা ছিলেন একটি ক্রিকেট ক্লাবহাউসের বারম্যান। পিতার কাজের সূত্র ধরে ছেলেদের জীবন জড়িয়ে গেছে ক্রিকেটের মাঠের সঙ্গে। মুসাকা পরিবারেরই প্রতিবেশী এক পরিবারে বেড়ে ওঠা সেসাজি, সেনিওন্দোদের। এই দুই ভাই অবশ্য ক্রিকেটের যাত্রাপথে বাবাকে পাননি। খুব অল্প বয়সেই বাবাকে হারিয়েছেন।
তাঁদের আরও দুই ভাই ক্রিকেটে আছেন—রোনাল্ড সেমান্দা ও লরেন্স সেমপিয়া। এর মধ্যে সেমান্দা ২০০৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও খেলেছেন। যদিও এরপর আর খুব বেশি এগোতে পারেননি। সর্বশেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছেন ২০১২ সালে, জাতীয় দলেও আর খেলা হয়নি। তবে সেমান্দার ছোট দুজন আছেন এবারের বিশ্বকাপে।
৩০ বছর বয়সী সেনিওন্দো মূলত বাঁহাতি স্পিনার। এখন পর্যন্ত ৭৭ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ৯৪ উইকেট। যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে উগান্ডার খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেনিওন্দোর ছোট ভাই সেসাজি শীর্ষে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে। ২৭ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ৭৮ টি-টোয়েন্টিতে ৩১.৩৯ গড়ে তুলেছেন ২০৭২ রান।
সর্বোচ্চ রান ও সর্বোচ্চ উইকেটধারী দুই ভাই আর অভিজ্ঞতম ও সাবেক অধিনায়ক দুই ভাই এখন উগান্ডা ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের অংশ হওয়ার অপেক্ষায়। আগস্টে বয়স ৪৪ পূর্ণ হতে যাওয়া এনসুবুগা যেমন উগান্ডার সংবাদমাধ্যম মনিটরকে বলছিলেন, ‘যখন খেলা শুরু করি, এমন একটা মুহূর্তের স্বপ্ন দেখে এসেছি। ভাবিনি, আমার জীবদ্দশায় এমন কিছু ঘটবে। এখন আমরা বিশ্বকাপে।’