মুলতান টেস্টের পিচ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রল শুরু হয়ে গেছে প্রথম দিন থেকেই। এই পিচকে কেউ বলছেন পাটা বা তক্তা, আবার কারও কারও চোখে মহাসড়ক।
এ ধরনের ব্যাটিং–স্বর্গে কীভাবে টেস্টের ফল আসতে পারে? আজ সেঞ্চুরি পূরণের পর হেলমেটে জো রুটের চুম্বনের মুহূর্ত আর ইংল্যান্ডের সংক্ষিপ্ত স্কোরের স্ক্রিনশট নিয়ে তা এক্সে পোস্ট করেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ‘ক্রিকেটবিজ্ঞানী’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই ভারতীয় স্পিনার এক্সে লিখেছেন, ‘এখন এই টেস্টে বিজয়ী দেখার একমাত্র উপায় (ম্যাচের) তৃতীয় ইনিংসে বাজে ব্যাটিং করা।’
অশ্বিন এ কথা লিখবেন নাই–বা কেন? মুলতানে প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের তিন সেঞ্চুরির জবাব যে জোড়া সেঞ্চুরিতে দিয়েছে ইংল্যান্ড। টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩৫তম সেঞ্চুরি পাওয়া রুটকে পাশে পেয়ে হ্যারি ব্রুকও তিন অঙ্কের দেখা পেয়েছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে চতুর্থ উইকেটে দুজন রেকর্ড জুটি গড়ে এখনো আছেন অবিচ্ছিন্ন। তাতে ৩ উইকেটে ৪৯২ রানের পাহাড় গড়ে তৃতীয় দিন শেষে করেছে ইংল্যান্ড। ৭ উইকেট হাতে নিয়ে প্রথম ইনিংসে সফরকারীরা পিছিয়ে মাত্র ৬৪ রানে।
ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ডাবল সেঞ্চুরি থেকে রুট ২৪ রান দূরে। ব্রুক অপরাজিত ১৪১ রানে। আগামীকাল চতুর্থ দিন নিশ্চয় বড় লিড নেওয়ার লক্ষ্যে ব্যাট করবে ইংল্যান্ড।
প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ৫৫৬ রানের জবাবে গতকাল ১ উইকেটে ৯৬ রান তুলে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছিল ইংল্যান্ড। সফরকারীরা আজ সারা দিনে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে করেছে আরও ৩৯৬ রান। এদিন ৮১ ওভার ব্যাট করেছে ইংলিশরা। বাজবলীয় কায়দাতেই ওভারপ্রতি রান তুলেছে ৪.৮৮ করে।
যদিও শুরুটা ভালোই করেছিল পাকিস্তান। দিনে পঞ্চম ওভারে জ্যাক ক্রলিকে (৭৮) আমের জামালের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান শাহিন আফ্রিদি। কিন্তু উইকেটটা নিয়ে যেন খাল কেটে কুমির ডেকে আনে পাকিস্তান। ক্রলি তবু ৯১ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন। তিনি আউট হওয়ার পর চারে নামা বেন ডাকেট ছিলেন মারমুখী মেজাজে। মধ্যাহ্নবিরতির পরপরই জামালের বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন ডাকেট। এর আগে ১১ চারে ৭৫ বলে করেন ৮৬ রান; স্ট্রাইক রেট ১১২!
এদিন পাকিস্তানের প্রাপ্তি বলতে এটুকুই। পরের গল্পটা রুট আর ব্রুকের। ইদানীং রুট বোধ হয় পণ করেই নামছেন যে সামনে যতগুলো রেকর্ড ভাঙবেন, তাতে থাকবে পূর্বসূরি অ্যালিস্টার কুকের নাম। ব্রুককে নিয়ে ২৪৩ রানের রেকর্ড জুটি গড়েছেন রুট, যা টেস্টে চতুর্থ উইকেট জুটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ছিল কুক ও পল কলিংউডের ২৩৩ রান, ২০০৬ সালে লর্ডসে।
১৭৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলার পথে অ্যালিস্টার কুককে ছাড়িয়ে টেস্টে ইংল্যান্ডের শীর্ষ রান সংগ্রাহক হয়ে গেছেন রুট। ৩৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান এখন টেস্ট ইতিহাসের পঞ্চম সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। টেস্টে সেঞ্চুরিসংখ্যায় তিনি টপকে গেছেন ইউনিস খান, সুনীল গাভাস্কার, ব্রায়ান লারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনেকে। এই ৪ জনেরই টেস্ট সেঞ্চুরি ৩৪টি করে।
ক্যারিয়ারে ১৩তম টেস্ট খেলতে নামা ব্রুক পেয়ে গেছেন ষষ্ঠ সেঞ্চুরির দেখা। ছয় সেঞ্চুরির চারটিই আবার পাকিস্তানের বিপক্ষে। এই সেঞ্চুরিতে তিনি ছুঁয়েছেন ভারতের মহিন্দর অমরনাথ ও শ্রীলঙ্কার অরবিন্দ ডি সিলভাকে। বর্তমানে পাকিস্তানের মাটিতে বিদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪টি করে সেঞ্চুরি তাঁদের। ইনিংসের হিসাবে এগিয়ে ব্রুকই। পাকিস্তানের মাটিতে ৪ টেস্ট সেঞ্চুরি করতে অমরনাথের লেগেছিল ১৮ ইনিংস, ডি সিলভার ১৭ ইনিংস। ব্রুকের লাগল মাত্র ৬ ইনিংস।
এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা ৪ টেস্টেই সেঞ্চুরি পেলেন ব্রুক। আফ্রিদি-নাসিমরা যে তাঁর ‘প্রিয় প্রতিপক্ষ’ হয়ে উঠেছেন, তা না বললেও চলছে।
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ১৪৯ ওভারে ৫৫৬
(মাসুদ ১৫১, সালমান ১০৪*, শফিক ১০২, শাকিল ৮২; লিচ ৩/১৬০, কার্স ২/৭৪, অ্যাটকিনসন ২/৯৯)।
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১০১ ওভারে ৪৯২/৩
(রুট ১৭৬*, ব্রুক ১৪১* ডাকেট ৮৪, ক্রলি ৭৮, পোপ ০; নাসিম ১/৮৭, জামাল ১/৭৮, আফ্রিদি ১/৮৮)।
*৩য় দিন শেষে