দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ জয়ে ২০১১ সালের পুনরাবৃত্তি করতে গেলে ভাগ্যকে পাশে প্রয়োজন ভারতের, এমনটা মনে করেন সুনীল গাভাস্কার। বিশ্বকাপ জিততে গেলে অলরাউন্ডারের ভূমিকাকেও বড় করে দেখছেন সাবেক অধিনায়ক ও এখনকার ধারাভাষ্যকার।
২০১৩ সালে ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পর থেকে আইসিসির প্রতিটি টুর্নামেন্টে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে ভারতকে। সর্বশেষ গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে উড়ে গিয়েছিল তারা। ২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসরেও সেমিফাইনাল খেলেছিল ভারত, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টিবিঘ্নিত দুই দিনে গড়ানো ম্যাচটিতে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের।
একটি অনুষ্ঠানে ভারতের বিশ্বকাপ সম্ভাবনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে গাভাস্কার বলেছেন ভাগ্যের কথা। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক মেধা আছে, তবে নকআউট পর্বে নির্দিষ্ট দিনে আপনার ভাগ্য দরকার। নকআউট পর্বে যেসব ম্যাচে আমরা হেরেছি, তাকালে দেখবেন, বরাবরই ভাগ্য খারাপ ছিল।’
২০১৯ সালের সেমিফাইনালের প্রসঙ্গ টেনে এরপর ভারতের হয়ে চারটি বিশ্বকাপ খেলা এই ব্যাটসম্যান বলেন, ‘২০১৯ সালে আমাদের এমন একটি ম্যাচ দ্বিতীয় দিনে গড়িয়েছিল। যদি এক দিনেই খেলা হতো, গল্পটা ভিন্ন হতে পারত। কারণ, পরদিন সিমিং কন্ডিশন ছিল, আর তাতে নিউজিল্যান্ড বোলাররা ভালো করতে পেরেছে। ফলে আমার মনে হয়, আপনার একটু ভাগ্যের সহায়তা প্রয়োজন। মানে চার-পাঁচটি বেশ ভালো দল তো আছেই। নির্দিষ্ট দিনে তাই ভাগ্য প্রয়োজন।’
অবশ্য ভাগ্যের পাশাপাশি অলরাউন্ডারদের পারফরম্যান্সের দিকেও জোর দিয়েছেন গাভাস্কার। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ, ১৯৮৫ সালের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ ক্রিকেট (যাতে গাভাস্কার অধিনায়ক ছিলেন), ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ভারতের জয়ের প্রসঙ্গ টেনে গাভাস্কার মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে ভাগ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর ওই তিনটি দলের দিকে তাকালে দেখবেন, বিশ্বমানের অলরাউন্ডার ছিল। এমন ব্যাটসম্যান ছিল, যারা ৭-৮-৯ ওভার বোলিং করতে পারে; এমন বোলার ছিল, যারা নিচের দিকে ব্যাটিং করতে পারে। ওই দলগুলোর অনেক বড় প্রাপ্তি ছিল সেটি। এমএসডির (২০১১ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনির বিশ্বকাপজয়ী) দলের দিকে তাকালে দেখবেন—সুরেশ রায়না, যুবরাজ সিং, শচীন টেন্ডুলকার, বীরেন্দর শেবাগরা বোলিং করতে পারত। এটা বাড়তি পাওয়া ছিল। ফলে যে দলের অলরাউন্ডার আছে, তারা এগিয়ে থাকবে।’
গাভাস্কার এরপর বলেছেন ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ডের কথাও। বেন স্টোকস, স্যাম কারেনরা দারুণ ভূমিকা রেখেছিলেন জস বাটলারদের শিরোপা জয়ে।
ভাগ্যকে পাশে পাওয়া, অলরাউন্ডারদের পারফর্ম করা—ভারতের জন্য এমন বিষয়গুলো পক্ষে যাওয়ার ব্যাপার তো থাকছেই। দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ বলে দারুণ চাপেও থাকবে রোহিত শর্মার দলটি। আর রোহিত অধিনায়ক হিসেবে কেমন, সেটি কী দিয়ে বিচার করা হবে, তা–ও মনে করিয়ে দিয়েছেন গাভাস্কার, ‘দিন শেষে আপনি কটি ট্রফি জিতলেন, কটি ম্যাচ জয় নামের পাশে—এসব দিয়েই আপনাকে বিচার করা হবে। এ দুটি টুর্নামেন্ট জিতলে সে ভারতের অন্যতম সেরা অধিনায়ক হয়ে যাবে।’
দুটি টুর্নামেন্ট বলতে গাভাস্কার বুঝিয়েছেন আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া এশিয়া কাপকে। বিশ্বকাপের আগে দলগুলোর জন্য এ টুর্নামেন্টকে দেখা হচ্ছে দারুণ প্রস্তুতি হিসেবেই। চোট কাটিয়ে ফেরা কয়েক ক্রিকেটারের উপস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই এ টুর্নামেন্টে উজ্জীবিত হয়ে নামবে ভারত।
আয়ারল্যান্ড সিরিজেই দলে ফিরেছেন ফাস্ট বোলার যশপ্রীত বুমরা। ভারত ফিরে পাচ্ছে ব্যাটসম্যান শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুলদেরও। তাঁরা ভালো করবেন, গাভাস্কারের আশা এমন, ‘এটা গুরুত্বপূর্ণ। যারা তিন-চার মাসের বিরতির পর ফিরছে, তাদের পরীক্ষা হবে। আশা করি, তারা এগিয়ে আসবে। অনেক সমস্যারই সমাধান হবে তাতে।’
এশিয়া কাপে ভারতের প্রথম ম্যাচ আগামী ২ সেপ্টেম্বর, পাল্লেকেলেতে প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। আর ৮ অক্টোবর চেন্নাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু হবে তাদের।