হঠাৎ কেন ডেভিড ওয়ার্নারের ওপর খেপে গেলেন মিচেল জনসন? কেনই–বা জাতীয় দলের একসময়ের সতীর্থের টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের পরিকল্পনা নিয়ে সমালোচনায় মুখর হলেন সাবেক অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলার? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কিছুটা হলেও পাওয়া গেল। আর সেটি জানালেন জনসন নিজেই।
ওয়েস্ট অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকায় নিজের লেখা এক কলামে ওয়ার্নারকে কেন টেস্ট ক্রিকেট থেকে ঘটা করে বিদায় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলো, তা নিয়ে সমালোচনা করেন জনসন। টেস্টে ওয়ার্নারের ফর্মহীনতা ও ২০১৮ সালে কেপটাউন টেস্টে ‘স্যান্ডপেপার-কেলেঙ্কারি’তে অস্ট্রেলীয় ওপেনারের ভূমিকার কথা মনে করিয়ে দেন নিজের লেখায়। প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলির সঙ্গে খেলোয়াড়দের ঘনিষ্ঠতা নিয়েও সমালোচনা করেন জনসন। ওই কলাম লেখার পর বেইলি জনসনের সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ওয়ার্নার অবশ্য এখনো প্রকাশ্যে কিছু বলেননি এ বিষয়ে। তবে ওয়ার্নারের সতীর্থ উসমান খাজা সমালোচনা করেছেন জনসনের। এ নিয়ে মাইকেল ক্লার্ক ও টিম পেইনের মতো দুই সাবেক অধিনায়কও কথা বলেছেন, তাঁরা জনসন-ওয়ার্নারের বিরোধের কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছেন।
(এপ্রিলে) আমি ডেভের (ওয়ার্নার) কাছ থেকে বার্তা পেলাম, খুবই ব্যক্তিগত (আক্রমণ) ছিল সেটি। আমি তখন ওকে ফোনে ধরার চেষ্টা করলাম, চেষ্টা করলাম কথা বলতে।মিচেল জনসন, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার
কী কারণ, সেটি আজ দ্য মিচেল জনসন ক্রিকেট শো পডকাস্টে নিজেই জানালেন। সেখানে জনসন বলেছেন, গত এপ্রিলে ওয়ার্নারের কাছ থেকে পাওয়া একটি খুদে বার্তা বা এসএমএসই তাঁর এতটা খ্যাপার কারণ। সেই খুদে বার্তাও ওয়ার্নার পাঠিয়েছিলেন জনসনের কাছ থেকে সমালোচনা শোনার পর। সে সময়েও ওয়ার্নারের ফর্ম নিয়ে কথা বলেছিলেন জনসন। জনসন সমালোচনা করেছিলেন ওয়ার্নারের স্ত্রী ক্যান্ডিসেরও। ক্যান্ডিস কেন ওয়ার্নারের টেস্ট দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে টেলিভিশনে কথা বলেছেন, সেটিরও সমালোচনা করেন জনসন।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৭৩টি টেস্ট খেলা বাঁহাতি ফাস্ট বোলার জনসন আজ পডকাস্টে বলেন, ‘ওই ঘটনার পর আমি ডেভের (ওয়ার্নার) কাছ থেকে বার্তা পেলাম, খুবই ব্যক্তিগত (আক্রমণ) ছিল সেটি। আমি তখন ওকে ফোনে ধরার চেষ্টা করলাম, চেষ্টা করলাম কথা বলতে। আমি সব সময়ই যেকোনো কিছু নিয়ে কথা বলতে রাজি আছি। খেলা ছাড়ার পরও ওদের (সতীর্থ) সঙ্গে সব সময়ই কথা বলেছি। আমি বলেছি, সংবাদমাধ্যমে আমার লেখা ও কথা যদি কারও ভালো না লাগে, আমার সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে।’
গত এপ্রিলে এ নিয়ে কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক খারাপ হয়নি বলেও জানালেন জনসন, ‘ওই সময়ের আগে বিষয়টি কখনোই ব্যক্তিগত পর্যায়ে যায়নি। আর এ কারণেই তখন নিবন্ধটি লিখেছিলাম। ওটা একটি কারণ তো বটেই। এমন কিছু বলেছিলাম, যা আমার বলা উচিত হয়নি। আমার মনে হয় ডেভেরই বলা উচিত ছিল যে সে এ বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। ওই মেসেজে এমন কিছু ছিল, যা আমার জন্য খুবই হতাশাজনক ছিল। সে যা বলেছে, সত্যি কথা বলতে, খুবই বাজে ছিল তা।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাচক বেইলির সঙ্গে বিরোধেও বার্তার ভূমিকা ছিল বললেন জনসন। পাকিস্তান সিরিজের অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলে ডাক পাওয়া ফাস্ট বোলার ল্যান্স মরিসকে কেন শেফিল্ড শিল্ড ম্যাচ থেকে সরিয়ে বিশ্রাম দেওয়া হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জনসন। বেইলি তখন বার্তা পাঠান জনসনকে। সেই মেসেজে কী ছিল, সেটি জানালেন জনসন, ‘মরিসকে নিয়ে লেখার পর সে (বেইলি) মেসেজ পাঠাল। সেখানে সে আমাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। সকাল সকাল যদি এমন কিছু চলে আসে, কার না মেজাজ খারাপ হয়।’
আমার সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার মানে হলো, আমার লেখাকে ছোট করা। খুবই জঘন্য ব্যাপার। আমি জানাতে চাই, আমার মাথা পরিষ্কার আছে। আমি পুরোপুরি ঠিক আছি।মিচেল জনসন, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার
এরপর এবার আবার জনসনের সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বেইলি। জনসন আজ জবাব দিলেন সেটিরও, ‘আমি ঠিক আছি কি না, জিজ্ঞাসা করেছে সে। আমার সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার মানে হলো, আমার লেখাকে ছোট করা। খুবই জঘন্য ব্যাপার। আমি জানাতে চাই, আমার মাথা পরিষ্কার আছে। আমি পুরোপুরি ঠিক আছি। কারও প্রতি রাগ করে বা ঈর্ষায় নয়, আমার যা লেখার দরকার ছিল, তাই লিখেছি শুধু। আমি কেন শুধু বার্তা পাব, কেউ কি ফোন করার মতো একটু ভদ্রতা দেখাতে পারে না!’
তিনি যে মনোযোগ আকর্ষণের জন্য কারও সমালোচনা করেন না, সেটিও বলেছেন জনসন, ‘আমি হইচই ফেলতে চাই না। আমি শুধু নিজের মতামত জানাই।’