এ রকম আগেও হয়েছে তানজিদ হাসানের সঙ্গে। নিজেকে হারিয়েছেন, আবার খুঁজেও পেয়েছেন। এবার কি খুঁজে পাবেন? ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে দল ঘোষণার পর বাংলাদেশের ওপেনারের কথা শুনে অবশ্য মনে হলো তিনি বেশ আত্মবিশ্বাসী।
ব্যাট হাতে ছন্দ খুঁজে না পাওয়াটাকে তিনি স্রেফ মানসিক সমস্যাই মনে করেন। তাঁর ধারণা, সেটা কাটিয়ে উঠতে পারলেই তিনি হতে পারবেন ব্যাট হাতে দলের বড় আস্থা।
তানজিদের ছন্দ খুঁজে পাওয়াটা অবশ্য বাংলাদেশের জন্যও অতি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল ক্রিকেট থেকে দূরে সরে যাওয়ার পর থেকেই তানজিদের মধ্যে নতুন এক তামিমকে খোঁজা হচ্ছে। আর ‘নতুন তামিম’ হয়ে ওঠার সব সম্ভাবনাও যে আছে, সেটা তো তানজিদ সেই ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেই দেখিয়েছেন।
কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির খুব কমই আসলে প্রতিফলিত তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে। ১৮ ওয়ানডেতে ১৭টি ইনিংসে ব্যাট হাতে নেমে ৩০৭ রান করেছেন মাত্র ১৮.০৫ গড়ে। ফিফটি মাত্র দুটি। আর এই দুই ফিফটির বাইরে তাঁর ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংসই মাত্র একটি! গত মাসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেই যেমন ব্যাট হাতে করেছেন ৩, ২২ ও ১৯ রান।
দল অবশ্য তানজিদের ওপর আস্থা রাখছে এরপরও। যেটা বোঝা যাবে তাঁকে দেওয়া সুযোগগুলো দেখে। গত বছর এশিয়া কাপে অভিষেকের পর থেকেই তানজিদ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দলের ওপেনিংয়ে প্রায় নিয়মিত মুখ। ওপাশে তাঁর সঙ্গী বদলেছে, কখনো মোহাম্মদ নাঈম, কখনো লিটন দাস, কখনো জাকির হাসান, কখনো সৌম্য সরকার, এমনকি এনামুল হকও। তানজিদ কি এই আস্থার প্রতিদান দিতে পারবেন?
যুব বিশ্বকাপের পরও একটা সময় নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন তানজিদ। যে প্রত্যাশা তাঁকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল, সেটা পূরণ করতে পারছিলেন না ঘরোয়া ক্রিকেটেও। কিন্তু তখন নিজেই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ঘুরে তাঁকে দাঁড়াতেই হবে। দাঁড়িয়েছিলেনও। ২০২২ প্রিমিয়ার লিগে ব্রাদার্সের হয়ে ২টি সেঞ্চুরি, ১টি ফিফটিসহ ৪৭৪ রান করেছিলেন ৯৩.৩০ স্ট্রাইক রেটে। এরপর গত বছর ইমার্জিং এশিয়া কাপেও ছিলেন বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সেরা ব্যাটসম্যান। শ্রীলঙ্কায় হয়ে যাওয়া সে টুর্নামেন্টে ৪ ম্যাচে ১৭৯ রান করেছেন তানজিদ, তাতে ফিফটি ৩টি, স্ট্রাইক রেট ১১৬.৯৯। মূলত সেই পারফরম্যান্সের পরই ওয়ানডে দলে অভিষেক হয় তাঁর।
সেই তানজিদ কোথায় হারালেন? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কেন এমন অধারাবাহিক? ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দল ঘোষণার পর আজ সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তানজিদ যেটা বললেন, তাতে বোঝা গেল সমস্যাটা কোথায় তিনি ভালোই জানেন, ‘আমার ব্যক্তিগতভাবে যেটা মনে হয়, আরেকটু দায়িত্ববোধ বাড়াতে হবে। কারণ, বেশির ভাগ ইনিংসে আমি ভালো শুরু করেছি, ওখান থেকে ক্যারি করতে পারিনি। এখন থেকে আমার চেষ্টা থাকবে, যদি ভালো শুরু করি, সেখান থেকে দায়িত্ব নিয়ে ইনিংসটা বড় করব।’
এখন পর্যন্ত সেটা করতে না পারার পেছনে মানসিক সমস্যাটাই বড় করে দেখেন তানজিদ, ‘একটা জিনিস আমি মনে করি, এটা আসলে একটা মানসিক ব্যাপার। আমি যদি ভালো গেম প্ল্যান নিয়ে নামতে পারি, ভালো শুরু করার পর ইনিংসটা ক্যারি করতে পারব। আমি যেসব শট খেলে আউট হয়েছি, আমার কাছে মনে হয়, মানসিক ব্যাপারটাই বড় এখানে। স্কিলের অনেক দিকেই ঘাটতি থাকতে পারে। সেটা নিয়ে তো আমরা নিয়মিত কাজ করেই যাচ্ছি। এই দুইয়ের সমন্বয় যদি ভালো হয়, তাহলে ইনিংস বড় করা সম্ভব।’
আর ওপেনিংয়ে যদি তানজিদ বড় ইনিংস খেলতে পাবেন, দলও পাবে ভালো শুরু। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তখন ভালো কিছু আশা করতেই পারে বাংলাদেশ। তানজিদের প্রত্যাশাও সে রকমই, ‘আমি মনে করি, যদি আমরা ভালো শুরু করতে পারি, প্রথম ম্যাচটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যদি একটা জয় দিয়ে শুরু করতে পারি তাহলে এই ছন্দটা ধরে রেখে সিরিজ শেষে বুঝতে পারব কোথায় আছি।’
ওয়ানডে সিরিজটা বাংলাদেশ খেলবে নতুন এক অধিনায়কের নেতৃত্বে। এর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও এই প্রথম মেহেদী হাসান মিরাজ পুরো ওয়ানডে সিরিজে নেতৃত্ব দেবেন। অবশ্য তাঁর নেতৃত্বেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজটা খেলছে বাংলাদেশ। নতুন অধিনায়কের কাছে তানজিদের প্রত্যাশাও অন্য সবার মতোই, ‘এর আগেও তিনি দুবাইয়ে অধিনায়কত্ব করেছেন, অনেক সিরিজে অধিনায়কত্ব করেছেন। তিনি অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। আশা থাকবে, তিনি তাঁর সেরাটা দিয়ে আমাদের সিরিজ জয়ে সাহায্য করবেন।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে হবে ৮, ১০ ও ১২ ডিসেম্বর। তিনটি ম্যাচই হবে সেন্ট কিটসে।