বিমানে দাবায় মগ্ন সাকিব–মিরাজ
বিমানে দাবায় মগ্ন সাকিব–মিরাজ

ভাইরাল–দাবাড়ু সাকিব দাবা কেমন খেলেন

সাকিব যে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারেন, এ নিয়ে কারও দ্বিমত থাকলে হাত তুলতে পারেন। না, কাউকে হাত তুলতে দেখা যাচ্ছে না। এবার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। মেসি-ভক্ত সাকিব কিন্তু ফুটবলটাও দারুণ খেলেন। বিশ্বাস হচ্ছে না! ঠিক আছে, তাহলে বাংলাদেশ দলের ওয়ার্মআপে ক্রিকেটারদের ফুটবল খেলা দেখেছেন, এমন কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখুন।

তবে এখন যে তথ্যটা দেব, মানে সাকিব যে আরও একটি খেলাও ভালো খেলেন, সেটার দর্শক কিন্তু এখন পর্যন্ত সাংবাদিকেরাও নন। সাকিবের সেই খেলার দর্শক আসলে খুবই কম। তাঁর কাছাকাছি যাঁরা থাকেন, সতীর্থ বা বন্ধুস্থানীয়, তাঁরাই সেই খেলার দর্শক এবং খেলাটায় সাকিবের প্রতিপক্ষও। খেলাটার নাম দাবা।

এতক্ষণে নিশ্চয়ই তথ্যটাকে মেলাতে শুরু করেছেন ফেসবুকে আজই ভাইরাল হয়ে যাওয়া একটা ছবির সঙ্গে। প্লেনে বসে সাকিব দাবা খেলছেন, প্রতিপক্ষ সতীর্থ মেহেদী হাসান মিরাজ। বিসিবির ফেসবুক পেজে পোস্ট করা দুটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দাবার বোর্ডে গভীর অভিনিবেশে মগ্ন সাকিব–মিরাজ। একটা ছবিতে সাকিবকে ঘুঁটি চালতে দেখা যাচ্ছে। ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খানের পোস্ট করা আরেক ছবিতেও দেখা যাচ্ছে দাবার বোর্ডসহ সাকিব, মিরাজ ও মুশফিকুর রহিমকে।

সেই ছবিটা কি দেখেছেন? তাহলে তো এটাও হয়তো খেয়াল করেছেন, সাকিব সোনালি আর রুপালি ঘুঁটি সাজানো দাবার বোর্ডটা নিজের কোলের ওপর ধরে আছেন। যা থেকে অনুমান করে নিতে অসুবিধা হয় না, এই বোর্ডের সঙ্গে তাঁর একটা গভীর সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে। তা থেকেই খোঁজ নেওয়া এবং নিশ্চিত হওয়া যে আসলেই ঘটনা সত্যি—সাকিব দাবাটাও বেশ ভালো খেলেন।

বিদেশ সফরে তাঁর সঙ্গে থাকে দাবার ওই বোর্ডটা। সুযোগ পেলে সতীর্থদের সঙ্গে বসে যান দাবা খেলতে। সাকিবের বোর্ডে দাবা খেলেন দলের অন্যরাও। দাবায় সাকিবের প্রতিপক্ষ অনেকেরই সরল স্বীকারোক্তি—দাবার বোর্ডে সাকিবই বাংলাদেশ দলের বিশ্বনাথন আনন্দ, গ্যারি কাসপারভ অথবা ম্যাগনাস কার্লসেন।

কোলে দাবা কোর্ট নিয়ে সাকিব আল হাসান, সঙ্গে মিরাজ–মুশফিকদের পোজ আতহার আলী খানের সেলফিতে

আজ ধর্মশালা টু চেন্নাই, ভায়া গোয়ালিয়র ফ্লাইটে সাকিব–মিরাজরা যথেষ্টই সময় পেয়েছেন দাবা খেলার। আইসিসির ভাড়া করা বিমান সকাল ৯টা বাজার একটু আগে ধর্মশালা থেকে উড়েছে। যাতে ছিলেন খেলোয়াড়–কোচ–স্টাফসহ বাংলাদেশ বিশ্বকাপ দলের ৩০ সদস্য, বিসিবির দুই পরিচালক জালাল ইউনুস ও তানভীর আহমেদ, প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন, দুই ধারাভাষ্যকার আতহার আলী, মাইক আথারটনসহ মোট ৪০–৪২ জন যাত্রী।

মাঝে জ্বালানি নিতে গোয়ালিয়রে আধা ঘণ্টার বিরতি, চেন্নাইয়ের আইটিসি গ্র্যান্ড চোলা হোটেলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বাংলাদেশ দলের বেলা তিনটা। লম্বা ভ্রমণ তো অবশ্যই। তবে এর ভালো দিক হলো ভ্রমণক্লান্তির ভারত বিশ্বকাপে সবচেয়ে কঠিন ভ্রমণটা এর মধ্য দিয়েই হয়ে গেল সাকিব–মুশফিকদের। বাকি ম্যাচগুলোর এক ভেন্যু থেকে আরেক ভেন্যুতে যেতে এত লম্বা দৌড় আর দৌড়াতে হবে না বাংলাদেশ দলকে।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম দুটি ম্যাচই ছিল দিনে। পরশু চেন্নাইয়ে প্রথম দিবারাত্রির ম্যাচ। সঙ্গে আজকের ভ্রমণক্লান্তি যোগ হওয়ায় কাল চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দল অনুশীলন করবে সন্ধ্যায়। তার আগে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কোনো সময়ে আইটিসি গ্র্যান্ড চোলা হোটেলে কেউ দাবার বোর্ড খুলে বসেন কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

দাবায় মগ্ন সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ

সাকিব যদি রশিদ খানের পথে হাঁটেন, সে রকম কিছু তাহলে হতেও পারে। আফগানিস্তান দলের সবচেয়ে বড় তারকা সব সময় একটা বড় লুডুর বোর্ড সঙ্গে রাখেন। ক্রিকেটের অবসরে সেই বোর্ডে জমে ওঠে লুডু টুর্নামেন্টের উত্তেজনা। দাবা সে রকম প্রকাশ্যে উত্তেজনা ছড়ানো কোনো খেলা নয় বটে, তবে মস্তিষ্কের কুঠুরিতে আলোড়ন তো তা আরও বেশি তোলে।

ধর্মশালায় ইংলিশ–ধাক্কার পর চেন্নাইয়ে কিউই-পরীক্ষার আগে সে রকম আলোড়ন কিন্তু দরকারও বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের মস্তিষ্কেও।