খুলনার জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ছেন দলটির অধিনায়ক এনামুল হক। পেছনে শাই হোপ
খুলনার জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ছেন দলটির অধিনায়ক এনামুল হক। পেছনে শাই হোপ

বিপিএল: তামিম-মুশফিকদের বরিশালকে উড়িয়ে দিল এনামুল-লুইসের খুলনা

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখনো দুটি ভাবনা প্রচলিত। কোনো দল শুরু থেকে দেখেশুনে খেলে শেষে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করে। কেউ আবার শুরু থেকেই বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে অভ্যস্ত। আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে খুলনা টাইগার্সফরচুন বরিশালের ম্যাচে দেখা গেল এই দুই ভাবনার লড়াই।

টস, কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে সেই লড়াইয়ে অভিজ্ঞতায় ঠাসা বরিশালকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছে খুলনা। মুশফিকের ৬৮ রানের সৌজন্যে ১৮৭ রান করা বরিশালকে ৮ উইকেটে হারিয়েছেন এনামুলরা, সেটাও ইনিংসের ২ ওভার বাকি থাকতে। দুই ম্যাচ খেলা খুলনার এটি দ্বিতীয় জয়।

ব্যাটিং হবে বিস্ফোরক। থাকবে ডানহাতি-বাঁহাতির সমন্বয়—খুলনা টাইগার্স টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংটাকে দেখে এভাবে। তাদের এনামুল হকের সঙ্গে খুলনার ওপেনিং ব্যাটসম্যান এভিন লুইস। এই ক্যারিবীয় ওপেনার আলোচনায় এসেছিলেন ‘আরেক ক্রিস গেইল’–এর তকমা নিয়ে। কিন্তু ৩২-এ এসেও তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ধারাবাহিক হতে পারেননি। মেরে খেলার সেই খ্যাতি তাঁকে আইপিএল খেলার সুযোগ এনে দেয়। কিন্তু ধারাবাহিকতার অভাবে তা ধরে রাখতে পারেননি। তবে তিনি যেদিন টিকে যাবেন, সেদিন কী হতে পারে, তা সবারই জানা।

২৪০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করে অর্ধশতক তুলে নেন খুলনার এভিন লুইস

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যাঁর স্ট্রাইক রেট ১৫১, সেই লুইসের স্ট্রাইক রেট আজ ২৪০.৯০। সিক্সথ গিয়ারে ইনিংস শুরু করেছেন, ২২ বলে ৫৩ রান করে আউট হওয়া পর্যন্ত সে গতি ধরে রেখেছেন। ৫টি চার ও ৫টি ছক্কায় শীতে জবুথবু মিরপুরের দর্শকদের জাগিয়েছেন। তাঁর ওই ইনিংসের সৌজন্যে খুলনা পেয়ে যায় বিপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ পাওয়ারপ্লে স্কোর—১ উইকেটে ৮৭।

পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার ৩ বল আগে আউট হওয়া সেই ১টি উইকেট লুইসের। ততক্ষণে অবশ্য খুলনার রান তাড়ায় চাপ শব্দটা উধাও হয়ে গেছে। যে ম্যাচে খুলনাকে রান করতে হতো ওভারপ্রতি ৯–এর বেশি, সে ম্যাচটা ৬ ওভার পরেই হয়ে যায় ৭ আস্কিং রান রেটের। সেটাও শিশিরে ভেজা বল আর দারুণ ব্যাটিং উইকেটে।

এনামুল ও তিনে নামা আফিফ হোসেনকে শুধু ঝুঁকিহীন ক্রিকেট খেলতে হতো। সে কাজটা দুজনই করেছেন দারুণভাবে। তাঁদের ৫৯ বলে ৭৫ রানের জুটি বরিশালকে ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলে। আফিফ ৩৬ বলে ৪১ রান করে আউট হলেও তা বড় কোনো প্রভাব ফেলেনি। ৩৫ বলে অর্ধশত করা এনামুল ইনিংস শেষ করেছেন ৩টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৩ রানে অপরাজিত থেকে। শাই হোপ অপরাজিত ছিলেন ১০ বলে ২৫ রান করে।

বরিশালের হয়ে ৬৮ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক

বরিশালের ব্যাটিং–ভাবনাটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম। তাদের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইব্রাহিম জাদরান। তামিমের টি-টোয়েন্টি স্ট্রাইক রেট ১১৯, ইব্রাহিমের ১১৮। দুজনের একজন ১৫-১৬ ওভার পর্যন্ত টিকে থাকবেন। বাকিরা খেলবেন হাত খুলে। আজ মিরপুরের উইকেট যখন শিশিরে ভিজে ব্যাটিং–স্বর্গ হয়ে ওঠে, তখনো দুই ওপেনার খেলেছেন তাঁদের চেনা ছন্দে।

ইব্রাহিম খুলনার ফাস্ট বোলার ওশান টমাসের বাউন্সারে আপার কাট করতে গিয়ে আউট হওয়ার আগে ১১ রান করেছেন ১৬ বলে। আরেক ওপেনার তামিমের ৪০ রান এসেছে ৩৩ বলে। তাঁর ইনিংসে ছিল ৫টি চার। ১২১ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটি তামিমকে নিয়ে গেছে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএলের তিন হাজার রানের ক্লাবে।

আর পাওয়ারপ্লে? ১ উইকেট হারিয়ে ৪৪ রান। সেখানে তিনে নামা সৌম্য সরকারের অবদানটাই বেশি। নিজের ভুলে রানআউট হওয়ার আগে তিনি ২২ রান যোগ করেন ১০ বলে। ২টি চার ও ১টি ছক্কা ছিল তাঁর ২২০ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে। সৌম্য যে গতিতে খেলছিলেন, কন্ডিশনের চাহিদা অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত সেটিই ছিল আদর্শ।

খুলনার দুর্ভাগ্য, ব্যাটিং অর্ডারের আর কেউ সে গতির ধারেকাছে যেতে পারেননি। মুশফিকুর রহিম লম্বা ইনিংস খেলেছেন। এবারের বিপিএলে তাঁর প্রথম অর্ধশত করেছেন ৩১ বলে, শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৩৯ বলে ৬৮ রানে। উইকেটের চারপাশে ‘স্ট্রোক প্লের’ দুর্দান্ত প্রদর্শনী ছিল ১৭৪ স্ট্রাইক রেটের সেই ইনিংসে। শেষের দিকে মাহমুদউল্লাহও ১৯ বলে ২৭ রান করেছেন ২টি চার ও ২টি ছক্কায়।

ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে এনামুল

ওভারপ্রতি প্রায় ৯ রান ওঠা ম্যাচেও উজ্জ্বল দুই দলের দুই স্পিনার। খুলনার অফ স্পিনার নাহিদুল ইসলাম ৪ ওভারে রান দিয়েছেন মাত্র ২৩ রান। বরিশালের শ্রীলঙ্কান বাঁহাতি স্পিনার দুনিথ ভেল্লালাগে ৪ ওভারে ১৭ রান দিয়ে আরও মিতব্যয়ী।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ফরচুন বরিশাল: ২০ ওভারে ১৮৭/৪ (তামিম ৪০, জাদরান ১১, সৌম্য ১৭, মুশফিক ৬৮*, মাহমুদউল্লাহ ২৭, মালিক ৫* ; নাহিদুল ০/২৩, টমাস ১/৩৮, ফাহিম ০/৩৯, আফিফ ০/৭, নাসুম ১/৪১ ও মুকিদুল ১/৩৪)।

খুলনা টাইগার্স: ১৮ ওভারে ১৮৮/২ ( এনামুল ৬৩*, লুইস ৫৩, আফিফ ৪১, হোপ ২৫*; ইমরান ২/৩৫, মিরাজ ০/৩১, খালেদ ০/৪২, মালিক ০/১৮, রাকিবুল ০/৩৭, ভেল্লালাগে ০/১৭, সৌম্য ০/৮)।

ফল: খুলনা টাইগার্স ৮ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচসেরা: এনামুল হক।