৪৯ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ। ভারতের অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান হার্দিক পান্ডিয়া ও নীতিশ রেড্ডির সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন বাংলাদেশের তাসকিন আহমেদ ও নাজমুল হোসেন। আজ গোয়ালিয়রে
৪৯ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ। ভারতের অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান হার্দিক পান্ডিয়া ও নীতিশ রেড্ডির সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন বাংলাদেশের তাসকিন আহমেদ ও নাজমুল হোসেন। আজ গোয়ালিয়রে

বাংলাদেশ–ভারত ১ম টি–টোয়েন্টি

শুরুর ব্যাটিংয়েই শেষের ওই করুণ পরাজয়

গোয়ালিয়র শহরের পশ্চিমে শংকরপুর এলাকায় পৌঁছেই চোখ জুড়িয়ে গেল। শ্রীমন্ত মাধবরাও সিন্ধিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামের তিন-চার কিলোমিটার দূর থেকে পিচঢালা রাস্তায় নীল সমুদ্র। ভারতের নীল জার্সি পরা কেউ বাইকে করে, কেউ হেঁটে এগোচ্ছিলেন স্টেডিয়ামের দিকে।

বাংলাদেশ-ভারত টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ দিয়ে উদ্বোধন হবে শহরের নতুন স্টেডিয়ামের। মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনটাকে সফল করতেই যেন পুরো শহর এসে শংকরপুরে হাজির।

তাঁদের হতাশ করেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত। আজ টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে ১ বল আগেই অলআউট করে সূর্যকুমারের দল। নাজমুল হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজের দুটি মাঝারি ইনিংস বাংলাদেশের রানটাকে কোনোরকমে ১২৭–এ নিয়ে যায়।

চেন্নাই থেকে শুরু হওয়া ভারত সফরে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ ব্যাটিং লাইনআপ আজ আরও একবার ভেঙে পড়ল ভারতের তরুণ বোলিং আক্রমণের সামনে। ছোট্ট রানটাকে চার-ছক্কার বৃষ্টি নামিয়ে তাড়া করে ভারত। অভিষেক, সূর্যকুমারের পর হার্দিক পান্ডিয়ার বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে মাত্র ১১.৫ ওভারেই ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় দলটি।

১৬ বলে ৩৯ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলার পথে হার্দিক পান্ডিয়ার ‘নো লুক’ শট

ভারতের ইনিংসের প্রথম কয়েক ওভারে মনে হচ্ছিল, ম্যাচটা বুঝি শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাবে! সঞ্জু স্যামসনের সঙ্গে গত আইপিএলে ২০৪ স্ট্রাইক রেটে খেলা অভিষেক শর্মা উদ্বোধনে নেমেছিলেন। কী হতে পারে, তা অনুমান করাই যাচ্ছিল। ৭ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৬ রান করে ফেলা অভিষেক পূর্বানুমানকে সত্য প্রমাণ করছিলেন। ভাগ্য ভালো, তাসকিন আহমেদের করা দ্বিতীয় ওভারে তাওহিদ হৃদয়ের সরাসরি থ্রোয়ে রানআউট হন অভিষেক। উইকেট পড়লেও ভারত যে গতিতে খেলেছে, তাতে মনে হয়েছে, খেলাটা ১০ ওভারেই শেষ করতে হবে।

মোস্তাফিজের বলে আউট হওয়ার আগে সূর্যকুমার এসেই ১৪ বলে ২৯ রান করে গেলেন, সঞ্জুর ২৯ রান আসে ১৯ বলে। মিরাজের বলে আউট হন তিনি। বাকি পথটা পাড়ি দেন দুই অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া ও নীতীশ রেড্ডি। পান্ডিয়ার ৩৯ রান আসে মাত্র ১৬ বলে, ৫টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল তাঁর ইনিংসে। নীতীশ ১৫ বলে ১৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। তরুণ এই ক্রিকেটার আরেকটু মেরে খেললেই ১০ ওভারে জিতে যেত ভারত।

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুর গল্পটা ছিল পুরোই উল্টো। গত জুন-জুলাইয়ের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমে নতুন উদ্বোধনী জুটি পেল বাংলাদেশ দল। তানজিদ হাসানের জায়গায় ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হওয়া পারভেজ হোসেনকে সুযোগ দেওয়া হয়, সঙ্গী অভিজ্ঞ লিটন দাস।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে খরুচে ছিলেন তাসকিন আহমেদ

কিন্তু ইনিংসের প্রথম ওভারে অর্শদীপ সিংয়ের বলে পয়েন্টে চার মেরে পরের বলেই আড়াআড়ি শট খেলতে গিয়ে ক্যাচআউট লিটন। ২ বলে ৪ রান করা লিটনের মতোই ছিল পারভেজের ইনিংস, ১ ছক্কায় ৯ বলে ৮ রান। বোল্ড হয়েছেন সেই অর্শদীপকে লেগের দিক দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে। ১৪ রানে ২ উইকেট নেই বাংলাদেশের। প্রেসবক্সে কেউ একজন বলে উঠলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাটিং শুরু হবে এখন। ২ উইকেট তো বোনাস!’

এমন মন্তব্যের কারণ, তাওহিদ হৃদয় তখনই ক্রিজে এসেছেন। অধিনায়ক নাজমুল হোসেনও শুরুর কয়েকটি বল ভালোই খেললেন। দুজন মিলে বরুণ চক্রবর্তীর করা পঞ্চম ওভারে নিলেন ১৫ রান, বাংলাদেশের রান তখন ২ উইকেটে ৩৯। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে যদি ১০ রানের মতো আসে, তাহলে প্রথম ৬ ওভারের লড়াইয়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকত বাংলাদেশ।

কিন্তু আন্তর্জাতিক অভিষেকে ভারতের নতুন গতি তারকা মায়াঙ্ক যাদব ১০ রান তো দূরের কথা, ষষ্ঠ ওভারে ১ রানও দিলেন না। অভিষেক ম্যাচের প্রথম ওভারেই মেইডেন, আর সে ওভারে স্ট্রাইকে ছিলেন হৃদয়। পরের ওভারে বরুণের বলে হৃদয় আবারও স্ট্রাইকে, আরও ১টি ডট বল। টানা ৭ ডট বলের চাপ সরাতে গিয়ে ছক্কা মারার চেষ্টায় বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচ তোলেন হৃদয়।

১৩তম ওভারে ক্রিজে ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও রিশাদ হোসেন। নাজমুল (২৭), মাহমুদউল্লাহ (১), জাকের আলী (৮) লম্বা ইনিংস খেলতে পারেননি। রিয়াদ ও জাকের মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন। নাজমুলকে বোকা বানিয়ে রিটার্ন ক্যাচের ফাঁদে ফেলেছেন ওয়াশিংটন সুন্দর। লোয়ার অর্ডার থেকে বাংলাদেশ পেয়েছে রিশাদের ১১ রান আর তাসকিন আহমেদের ১২ রান।

বাংলাদেশের ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ

শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন এক বছর পর টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা মিরাজ। ৩ বাউন্ডারিতে ৩২ বলে ৩৫ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। ভারতের হয়ে মাত্র ১৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন অর্শদীপ, বরুণ সবচেয়ে বেশি ৩১ রান দিলেও তাঁর শিকার ৩ উইকেট।