বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সংস্কারের রূপরেখা সাজানোর কথা জানিয়েছেন ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক নাজমূল আবেদীন। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এক নম্বর গেটের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা জানান।
নাজমূল আবেদীন বিসিবির হাইপারফরম্যান্স বিভাগ, ক্রিকেট একাডেমি, বয়সভিত্তিক দল এবং সর্বশেষ বিসিবির নারী বিভাগে কাজ করেছেন। সর্বশেষ বিসিবি নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। বিসিবি নির্বাচনে ক্যাটাগরি-৩–এ খালেদ মাহমুদ সুজনের বিপক্ষে লড়েছেন নাজমূল আবেদীন।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে নানা ভূমিকায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে আজ সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘এটা (রূপরেখা) নিয়েই তো আমরা বছরের পর বছর চিন্তাভাবনা করেছি, বিশেষ করে আমি। কোন জায়গায় কী করলে আরেকটু এগোনো যায়, কোন জায়গায় ঘাটতি আছে, আমাদের কী রিসোর্স আছে, যা দিয়ে আমরা ওভারকাম করতে পারি। সামনে হয়তো এটা নিয়ে আমি আলাপও করব। কোন জায়গায় আমরা পিছিয়ে আছি, অথচ সে জায়গায় আমাদের পিছিয়ে থাকার কোনো কারণ নেই।’
প্রস্তাব এলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গেও বসতে আপত্তি নেই নাজমূল আবেদীনের, ‘অবশ্যই। সেখানে যদি ইনপুট দেওয়ার সুযোগ থাকে, অবশ্যই অংশগ্রহণ করব। শুধু আমার কথা নয়, যাঁরা এসব বিষয়ে অবগত আছেন, তাঁদের কাছ থেকে আইডিয়া নেওয়া দরকার। তাহলে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়।’
নাজমুল পরে যোগ করেন, ‘আমি যদি ফরমালি কিছু করি, আমি নিশ্চয়ই আলাপ করব। আমি চাইব কম্প্রিহেনসিভ একটা রূপরেখা নিয়ে আসতে। যেন আমরা, যাঁরা দায়িত্বে আছেন তাঁদের সাহায্য করতে পারব। আমি আবারও বলি, এটা আমার ব্যাপার নয়। উপদেষ্টাদের কথা বললেন, তাঁরা চান সিস্টেমটাকে ঠিক করতে। যাঁরা সিস্টেম ভালোভাবে চালাতে পারবেন, সে–ই ক্রিকেট বোর্ডে আসার যোগ্যতা রাখেন।’
ক্রিকেট বোর্ডে দায়িত্ব নেওয়ার মতো দেশে ও দেশের বাইরে এমন অনেক যোগ্য লোক আছেন বলে জানিয়েছেন নাজমূল আবেদীন। তাঁর ভাষায়, ‘এটা আমার ব্যাপার নয়।সত্যিকার অর্থেই যারা ক্রিকেটে ভালো চায়, আর ক্রিকেট বাংলাদেশকে যেভাবে বিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করে, এখানে কিন্তু ফাঁকি দেওয়ার কোনো উপায় নেই। এখানে সঠিক ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে আছে, দেশের বাইরে অনেক লোক আছে, যারা যথেষ্ট অভিজ্ঞ। তাদের নিয়ে যদি কিছু চিন্তাভাবনা করা হয়, তাহলে তারা তাদের মতো করে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে। কারণ তারা নিশ্চয়ই ভাববে না যে ক্রিকেট বোর্ডে আসা মানেই একটা প্রিভিলেজ। তারা এটাকে দায়িত্ব হিসেবে নেবে। এখানে আমরা অনেক সেলিব্রেটিকে দেখতে পাই। কাজের মানুষদের দেখি না। তারা সবাই কাজের মানুষ।’
সরকার পতনের পর ক্রিকেট বোর্ডের অনেক পরিচালকেরই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সেই বোর্ড পরিচালকদের সমালোচনা করে নাজমূল আবেদীন বলেছেন, ‘তাঁরা যদি ক্রিকেটের সত্যিকার অর্থেই সেবক হতেন, তাহলে কিন্তু তাঁরা আসতেন। আমার মনে হয় না তাঁরা ক্রিকেটের সেবক ছিলেন। তাঁদের নিজস্ব এজেন্ডা ছিল। সে এজেন্ডাই তাঁরা বাস্তবায়ন করেছেন। আমরা দেখেছি, ক্রিকেটের কী হয়েছে। ক্লাব ক্রিকেট বলি, পুরো খেলাটাকেই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।’
ক্রিকেট বোর্ডের নেতৃত্বের সমস্যার কথাও তুলে ধরেছেন তিনি, ‘আমার মনে হয় দায়টা সবচেয়ে বেশি নেতৃত্বের। নেতৃত্ব যদি ঠিক থাকে তাহলে বাকি জিনিসগুলো এমনিতেই চ্যানেলাইজ হয়ে যায়। এখন আইসিসির আইনসংক্রান্ত অনেক বিষয় আছে। রিফর্মেশনের কথা যদি বলি…। আমরা তো চাই এমন একটা বোর্ড হোক, যেখানে ভালো একজন লিডার থাকবে, যার ভিশন থাকবে, যার মধ্যে বড় স্বপ্ন থাকবে। সে জন্য স্বচ্ছতা বা জবাবদিহি থাকা প্রয়োজন, সেগুলো থাকবে। সেরকম অনেক মানুষই আমাদের দেশে আছে। অনেক দিন ধরে যাঁরা কোনো কাজ করার সুযোগই পাননি।’