সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন

বিশ্বকাপ প্রস্তুতির সিরিজে জয়েই চোখ নাজমুলের

সারা দেশের মতো চট্টগ্রামও কয়েক সপ্তাহ ধরে পুড়ছিল খরতাপে। গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা ছিল সবার। আজ শুরু হতে যাওয়া পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রস্তুতিটা গত কয়েক দিন বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে দল নিয়েছে এই গরমের মধ্যেই। কিন্তু সিরিজের ঠিক আগের দিন দেখা মিলল স্বস্তির বৃষ্টির। গতকাল ভোরের পর সকালে আরেক দফা বৃষ্টি, বৃষ্টি হয়েছে দুপুরেও।

ম্যাচের আগের দিন বলে গতকাল বাংলাদেশ দলের অনুশীলন ছিল ঐচ্ছিক। যথারীতি ফাস্ট বোলারদের কেউ মাঠে আসেননি। ছিলেন না লিটন দাস, তাওহিদ হৃদয়, পারভেজ হোসেন, তানজিদ হাসানকেও। যাঁরা এসেছেন, বৃষ্টির কারণে অনুশীলনে দেরি হয়েছে তাঁদেরও। একই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে সিকান্দার রাজার জিম্বাবুয়ে দলেরও। অবশ্য ম্যাচের আগের দিন এমনিতেও অনুশীলন হয় হালকা। কোন ছকে এগোলে প্রতিপক্ষকে চমকে দেওয়া যাবে, প্রতিপক্ষ দুই দলের ভাবনায় বেশি থাকে সেসবই।

বাংলাদেশের অবশ্য শুধু এই সিরিজ নিয়ে ভাবলেই চলবে না। এক চোখ তাদের আগামী মাসের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। বড় আসরে যাওয়ার আগে সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দলের সমন্বয়টাও ঠিক করতে চাইবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে জিম্বাবুয়ের এই দলটার সামনে বিশ্বকাপের চাপ নেই। গত নভেম্বরে আফ্রিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে উগান্ডার কাছে হেরে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দৌড় থেকে ছিটকে পড়েছে তারা। এই সিরিজে জিম্বাবুয়ের তাই একটাই চাওয়া—জয়।

২০ ওভারের খেলায় এমন নির্ভার প্রতিপক্ষ কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তা বাংলাদেশ এর আগেও টের পেয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ব্রিসবেনে, ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সে ম্যাচে মাত্র ৩ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। একই বছর জিম্বাবুয়ে সফরে ২-১ এ বাংলাদেশকে হারায় সিকান্দার রাজার দল। তবে এই বাংলাদেশ দল অতীত স্মৃতিতে আটকে থাকতে চাইবে না। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এখন যে গতিতে এগোচ্ছে, নাজমুল হোসেনের দল সেটা ছোঁয়ার চেষ্টা করছে এক-দেড় বছর ধরেই। কিছুটা সফলও হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে খেলা এখন পর্যন্ত ১৪টি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ জিতেছে ৯টিতেই, হেরেছে ৪টি ম্যাচ, ১ ম্যাচে ফল হয়নি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজটাও প্রায় জিতেই গিয়েছিল বাংলাদেশ, শেষ পর্যন্ত তা শেষ হয় ২-১ এ।

টি-টোয়েন্টির সাম্প্রতিক সাফল্যের সুবাদে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বাংলাদেশ দলকে সম্ভাব্য ফেবারিট ধরেই বেশির ভাগ প্রশ্ন হলো। নাজমুল অবশ্য ‘ফেবারিট’ তকমাটা নিতে চাইলেন না। তবে সিরিজ জয়টাই যে তাঁর প্রাথমিক লক্ষ্য, সে কথা সরাসরিই বলছেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে এই সিরিজটা জিততে চাই, এটাই প্রথম লক্ষ্য।’

যদিও সামনে বিশ্বকাপ, তবু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ টি–টোয়েন্টির সিরিজটাকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ধরছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক। এ ক্ষেত্রে তাঁর যুক্তি, ‘প্রস্তুতি নিতে গিয়ে যে আমরা খেলাটাকে হালকাভাবে দেখব কিংবা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব, তা নয়।’ অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথাও বলেছেন, ‘আমরা সিরিজটাকে কীভাবে খেলছি, কীভাবে প্রস্তুত হচ্ছি, নিজেদের আত্মবিশ্বাস কীভাবে গড়ে তুলছি…এগুলোও দেখতে হবে। এতটুকু বলতে পারি, সিরিজটা এত সহজ হবে না। অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিরিজ হবে।’

জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক সিকান্দার রাজাও স্বাগতিক বাংলাদেশকে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিরিজই ‘উপহার’ দিতে চান। অতীত বলে, দুই দলের দ্বিপক্ষীয় সিরিজ সব সময়ই রোমাঞ্চকর হয়। জিম্বাবুয়ের অধিনায়কের চাওয়া, এবারও সে রকম কিছুই হোক, ‘আমি শুধু আশা করছি সিরিজটা যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়। সমর্থকেরা বিরক্তিকর সিরিজ উপভোগ করবে না। যদি ইতিহাস দেখেন, এ দুই দলের সিরিজ সব সময় উপভোগ্য হয়। এবারও তেমনই হবে ইনশা আল্লাহ।’

ব্যাট-বলের লড়াইটাকে প্রাণবন্ত করতে সাগরিকার উইকেটে কিছু ঘাস রাখা হয়েছে। তবে লড়াইটা শেষ পর্যন্ত হবে দুই দলের ব্যাটসম্যানদেরই। খুদে সংস্করণের মারদাঙ্গা রূপটাই দেখার আশা সবার। চার-ছক্কার ঝড়ে বইবে রানবন্যা—জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অতীত ইতিহাসও তা-ই বলে।