ম্যাচটা চেন্নাইয়ে বলেই আশা আছে

দল জয়ের ধারায় থাকলে হয়তো ঘন ঘন খেলার বাড়তি সুবিধা থাকে, কিন্তু হারের পর ভ্রমণক্লান্তি জেঁকে বসে আরও। আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার সুযোগও কমে যায়। নিউজিল্যান্ডের মতো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নামার আগে বাংলাদেশের এ চ্যালেঞ্জটা আছে।

চেন্নাইয়ের উইকেট আশা জোগাচ্ছে। কারণ, এটি বাংলাদেশের স্পিনারদের সহায়তা করতে পারে। তবে নিউজিল্যান্ড দারুণ ফর্মে আছে, আত্মবিশ্বাসও তুঙ্গে। অস্ট্রেলিয়া-ভারত ম্যাচের উইকেট দেখে যা বুঝেছি, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ের জন্য অনেকটাই ভালো ছিল। আশা করি, আজকের ম্যাচে উইকেটের মান আরেকটু ভালো থাকবে।

আগে বোলিং করলে স্পিনাররা সুবিধা পাবেন। টসে জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সুযোগ পেলে বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারে। টস জেতাটা মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়েও এগিয়ে দিতে পারে। আগে বোলিং করে নিউজিল্যান্ডকে ২৫০-২৭০ রানের মধ্যে অলআউট করে দিতে পারলে একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে। তবে নিউজিল্যান্ড ঠিক আগের ম্যাচেই দিনে ব্যাটিং করেছে। ব্যাটসম্যানরাও ফর্মে আছেন, ক্রিজে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছেন। কেইন উইলিয়ামসন হয়তো মার্ক চ্যাপম্যানের জায়গাতেই খেলবেন। তবে সেটি ৩ নম্বরেই কি না, তা দেখার বিষয়। এ ম্যাচে বাংলাদেশের স্পিন নিয়ে কথা হচ্ছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ড দলে মিচেল স্যান্টনারের মতো স্পিনার আছেন, যিনি ম্যাচের যেকোনো পরিস্থিতিতেই বোলিং করায় পারদর্শী।

চেন্নাইয়ে নিউজিল্যান্ড ম্যাচের আগে অনুশীলনে মুশফিকুর রহিম

বাংলাদেশ দল নিয়ে খুব বেশি ভাবার সুযোগ নেই। লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম আগের ম্যাচে রান পেলেও অন্য বড় দলগুলোর পারফরম্যান্সের তুলনায় বাংলাদেশের ব্যাটিং এখনো পিছিয়ে, যে স্ট্রাইক রেটে যেভাবে তারা ব্যাটিং করছে। সেটি মাথায় রেখেই বাড়তি কোনো পরিবর্তনের দিকে যাওয়া উচিত হবে না। যাঁরা তরুণ, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে তাঁদেরই সুযোগ পাওয়া উচিত। তানজিদ হাসানেরও আরেকটি সুযোগ পাওয়া উচিত। তবে ওপেনারদের মনে রাখতে হবে, নতুন বলে বিশেষ করে দুই প্রান্ত থেকে প্রথম তিনটি করে ওভার টিকে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ।

নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপে বাঁহাতিদের উপস্থিতি বেশি। চেন্নাইয়ের উইকেটের কথা মাথায় রেখে দুজন অফ স্পিনারসহ সাকিব আল হাসান, এ তিন স্পিনারের বোলিং আক্রমণই ঠিক আছে। আমার মতে, যেহেতু দলে কোনো পেস বোলিং অলরাউন্ডার নেই, তিন পেসার নিয়ে খেলাই ভালো। পুরো ফিট না থাকলে তাসকিন আহমেদকে বিরতি দিয়ে হাসান মাহমুদের মতো কাউকে আনার কথা ভাবা যায়।

বাংলাদেশ বিশ্বকাপে গেছে সেমিফাইনাল খেলার প্রত্যাশা ও স্বপ্ন নিয়ে। তবে প্রস্তুতি ও মূল টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ দুটির পর অন্য দলগুলোর পাশে বাংলাদেশের সামগ্রিক পারফরম্যান্স রাখলে সে স্বপ্নটা ঠিক টিকতে চাইছে না। ক্রিকেটে অনেক কিছুই হতে পারে, তবে যা করার পারফরম্যান্স দিয়েই করতে হবে। সবাইকে বাস্তববাদী হতে হবে। কারিশমা বা ঝলকের কথা না ভেবে প্রতিপক্ষ ও কন্ডিশন বিবেচনা করেই একাদশ সাজানো উচিত। পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাছাকাছি যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। জয়ের প্রত্যাশা করা ভালো, কিন্তু অতি উচ্চাভিলাষী হওয়ার সুযোগ দেখি না। নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে থামাতে নিজেদের পারফরম্যান্সের মান বাড়ানোই একমাত্র উপায়। পজিশন বদলে দিলেই কেউ এককভাবে ম্যাচ বের করে আনবে, এমন হওয়ার সুযোগ নেই।

  • গাজী আশরাফ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক