পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান তখনো শুরু হয়নি। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে জড়িয়ে ধরে কী যেন বলছিলেন হারিস রউফ। পুরো সিরিজে মাঠের সম্পর্কটা দুজনের ভালো যায়নি। একতরফা ছিল আর কী!
ম্যাক্সওয়েলের বিপক্ষে ৯টি বল করেছেন রউফ, তাতে ম্যাক্সওয়েল আউট হয়েছেন ৩ বার। এমন কিছুর পর ম্যাক্সওয়েল আর রউফকে ‘ওয়েলডান’ ছাড়া আর কীই বা বলতে পারেন!
সেই যাই হোক, সিরিজসেরা ও ম্যাচসেরা রউফের ম্যাক্সওয়েল সম্পর্কে ভাবনা কী, সেটা পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে জানতে চাওয়া হয়েছিল। রউফ সরাসরিই বলে দিয়েছেন, তাঁর ভাগ্য ভালো।
সে কারণেই এক সিরিজে তিনবার বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানকে আউট করতে পেরেছেন। ম্যাক্সওয়েলের বেলাতে অবশ্য উচ্চবাচ্য না করাই ভালো। অন্তত এই নভেম্বর মাসে। গত নভেম্বরে বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিনি যা করেছিলেন, তারপর অন্তত প্রতি নভেম্বর মাসে তাকে নিয়ে কথা না বলাই ভালো! সেই যাই হোক...
ম্যাক্সওয়েলের বেলাতে না হয় রউফের ভাগ্য ভালো, পুরো সিরিজে উইকেট তো পেয়েছেন আরও ৭টি। সেগুলো কীভাবে পেলেন? প্রথম ম্যাচে ম্যাক্সওয়েলের পাশাপাশি আউট করেছিলেন স্টিভ স্মিথ ও মারনাস লাবুশেনকে। দ্বিতীয় ম্যাচে লাবুশেন, হার্ডি, ইংলিস, কামিন্সকেও ফিরিয়েছেন। আর আজ শর্টকে আউট করেছেন, ম্যাক্সওয়েল তো আছেনই। ম্যাক্সওয়েলকে না হয় ভাগ্য গুনে আউট করেছেন, বাকিদের? গতি বাউন্স আর লাইন লেংথে।
রউফ সম্পর্কে কথা বলতে গেলে অবশ্য গতি আর বাউন্স এমনিতেই চলে আসে। লাইন আর লেংথ শব্দ দুটো আসত পারে। এই অস্ট্রেলিয়া সিরিজে গতি বাউন্সের সঙ্গে এই শব্দ দুটোরও সুসম্পর্ক তৈরি করেছেন। আর তাঁর ফল তো হাতেনাতে। সিরিজসেরা। পাকিস্তান যে দুটি ম্যাচ জিতেছে দুটোতেই ম্যাচসেরা।
অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ানকেও কৃতিত্ব দিতে পারেন রউফ। ২০২৩ বিশ্বকাপে হারিস রউফ পাওয়ার প্লেতে নিয়মিত বোলিং করেছেন। ওভারপ্রতি দিয়েছেন ৯.৪২ করে। নানা সমালোচনার পরও বাবর আজম তাকে পাওয়ার প্লেতে বোলিং করিয়ে গেছেন। রিজওয়ান সেটা করাননি, পুরো সিরিজে পাওয়ার প্লেতে রউফকে ১ ওভারও বোলিং করাননি। যে সিদ্ধান্ত কাজেও দিয়েছে।
পাওয়ার প্লেতে এমন বিবর্ণ থাকার পরও ২০২৩ বিশ্বকাপটা যে খুব বেশি খারাপ করেছেন তা নয়। নিয়েছিলেন ৯ ম্যাচে ১৬ উইকেট। ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৬.৭৪। পাওয়ার প্লের ওই বাজে বোলিংয়ের ছাপ পড়েছিল ইকোনমি রেটে।
দল হিসেবে পাকিস্তান ভালো করতে পারেনি। বাদ পড়েছে প্রথম রাউন্ড থেকে। নানা কারণেই পাকিস্তানের ওই দলটি বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছিল। এরপর থেকে রউফের অবস্থাও হয়েছিল পাকিস্তান দলটির মতো। নানা কারণে পড়েছেন সমালোচনায়, জড়িয়েছেন বিতর্কে—কখনো মাঠের ঘটনায়, কখনো মাঠের বাইরের।
সেই বিশ্বকাপের পর অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট খেলতে না চাওয়ায় রউফের কেন্দ্রীয় চুক্তি বাতিল করেছিল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। এরপর চাপের মুখে চলতি বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে চান রউফ। পাকিস্তান বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে প্রথম রাউন্ড থেকেই। হেরেছে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দলের কাছেও। সেই ম্যাচে হারার পর আবার রউফের বিপক্ষে ওঠে বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ। রউফ নিজে বিশ্বকাপে তাই কেমন করেছেন, সেটা নিয়ে আলোচনাই হয়নি! যা হয়েছে সেটাকে সমালোচনাই শুধু বলা যায়।
বিশ্বকাপের পরই রউফ এক অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে আলোচনায় আসেন। সে ঘটনা হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ওই ব্যক্তির কোনো কথা শুনে মেজাজ হারান রউফ। সে সময় পাকিস্তান পেসারের সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রীও।
রউফকে ওই ব্যক্তির ওপর চড়াও হওয়া থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। ওই ব্যক্তির সঙ্গে থাকা বাকিরাও রউফকে এসে থামান। দুজনের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও বেশ উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হতেও দেখা যায় ওই ভিডিওতে।
রউফের জীবনে অস্থিরতার সঙ্গে পাকিস্তান ক্রিকেটেও চলেছে টালমাটাল অবস্থা। কোচ, অধিনায়ক এসেছেন, গেছেন। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ে পাকিস্তান ক্রিকেটে বড় একটি স্বস্তির নিশ্বাস পড়েছে। আর সেখানে সবচেয়ে বড় অবদান এই পেসারেরই। যার খারাপ সময়ের শুরুটা হয়েছিল এমন একটি অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে থেকে, আর শেষ এই অস্ট্রেলিয়া সিরিজে!
বোধ হয় ভুল বলা হলো, ক্রিকেটারদের খারাপ সময় তো আসে আর যায়!