মে থেকে সেপ্টেম্বর—টানা পাঁচ মাস কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচই খেলেননি মায়াঙ্ক যাদব। লম্বা সময় খেলার বাইরে থাকা এই পেসারকেই গতকাল গোয়ালিয়রে বাংলাদেশের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি ক্যাপ দিয়েছে ভারত। মায়াঙ্ক অভিষেকে আলোড়ন তুলেছেন, তা নয়। ১ উইকেট নিয়েছেন ২১ রানে। তবে ২১ বছর বয়সী এই পেসারকে নিয়ে ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বাসই প্রকাশ করেছেন অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব।
মায়াঙ্কের ভারত দলে সুযোগ পাওয়াটা গতির সূত্রে। এ বছরের এপ্রিলে লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের হয়ে চার ম্যাচ খেলেছেন মায়াঙ্ক। ওই চার ম্যাচেই গতির ঝড় তুলে চমকে দিয়েছিলেন সবাইকে, নিয়মিত বল করেন ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটারের আশপাশে। রোববার বাংলাদেশের বিপক্ষেও মায়াঙ্কের একটি ডেলিভারির গতি উঠেছে ঘণ্টায় ১৪৯.৯ কিমি।
ভারতের ক্রিকেটে গতিই যদি হয় আলোচনার বিষয়, তবে আগে আসার কথা উমরান মালিকের নাম।
খুব বেশি দিন আগে নয়, ২০২২ আইপিএলেই গতির ঝড়ে চারপাশে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন উমরান। পাকিস্তানের শোয়েব আখতার যাঁকে দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ক্রিকেটের সবচেয়ে বেশি গতির বলটি উমরানই করবে। মুগ্ধতার কথা জানিয়েছিলেন গতির জন্য খ্যাত ব্রেট লি, ডেল স্টেইনরাও। কিন্তু গত দুই বছরে উমরান তাঁর সম্ভাবনা কাজে লাগানো দূরে থাক, আলোচনারই বাইরে চলে গেছেন। ভারতের ক্রিকেট যখন মায়াঙ্কে মুগ্ধ, উমরান তখন কোথাও নেই। আইপিএলে গতির রেকর্ড গড়া সেই উমরান এখন আসলে কোথায়?
উমরানের উঠে আসা জম্মু–কাশ্মীর থেকে, যেখানে ক্রিকেটের চর্চা ভারতের বেশির ভাগ রাজ্যের চেয়ে কম। ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত ক্রিকেট বল দিয়ে খেলেনওনি উমরান। ঘটনাচক্রেই ভারতের ক্রিকেটে প্রবেশ ঘটেছিল তাঁর। ভারত অনূর্ধ্ব–১৯ দলের নির্বাচকেরা বৈষ্ণদেবী মন্দিরে ঘুরতে গেলে কাছের এক নেটের সিমেন্ট পিচে বল করতে দেখেছিলেন উমরানকে। সেখান থেকে তাঁর জায়গা হয় সানরাইজার্স হায়দরাবাদের নেটে, একপর্যায়ে মূল দলেও।
২০২২ আইপিএল ছিল উমরানের ক্যারিয়ারের উত্থান, একই সঙ্গে উজ্জ্বলতম পর্ব। ১৪ ম্যাচ খেলে প্রতিটিতেই প্রায় নিয়মিত ১৫০ কিলোমিটারের বেশি গতি তুলেছেন। টানা আট ম্যাচে দ্রুততম ডেলিভারির পুরস্কার উঠেছিল তাঁর হাতে। গতিতে ব্যাটসম্যানদের এলোমেলো করে দিয়ে উইকেটও নিয়েছিলেন ২২টি।
এমন আলোড়ন তোলা আইপিএলের পর সে বছরই ভারতের হয়ে টি–টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে অভিষেক হয় উমরানের। তবে পথচলাটা বেশি দূর এগোয়নি। এখন পর্যন্ত খেলা ৮ টি–টোয়েন্টির সর্বশেষটি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ১০ ওয়ানডের সর্বশেষটি একই বছরের জুলাইয়ে। এরপর এক বছরে ভারত জাতীয় দলের হয়ে যেমন খেলতে পারেননি, খেলেননি ভারতের ঘরোয়া লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেও।
আগের তিনবারের ধারবাহিকতায় এবারও আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদে ছিলেন। তবে ম্যাচ খেলেছেন মাত্র একটি, তা–ও প্রথম ওভারে ১৫ রান দেওয়ার পর আর বলই হাতে পাননি। আর ২৭ মার্চ মুম্বাই–হায়দরাবাদ ম্যাচের পর গত ছয় মাসে তো কোনো প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটই খেলেননি।
২২ বছর বয়সে হইচই ফেলে দেওয়া উমরান দুই বছরের মধ্যে এভাবে ছিটকে গেলেন কীভাবে? মোটের ওপর দুটি কারণ। প্রথমত, বোলিংয়ের ধার কমে যাওয়া। ভারতের হয়ে যে কটা ম্যাচ খেলেছেন, তাতে উমরানের বোলিংয়ে নিয়ন্ত্রণ ছিল কম। রান দিয়েছেন বেশি।
যে ৮টি টি–টোয়েন্টি খেলেছেন তাতে উইকেট পেয়েছেন ১১টি, রান দিয়েছেন ১০.৪৮ গড়ে। ভারতের হয়ে অন্তত ১০ উইকেট নেওয়া বোলারদের মধ্যে এটি সবচেয়ে বাজে ইকোনমি। যদিও স্ট্রাইক রেট ছিল ভালোই, প্রতি ২২.০৯ বলে উইকেট। ওয়ানডেতেও উমরানের স্ট্রাইক রেট ভালোই (২৮.১), তবে এখানেও সমস্যা ইকোনমি। ১০ ওয়ানডেতে ১৩ উইকেট নেওয়ার পথে রান দিয়েছেন ৬.৫৪ গড়ে।
মূলত বাজে ইকোনমিই উমরানের কার্যকারিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। ভারতের নির্বাচকেরা উইকেট নেওয়া বোলার বনাম খরুচে বোলার বিচার করতে গিয়ে উমরানের দিকে না তাকানোই শ্রেয় মনে করেছেন। ভারতের বোলিং কোচ পরেশ মামব্রে যেমন স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন, ‘ওর যে গতি, সেটা বিরল। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের অভাব আছে।’
তবে বর্তমানে উমরানের কোথাও না থাকার পেছনে নিজের ওটাই একমাত্র কারণ নয়, আছে দুর্ভাগ্যও। চলতি বছর বিসিসিআই যেসব ফাস্ট বোলারকে শুরুতেই চুক্তির আওতায় এনেছে, তাঁদের মধ্যে উমরান একজন। কিন্তু গত মাসে হওয়া দুলীপ ট্রফির আগে প্রথমে পায়ের পাতা, এরপর হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়েন তিনি। পরে ভোগায় ডেঙ্গু। শেষ পর্যন্ত দুলীপ ট্রফিতে তাঁর খেলাই হয়নি।
সুস্থ হয়ে ওঠার পর যখন বল হাতে নেন, দেখা দেয় নিতম্বের সমস্যা। পরে পরীক্ষায় ধরা পড়ে নিতম্বের হাড়ে চিড় ধরেছে তাঁর। রোববারই ভারতের সংবাদমাধ্যম খবর দেয়, চোটের কারণে অন্তত চার থেকে ছয় সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হবে উমরানকে। যার অর্থ, ১১ অক্টোবর শুরু হওয়া রঞ্জি ট্রফির প্রথম কয়েকটি ম্যাচে খেলা হবে না তাঁর। যেদিন উমরানের আবারও ছিটকে যাওয়ার খবর বেরিয়েছে, সেদিনই গতির কারণে ভারতের টি–টোয়েন্টি দলের হয়ে অভিষেক হয়েছে মায়াঙ্কের।