শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম এলে যে কেউই ধাক্কা খেতে বাধ্য। ছোট্ট ৬০-৬৫ মিটারের বাউন্ডারির মাঠটা দেখলে যে কারও মুখ থেকেই অস্ফুটে বেরিয়ে আসবে, ‘এত ছোট মাঠ!’ নব্বই দশকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই শারজা স্টেডিয়ামের ক্রিকেট ম্যাচ টিভিতে দেখে দেখে অনেকেই বড় হয়েছেন। কিন্তু সেকেলে টিভির ক্যামেরায় মাঠের আকৃতিটা খুব একটা চোখে পড়ত না। সরাসরি দেখলে তাই অবিশ্বাসের একটা ধাক্কা লাগে।
এই মাঠের প্রেসবক্সটাও অদ্ভুত। ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য লং অফ বাউন্ডারিটা পার হলেই সাংবাদিকদের বসার ব্যবস্থা। সামনে কোনো কাচের দেয়াল নেই। সেখানে বসে খুব একটা নিরাপদ বোধ করার কথা না কারোরই। মোটামুটি টাইমিং হলেই ক্রিকেট বলটা লং অফ বাউন্ডারি ছাড়া করে বল আসতে পারে প্রেসবক্সের দিকে।
প্রেসবক্স যেহেতু বাউন্ডারির সঙ্গে একদম লাগোয়া, চাইলেই ক্রিকেটার, সাবেক ক্রিকেটার, বিশ্লেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। আর দর্শকদের চিৎকার চেঁচামেচি তো আছেই। সবই যেন হাতের কাছে, কানের কাছেও।
ছোট্ট বাউন্ডারির এই মাঠে ক্রিকেট বল হরহামেশা বাইরে উড়ে যায়। উইকেটের দুই প্রান্ত থেকেই মিড উইকেট বাউন্ডারি ছোট। গ্যালারিও উঁচু নয়। আর শারজার উইকেট তো ব্যাটিং স্বর্গ হিসেবে পরিচিত। এসবের সংমিশ্রণে সাদা কুকাবুরা বল নাকি নিয়মিতই শারজার মাঠ ছেড়ে যায় উড়ে যায় পাশের রাস্তায়, দোকানপাটে। বলের আঘাতে নাকি কাচের দোকানপাটের কাচের গ্লাস নিয়মিতই ভাঙে।
শারজা স্টেডিয়ামের পাশেই ইরানী ব্যবসায়ী আশরাফ মিরের দোকান জাহিদ কারওয়াশ। ২০ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছেন। মাঠ থেকে উড়ে আসা কিছু বল নাকি তাঁর দোকানেও এসেছে। এই মাঠে খেলা হলে এটাই নাকি প্রতিদিনের চিত্র।
দুবাইয়ের দেরাতে মোবাইলের দোকানের মালিক জিয়া উদ্দিন কয়েকটি দোকানের দিকে আঙুল তুলে বলছিলেন্ ‘এই দোকানগুলোর গ্লাস কদিন আগেও ভাঙা ছিল। গত আইপিএলের সময় অনেক বল এখানে উড়ে এসেছে।
আজ প্রবাসী এক বাংলাদেশিও একই গল্প শোনালেন। দুবাইয়ের দেরাতে মোবাইলের দোকানের মালিক জিয়া উদ্দিন কয়েকটি দোকানের দিকে আঙুল তুলে বলছিলেন্ ‘এই দোকানগুলোর গ্লাস কদিন আগেও ভাঙা ছিল। গত আইপিএলের সময় অনেক বল এখানে উড়ে এসেছে।’
২০২০ সালের আইপিএলে এই মাঠেই মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ৯২ মিটার দীর্ঘ ছক্কাটি গিয়ে পড়েছিল মাঠের পাশের রাস্তায়। সেখানে সন্ধ্যার জ্যামে আটকে থাকা এক ক্রিকেট ভক্ত নাকি সে বল কুড়িয়ে নিয়ে যান। এরপর থেকে নাকি শারজায় আইপিএলের ম্যাচের সময় রাস্তায় বলের আশায় অনেকেই দাঁড়িয়ে থাকেন। কেউ ছক্কা উড়াবেন, সেই বল বাইরে এলেই তা নিয়েই ভোঁ দৌড়।
ছোট বাউন্ডারির এই মাঠেই বাংলাদেশ মুখোমুখি হচ্ছে আফগানিস্তানের। আফগানটা বড় মাঠেও ছক্কা মারতে ওস্তাদ। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেখানে একটু পিছিয়েই বলে ধরে নেওয়া হয়। শারজার ছোট মাঠ কি তাহলে বাংলাদেশের পক্ষেই যাচ্ছে?